ঢাকা ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২২ বছর পর জাতীয় পদক কেড়ে নিতে মৎস্যজীবীনেতার অপচেষ্টা

আল আমিন স্বাধীন, মান্দা (নওগাঁ ) প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : ০২:৫১:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৬৪ বার পড়া হয়েছে

collected

চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২২ বছর পর জাতীয় পদক কেড়ে নিতে মৎস্যজীবীনেতার অপচেষ্টা

নওগাঁর মান্দায় দীর্ঘ ২২ বছর পর এক মুক্তিযোদ্ধার জাতীয় সমবায়ী পদক কেড়ে নিতে অপতৎপরতার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মৎস্যজীবীদলের সভাপতি নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার কৌশলে মান্দা থানায় ডেকে নিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে সমবায়ী পদকটি উপজেলা সমবায় অফিসে জমা দেওয়ার জন্য একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে নেওয়া হয় ওই মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে। মৎস্যজীবীনেতার ভয়ভীতি ও হুমকির কারণে ওই মুক্তিযোদ্ধা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। বর্তমানে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গত দুদিন ধরে অবস্থান করছেন রাজশাহী শহরে। ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার নাম মোসলেম উদ্দিন। তিনি মান্দা উপজেলার ভেড়িদুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা। সমবায়ের মাধ্যমে স্বনির্ভর দেশ গড়ার প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে শ্রেষ্ঠ সমবায়ী হিসেবে জাতীয় পদক (স্বর্ণপদক) ও সনদপত্র পান তিনি।

অন্যদিকে অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম ভারশোঁ ইউনিয়নের খাগড়া গ্রামের রজব আলী প্রামাণিকের ছেলে। সম্প্রতি তিনি জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবীদল মান্দা উপজেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এর পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিনের জাতীয় সমবায়ী পদকটি কেড়ে নিতে তিনি অপতৎপরতা শুরু করেন।

ভুক্তভোগী মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমি ভারশোঁ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর সদস্য থাকাকালিন মজা পুকুর ও জলাশয় লিজ নিয়ে সমবায়ভিত্তিক মাছের পোনা উৎপাদন, মাছচাষ, বাজারজাতকরণের মাধ্যমে সমিতির সদস্যদের স্বনির্ভরতা ও আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করি। এছাড়া সমিতি এলাকায় একটি স্কুল, মসজিদ ও নৈশবিদ্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছি। এসবের কারণে ২০০৩ সালে জাতীয়ভাবে আমাকে শ্রেষ্ঠ সমবায়ীর পুরস্কার দেওয়া হয়।’

মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমার সমবায়ী পদকটি কেড়ে নিতে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন মৎস্যজীবীদলের নেতা নুরুল ইসলাম। গত শনিবার কৌশলে মান্দা থানায় আমাকে ডেকে নেন থানার এসআই সামছুল আলম। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পদকটি সমবায় অফিসে জমা দেওয়ার জন্য একটি অঙ্গীকারপত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করে নেওয়া হয়। এসময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেন নুরুল ইসলাম। এরপর থেকে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বাড়ি যেতে পারছি না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মৎস্যজীবীদল মান্দা শাখার সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ভারশোঁ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য থাকা অবস্থায় মোসলেম উদ্দিন জাতীয় পদকটি লাভ করেন। এটি সম্পূর্ণ ভারশোঁ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অবদান। মোসলেম উদ্দিন এককভাবে পদকটি নিজের কাছে রাখতে পারেন না। এজন্য সেটি উদ্ধারে থানায় অভিযোগ দিয়েছিলাম।

এ প্রসঙ্গে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, মৎস্যজীবীদলের নেতা নুরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে মোসলেম উদ্দিনকে থানায় ডেকে নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আপোষ নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কাজটি করা হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়।

জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘মৎস্যচাষি মোসলেম উদ্দিন শ্রেষ্ঠ সমবায়ী হিসেবে পদকটি পেয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে পাওয়া পদকটি ফিরিয়ে নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

২২ বছর পর জাতীয় পদক কেড়ে নিতে মৎস্যজীবীনেতার অপচেষ্টা

আপডেট সময় : ০২:৫১:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

২২ বছর পর জাতীয় পদক কেড়ে নিতে মৎস্যজীবীনেতার অপচেষ্টা

নওগাঁর মান্দায় দীর্ঘ ২২ বছর পর এক মুক্তিযোদ্ধার জাতীয় সমবায়ী পদক কেড়ে নিতে অপতৎপরতার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মৎস্যজীবীদলের সভাপতি নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার কৌশলে মান্দা থানায় ডেকে নিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে সমবায়ী পদকটি উপজেলা সমবায় অফিসে জমা দেওয়ার জন্য একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে নেওয়া হয় ওই মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে। মৎস্যজীবীনেতার ভয়ভীতি ও হুমকির কারণে ওই মুক্তিযোদ্ধা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। বর্তমানে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গত দুদিন ধরে অবস্থান করছেন রাজশাহী শহরে। ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার নাম মোসলেম উদ্দিন। তিনি মান্দা উপজেলার ভেড়িদুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা। সমবায়ের মাধ্যমে স্বনির্ভর দেশ গড়ার প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে শ্রেষ্ঠ সমবায়ী হিসেবে জাতীয় পদক (স্বর্ণপদক) ও সনদপত্র পান তিনি।

অন্যদিকে অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম ভারশোঁ ইউনিয়নের খাগড়া গ্রামের রজব আলী প্রামাণিকের ছেলে। সম্প্রতি তিনি জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবীদল মান্দা উপজেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এর পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিনের জাতীয় সমবায়ী পদকটি কেড়ে নিতে তিনি অপতৎপরতা শুরু করেন।

ভুক্তভোগী মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমি ভারশোঁ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর সদস্য থাকাকালিন মজা পুকুর ও জলাশয় লিজ নিয়ে সমবায়ভিত্তিক মাছের পোনা উৎপাদন, মাছচাষ, বাজারজাতকরণের মাধ্যমে সমিতির সদস্যদের স্বনির্ভরতা ও আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করি। এছাড়া সমিতি এলাকায় একটি স্কুল, মসজিদ ও নৈশবিদ্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছি। এসবের কারণে ২০০৩ সালে জাতীয়ভাবে আমাকে শ্রেষ্ঠ সমবায়ীর পুরস্কার দেওয়া হয়।’

মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমার সমবায়ী পদকটি কেড়ে নিতে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন মৎস্যজীবীদলের নেতা নুরুল ইসলাম। গত শনিবার কৌশলে মান্দা থানায় আমাকে ডেকে নেন থানার এসআই সামছুল আলম। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পদকটি সমবায় অফিসে জমা দেওয়ার জন্য একটি অঙ্গীকারপত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করে নেওয়া হয়। এসময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেন নুরুল ইসলাম। এরপর থেকে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বাড়ি যেতে পারছি না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মৎস্যজীবীদল মান্দা শাখার সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ভারশোঁ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য থাকা অবস্থায় মোসলেম উদ্দিন জাতীয় পদকটি লাভ করেন। এটি সম্পূর্ণ ভারশোঁ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অবদান। মোসলেম উদ্দিন এককভাবে পদকটি নিজের কাছে রাখতে পারেন না। এজন্য সেটি উদ্ধারে থানায় অভিযোগ দিয়েছিলাম।

এ প্রসঙ্গে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, মৎস্যজীবীদলের নেতা নুরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে মোসলেম উদ্দিনকে থানায় ডেকে নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আপোষ নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কাজটি করা হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়।

জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘মৎস্যচাষি মোসলেম উদ্দিন শ্রেষ্ঠ সমবায়ী হিসেবে পদকটি পেয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে পাওয়া পদকটি ফিরিয়ে নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।