জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোল রক্ষক সোনালীর পরিবারের পাশে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন

- আপডেট সময় : ০৪:৫২:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫ ১৫৯৩ বার পড়া হয়েছে
জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোল রক্ষক সোনালীর পরিবারের পাশে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন
পঞ্চগড়ের অজপাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ভ্যান চালক ফারুক ইসলাম। মেয়ে ফেরদৌসী আক্তার সোনালী জাতীয় নারী ফুটবল দলে জায়গা করে নিয়েছে গোল রক্ষক হিসেবে। অভাবের সংসারে পিতৃ মাতৃৃ ছাঁয়ায় বেড়ে ওঠা সোনালী।
অল্প কদিন আগে দরিদ্র বাবা ভ্যান চালায় আর তার মেয়ে বিমানে চড়ে দেশ -বিদেশে খেলতে যায়।’ এমন খবর চাউর হয় গনমাধ্যমে। এরপর সোমবার পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী পরিদর্শনে যান দরিদ্র ভ্যান চালক ফারুক ইসলামের বাড়িতে।তার বাড়ি সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রামে।
জেলা প্রশাসক তার পুরনো কুঁড়ের ঘরের স্থলে নির্মাণ করে দিবেন পাকা ঘর। আর ভ্যানের পরির্বতে তাকে দেওয়া হবে একটি নতুন ইজিবাইক। এই প্রতিশ্রতি দেন তিনি। এদিকে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদ তার বাড়িতেই ছোটো পরিসরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনও করে। এরপর বিকেলে জেলা প্রশাসক সাবেত আলী সেখানে যান। তাদের ছোঠো খুড়ে ঘর ও বাড়িটি পরির্দশন করেন।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকির হোসেন, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা আবুল হাসেম, উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ, হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নুর-ই-আলম, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিয়াউর রহমান জিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বুলবুল, টুকু ফুটবল একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান, ইউপি সদস্য গোবিন্দ চন্দ্র রায়, শফিউল আলম শফিক প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক ফেরদৌসী আক্তার সোনালী ও তার বাবার হাতে তুলে দেন উপহার সামগ্রী। এছাড়াও গোল রক্ষক সোনালীর অনুশীলন প্রতিষ্ঠান টুকু ফুটবল একাডেমিকে এক লাখ টাকা অনুদান এবং সোনালীর বিদ্যাপীঠ হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি দেয়াল ও সাইকেল গ্যারেজের বরাদ্দ ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক। পরে তাদের বাড়িতে স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেন।
এসময় আনন্দে উদ্বেলিত ফারুক ইসলাম বলেন, আমার মেয়ের সাফল্যে আজ আমার মত ভ্যানচালকের বাড়িতে ডিসি স্যার, ইউএনও এসেছে তাই আজ আমি গর্বিত। মেয়ে আমার এলাকার সুনাম এনেছে সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
সোনালী বলেন, বাবার কষ্টের সংসারে অনেক পরিশ্রম করে আমি আজ স্বপ্নকে ছুঁতে পেরেছি।’ এতে আমি ভীষন আনন্দিত।
যারা একসময় কটুকথা বলতো তারাও আজকে উৎসাহ দিচ্ছে। জেলা প্রশাসক আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে এটা আমার বড় পাওয়া। আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই।
হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি) চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, ভ্যানচালক বাবার মেয়ে সোনালী ফুটবলে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে- এটা আমাদের সবার জন্য গর্বের বিষয়। তার সফলতার কারণে ডিসি সাহেব এখানে এসেছে ‘এটাও আমাদের জন্য বড় পাওয়া।
জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক ইয়ারজানের বাড়িও আমাদের হাড়িভাসা ইউনিয়নে। আমাদের ইউনিয়নের মেয়েরা জাতীয় পর্যায়ে এলাকাকে তুলে ধরছে এটাও আমাদের বড় গর্ব। তাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা সোনালী তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখছে। দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চেষ্টা করছে। আমরা আনন্দিত। আমরা দেখেছি সোনালী দরিদ্রতা জয় করে এ পর্যন্ত এসেছে, তার বাবা ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করেন। তাদের বাড়িটিও জরাজীর্ণ। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি-তাদের টিনের জরাজীর্ণ ঘরটিকে সরিয়ে দিয়ে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেব। আমরা আসার সময় দেখেছি মূল রাস্তা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ধরে তাদের বাড়ি। এই রাস্তাটিও পাকা করে দিবো।’চমৎকার বিষয় হচ্ছে জাতীয় নারী ফুটবল দলের আরেক গোলরক্ষক ইয়ারজানের বাড়িও এই এলাকায়।
দুজনেরই ফুটবলের সূচনা হয় হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং টুকু ফুটবল একাডেমিতে। এজন্য আমরা হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সহায়তা এবং টুকু ফুটবল একাডেমিকেও বিশেষ বরাদ্দের ঘোষণা দিচ্ছি। তাদের মাধ্যমে আগামিতে আরো প্রতিভাবানরা উঠে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।’