ঢাকা ১১:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাতক্ষীরার তালায় ৩৩ বিঘা জলমহাল বেদখল, ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
  • আপডেট সময় : ০৫:২১:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪২ বার পড়া হয়েছে

collected

চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাতক্ষীরার তালায় ৩৩ বিঘা জলমহাল বেদখল, ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

সাতক্ষীরার তালায় রয়েছে প্রায় ৩৩ বিঘা দয়ানি-সরিগাতি খাল (জলমহাল)। জলমহালটি প্রায় সাত বছর ধরে বেদখল হয়ে আছে। এতে করে এই জলমহাল থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের হরিহরনগর মৌজার দয়ানি-সরিগাতি খাল বা জলমহালটি। যার দাগ নং-৯৪৪৮ ও ৯৪৮১ এবং জমির পরিমাণ যথাক্রমে প্রায় ৩ একর ৯৪ শতাংশ ও ৭ একর ২ শতাংশ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দীর্ঘকাল যাবত জলমহালটি খাস খাল হিসাবে ন্যায্য মূল্যে স্থানীয় মৎস্য চাষীদের কাছে ইজারা দিয়ে এসেছে। কিন্তু ২০১৭ সালে রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে কতিপয় প্রভাবশালী লোক জাল দলিল ও কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণকে বোকা বানিয়ে বৈধ ইজারাদের হটিয়ে তারা উক্ত জলমহাল দখল করে নেয়। পরে এই প্রভাবশালী চক্র ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে জলমহালটি খণ্ড খণ্ড করে লিজ (হারি) দিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা আদায় করে।

বিষয়টি নিয়ে খেশরা ইউনিয়নের হরিহরনগর গ্রামের মোঃ মতলেব সরদার নামে এক ব্যক্তি সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়ের করে, যার নং-৬৯/২০১৭। দীর্ঘ শুনানি ও যাচাই-বাছাইয়ের পর আদালত দলিলটি জাল হিসাবে ঘোষণা দিয়ে জব্দ করে। একই সাথে আদালত জলমহালটি খাস খতিয়ান ভুক্ত করারসহ এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেয়। কিন্তু জাল দলিলকারী চক্র বিষয়টি সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে আপীল করে। তবে উক্ত আদালতও নিন্ম আদালতের রায় বহাল রাখে। দখলকারীরা সময় ক্ষেপণের অংশ হিসাবে হাইকোর্টে লিভ টু আপীল করে যার নং-২১০৯/২২ এবং কয়েকবার শুনানির তারিখ পেছানোর আবেদন করে। তবে এক পর্যায় উক্ত আপীলের শুনানি হলে, তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় অনুসরণের নির্দেশ দেয় (অর্ডার নং-৫৫১ অফ ২০২২)। হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক, সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ১৪-০১-২০২৪ তারিখে তার পূর্বের রায় বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন যার নং-পি ১৪০১/২৩ তালা। সাংবাদিকদের পরিদর্শন কালে মোঃ মতলেব সরদার আদালতের সব কপি দেখান ও ফটোকপি সরবরাহ করেন।

অভিযোগ উঠেছে, এসব কিছুর পরও রবিউল ইসলাম প্রভাব খাটিয়ে এখনও এই জলমহাল দখল অব্যাহত রেখেছে। এদিকে বহিরাগত ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের খালটি দীর্ঘদিন দখলে থাকার কারণে স্থানীয় কৃষকরা ফুঁসে উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, এই জাল দলিলের মালিক রবিউল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাসিন্দা এবং নিজকে স্থানীয় এক পত্রিকার রিপোর্টার ও আওয়ামীলীগের নেতা হিসাবে পরিচয় দিতেন।

কৃষকদের বক্তব্য, পূর্বে কৃষি জমির পানি নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধা দেওয়ার শর্তে সরকার মৎস্য চাষিদের ইজারা দিত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে এই দখলকারীরা তাদের নিজেদের সম্পত্তি দাবি করে এই খাল ব্যবহার করতে কৃষকদের বাঁধা দিয়ে আসছে। ফলে আশপাশের কয়েক শত বিঘা জমি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বহিরাগতদের আনাগোনার কারণে স্থানীয় কৃষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, খাল বা নদী কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না এবং আমরা ছোট বেলা থেকে এই জলমহাল খাস হিসাবে জেনে এসেছি। হঠাৎ দলিল আর কাগজপত্র বের হয়েছে, বিষয়টি জেনে আমরা অবাক হয়েছি। তারা জলমহলটি উদ্ধারের পাশাপাশি অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে জলমহাল ভোগ দখলকারী রবিউল ইসলামের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জমি নিয়ে আমার সরকারের সাথে ঝামেলা থাকতে পারে, স্থানীয়দের সাথে নয়। স্থানীয় কোন ব্যক্তির কোন বক্তব্য থাকলে তারা জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও সহকারি কমিশনারের (ভুমি) সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সাতক্ষীরার তালায় ৩৩ বিঘা জলমহাল বেদখল, ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

আপডেট সময় : ০৫:২১:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাতক্ষীরার তালায় ৩৩ বিঘা জলমহাল বেদখল, ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

সাতক্ষীরার তালায় রয়েছে প্রায় ৩৩ বিঘা দয়ানি-সরিগাতি খাল (জলমহাল)। জলমহালটি প্রায় সাত বছর ধরে বেদখল হয়ে আছে। এতে করে এই জলমহাল থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের হরিহরনগর মৌজার দয়ানি-সরিগাতি খাল বা জলমহালটি। যার দাগ নং-৯৪৪৮ ও ৯৪৮১ এবং জমির পরিমাণ যথাক্রমে প্রায় ৩ একর ৯৪ শতাংশ ও ৭ একর ২ শতাংশ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দীর্ঘকাল যাবত জলমহালটি খাস খাল হিসাবে ন্যায্য মূল্যে স্থানীয় মৎস্য চাষীদের কাছে ইজারা দিয়ে এসেছে। কিন্তু ২০১৭ সালে রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে কতিপয় প্রভাবশালী লোক জাল দলিল ও কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণকে বোকা বানিয়ে বৈধ ইজারাদের হটিয়ে তারা উক্ত জলমহাল দখল করে নেয়। পরে এই প্রভাবশালী চক্র ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে জলমহালটি খণ্ড খণ্ড করে লিজ (হারি) দিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা আদায় করে।

বিষয়টি নিয়ে খেশরা ইউনিয়নের হরিহরনগর গ্রামের মোঃ মতলেব সরদার নামে এক ব্যক্তি সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়ের করে, যার নং-৬৯/২০১৭। দীর্ঘ শুনানি ও যাচাই-বাছাইয়ের পর আদালত দলিলটি জাল হিসাবে ঘোষণা দিয়ে জব্দ করে। একই সাথে আদালত জলমহালটি খাস খতিয়ান ভুক্ত করারসহ এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেয়। কিন্তু জাল দলিলকারী চক্র বিষয়টি সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে আপীল করে। তবে উক্ত আদালতও নিন্ম আদালতের রায় বহাল রাখে। দখলকারীরা সময় ক্ষেপণের অংশ হিসাবে হাইকোর্টে লিভ টু আপীল করে যার নং-২১০৯/২২ এবং কয়েকবার শুনানির তারিখ পেছানোর আবেদন করে। তবে এক পর্যায় উক্ত আপীলের শুনানি হলে, তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় অনুসরণের নির্দেশ দেয় (অর্ডার নং-৫৫১ অফ ২০২২)। হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক, সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ১৪-০১-২০২৪ তারিখে তার পূর্বের রায় বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন যার নং-পি ১৪০১/২৩ তালা। সাংবাদিকদের পরিদর্শন কালে মোঃ মতলেব সরদার আদালতের সব কপি দেখান ও ফটোকপি সরবরাহ করেন।

অভিযোগ উঠেছে, এসব কিছুর পরও রবিউল ইসলাম প্রভাব খাটিয়ে এখনও এই জলমহাল দখল অব্যাহত রেখেছে। এদিকে বহিরাগত ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের খালটি দীর্ঘদিন দখলে থাকার কারণে স্থানীয় কৃষকরা ফুঁসে উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, এই জাল দলিলের মালিক রবিউল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাসিন্দা এবং নিজকে স্থানীয় এক পত্রিকার রিপোর্টার ও আওয়ামীলীগের নেতা হিসাবে পরিচয় দিতেন।

কৃষকদের বক্তব্য, পূর্বে কৃষি জমির পানি নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধা দেওয়ার শর্তে সরকার মৎস্য চাষিদের ইজারা দিত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে এই দখলকারীরা তাদের নিজেদের সম্পত্তি দাবি করে এই খাল ব্যবহার করতে কৃষকদের বাঁধা দিয়ে আসছে। ফলে আশপাশের কয়েক শত বিঘা জমি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বহিরাগতদের আনাগোনার কারণে স্থানীয় কৃষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, খাল বা নদী কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না এবং আমরা ছোট বেলা থেকে এই জলমহাল খাস হিসাবে জেনে এসেছি। হঠাৎ দলিল আর কাগজপত্র বের হয়েছে, বিষয়টি জেনে আমরা অবাক হয়েছি। তারা জলমহলটি উদ্ধারের পাশাপাশি অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে জলমহাল ভোগ দখলকারী রবিউল ইসলামের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জমি নিয়ে আমার সরকারের সাথে ঝামেলা থাকতে পারে, স্থানীয়দের সাথে নয়। স্থানীয় কোন ব্যক্তির কোন বক্তব্য থাকলে তারা জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও সহকারি কমিশনারের (ভুমি) সাথে যোগাযোগ করতে পারে।