৯৫ বছর বয়সেও মজিদ মুন্সির ঘাঁরে বাদামের ভার

- আপডেট সময় : ০৭:১৫:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
৯৫ বছর বয়সেও মজিদ মুন্সির ঘাঁরে বাদামের ভার
বয়স প্রায় ১শ বছরের ঘরে ছুই ছুই অবস্থা কিন্তু তিনি বলছেন সন্তানরা দেখলে কি আর এই বয়সে আমাকে ঘারে করে বাদাম বিক্রির কাজ করতে হতো? সন্তানরা দেখেনা তাই আমি নিজেই ভিক্ষাবৃত্তি না করে মানুষের কাছে হাত না পেতে এই কর্ম করি। কারণ ভিক্ষা করা সমাজের সবচেয়ে ঘৃণার কাজ, তাই বাদামের ব্যবসা করি। এই বাদাম বিক্রির টাকা দিয়েই অতি কষ্টের মাঝেও অসুস্থ স্ত্রী কে নিয়ে দুই জনের সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। যত দিন বেঁচে আছি কি করবো আর কিছুই তো করতে পারি না এখন বয়সের ভারে। আপনার ছেলে সন্তানরা আপনাকে দেখাশোনা করে কিনা, এই কথা জিজ্ঞেস করতেই কোন ধরনের সংকোচবোধ বা জরতা না করেই উপরের কথা গুলো বলে সোজাসোজি উত্তর দিচ্ছিলেন বৃদ্ধ বাদাম ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ মুন্সি(৯৫)।
এই ৯৫ বছর বয়সি আব্দুল মজিদ মুন্সির বাড়ি রাণীশংকৈল পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের মধ্য ভান্ডারা রংপুরিয়া মার্কেট এলাকার বাসিন্দা তিনি। তার সংসার জীবনে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে আছে। তবে মেয়েকে অন্যত্রে বিয়ে দিয়েছেন। আব্দুল মজিদ বয়সের ভারে তেমন একটা চোখে দেখেন না, চশমার সাহায্য নিয়েই চলতে হয় তাকে। তবুও জীবিকার সন্ধানে এই মাঘের হাঁড় কাপা কনকনে শীতে সকাল হলেই বেরিয়ে পড়েন বাদাম বিক্রির উদ্দেশ্যে।
মজিদ মুন্সির বাদাম বিক্রি দেখে চ্যানেল এ নিউজ এর প্রতিনিধির সাথে কথা হয় জেলার রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক অনুষ্ঠানে। আব্দুল মজিদ মুন্সি বলেন, আমি দীর্ঘ ১০ বছর থেকে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাদাম বিক্রি করেই সংসার চালানোর পাশাপাশি অসুস্থ স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে হয় আমাকে। আমি নিজেও অসুস্থ শরীর নিয়েই প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করি।মজিদ মুন্সির দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে ভ্যান চালান আরেক ছেলে কুলির কাজ করে তাদের সংসার পরিচালনা করেন।
বয়স্ক ভাতা সম্পর্কে মজিদ মুন্সি কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তিন মাস পর পর বয়স্ক ভাতার টাকা পায়। তবে সেই টাকা দিয়ে কি আর সংসার চলে।শুধু তো সংসার না নিজের ও অসুস্থ স্ত্রীর জন্য আমার প্রতিদিন ওষুধ লাগে। তাই সব মিলিয়ে আমাকে এই শেষ বয়সে এসেও জীবিকার তাগিদে বাদামের ভার ঘাঁরে তুলে নিতে হয়েছে। প্রতিদিন বাড়ি থেকে বের হতে হয় বাদামের ব্যবসার জন্য। সারাদিনে বাদাম বিক্রি করে কত টাকা পাওয়া যায় এবিষয়ে জানতে চাইলে, মজিদ মুন্সি বলেন, আল্লাহ আমার রিজিকে প্রতিদিন যেটা রেখেছে তাই হয়।তবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা প্রতিদিন আমার লাভ হয়। তিনি আরো জানায়, আমি বাদাম বিক্রির আগে সুটকির ব্যবসা করে সংসার পরিচালনা করে আসছিলাম। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পুজি না থাকায় আমি আর সেই ব্যবসা করতে পারিনি। তাই শেষ বয়সে এসে বাদামের বোঝা ঘাঁরে তুলে নিতে হয়েছে আমাকে।
তবে স্থানীয়রা অনেকেই বলছেন, এই বয়সে মজিদ মুন্সি যেভাবে বাদামের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ব্যবসা করছেন এটা আসলেই তার জন্য খুব দুঃখ জনক বিষয়। তবে সরকারি ভাবে বা এলাকার কোন বৃত্তবান মানুষ যদি তাকে একটি স্থায়ী ভাবে দোকান করে দিতো তাহলে তাকে আর এই বয়সে হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হতো না।
আব্দুল মান্নান ও রেজওয়ান আহম্মেদ দুলাল বলেন, এই বৃদ্ধ ব্যক্তিটি যেভাবে এই বয়সে এসে ভিক্ষাবৃত্তি না করে নিজে ব্যবসা করছেন এজন্য তিনি সমাজের মানুষের কাছে অন্যন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকবেন।তবে তাকে সব সময় দেখি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাদাম বিক্রি করতে।তাকে দেখলেও অনেক মায়া হয়।তাই বাদাম খাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও তার কাছে বাদাম কেনে অনেকে মানুষ।তবে তার জন্য সরকারি ভাবেই হোক বা এলাকার বিত্তবানদের সহযোগিতায় হোক স্থায়ী ভাবে কিছু করা প্রয়োজন।
মজিদ মুন্সির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আব্দুর রহিম বলেন, তার সাথে কথা বলে এবং সে আমাদের সমাজসেবার নিয়মের যে ক্যাটাগরিতে পড়বে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
রাণীশংকৈল পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান বলেন, ওই বৃদ্ধ ব্যক্তির পরিবারের সাথে কথা বলে তাকে কিভাবে সহযোগিতা করলে তার জন্য ভালো হয় সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো।