ঢাকা ০৭:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেরপুরের কালিদহ সাগরে বারনী স্নান অনুষ্ঠিত!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:২৯:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪ ৪৮৯ বার পড়া হয়েছে

collected

চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শেরপুরের কালিদহ সাগরে বারনী স্নান অনুষ্ঠিত!

মোহাম্মদ দুদু মল্লিক, শেরপুর প্রতিনিধিঃ
শেরপুরের কালিদহ সাগরে সনাতন হিন্দু ধর্মাবম্বীদের বারনী স্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (৬ এপ্রিল) মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে আগত বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ ভক্তবৃন্দ বৈদিকমন্ত্র পাঠ করে ঐতিহ্যবাহী কালিদহ সাগরে পূণ্যস্নান করেন। প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলায় কালিদহ সাগরে হাজার বছরের‌ও অধিক সময়কাল ধরে এই বারনী স্নান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

এক সময়ের প্রবল প্রতাপশালী কোচ রাজা দলীপ সামন্ত শাসিত শেরপুর রাজ্যের সুরক্ষিত রাজধানী দুর্গ সংলগ্ন, মনসামঙ্গল কাব্যধারার কিংবদন্তি চরিত্র প্রাচীন ভারতের ক্ষমতাশালী বণিক চাঁদ সওদাগর ও বেহুলা-লক্ষিন্দরের স্মৃতি বিজড়িত এই কালিদহ সাগর।প্রতি বছরের মত এবারও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে বহুসংখ্যক স্নানার্থীর সমাগম ঘটে এখানে। স্নানার্থীগন তাদের বিশ্বাস মতে এই স্নানের মাধ্যমে পাপ মোচন ও মনের সকল সংকীর্ণতা দূর করার জন্য স্নান করেন। স্নান শেষে শত শত ভক্তবৃন্ধ সাগরপাড়ে অনুষ্ঠিত গঙ্গাপূজা ও সংকীর্ত্তনে অংশ নেয়।

এ সময় ভক্তগণ তাদের পূর্ব পুরুষের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন।যানা যায় ১২৫৭ খ্রিস্টাব্দে শেরপুর রাজ্যের (সেকালের দশকাহনীয়া) কুচ রাজা দলীপ সামন্ত এই কালিদহ সাগর পাড়ে তার রাজধানী স্থাপন করেন। শেরপুর জেলাসহ জামালপুর জেলার ইসলামপুর, বকশিগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা, ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলা সহ নেত্রকোনা জেলার একটি বড় অংশ এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পার্বত্য এলাকার কিয়দাংশ জুড়ে ছিল সেই রাজ্যের বিস্তৃতি। সর্পদেবী মনসা চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গা ডুবিয়ে দিয়েছিলেন এখানেই।তাই হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শত শত বছর পূর্ব থেকেই গড়জরীপার মাটির দূর্গ সংলগ্ন এই কালীদহ সাগর পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এখানে বারনী স্নান করতে দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার পুণ্যার্থীরা ছুটে আসেন। এই দিনে এবং জন্মাষ্টমীতে এখানে মেলা বসতো। সেই মেলায় দেশীয় হস্তশিল্প, মাটির খেলনা, বাঁশ বেতের তৈজসপত্র, মুখরোচক খাবারের পশরা সাজিয়ে শত শত দোকান বসত।

লোকজন সেই মেলায় অংশগ্রহণ করতে বছর জুড়ে অপেক্ষায় থাকতেন। সকল ধর্ম বর্ণের হাজার হাজার মানুষ মেলায় উৎসবে মেতে উঠত। এখনও স্নানের দিন ভোর থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত মেলা চললেও আগের মতো জৌলুস নেই। এবার মেলায় উল্লেখযোগ্য পূণ্যার্থীর আগমন ঘটে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগত পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে আগতরা অভিযোগ করে বলেন,”এখানে বিপুল সংখ্যক পূণ্যার্থীদের স্নানের জন্য কোন ঘাট নেই, স্নানের জায়গা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য রাস্তা না থাকায় অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হয়, খাবার পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা নেই, স্নান শেষে কাপড় পরিবর্তনের জন্য কোন ঘর নেই, মেলার মাঠে ধান চাষ করায় মেলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই।” তাঁরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এসকল সমস্যার সমাধান করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

শেরপুরের কালিদহ সাগরে বারনী স্নান অনুষ্ঠিত!

আপডেট সময় : ০৩:২৯:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪

শেরপুরের কালিদহ সাগরে বারনী স্নান অনুষ্ঠিত!

মোহাম্মদ দুদু মল্লিক, শেরপুর প্রতিনিধিঃ
শেরপুরের কালিদহ সাগরে সনাতন হিন্দু ধর্মাবম্বীদের বারনী স্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (৬ এপ্রিল) মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে আগত বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ ভক্তবৃন্দ বৈদিকমন্ত্র পাঠ করে ঐতিহ্যবাহী কালিদহ সাগরে পূণ্যস্নান করেন। প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলায় কালিদহ সাগরে হাজার বছরের‌ও অধিক সময়কাল ধরে এই বারনী স্নান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

এক সময়ের প্রবল প্রতাপশালী কোচ রাজা দলীপ সামন্ত শাসিত শেরপুর রাজ্যের সুরক্ষিত রাজধানী দুর্গ সংলগ্ন, মনসামঙ্গল কাব্যধারার কিংবদন্তি চরিত্র প্রাচীন ভারতের ক্ষমতাশালী বণিক চাঁদ সওদাগর ও বেহুলা-লক্ষিন্দরের স্মৃতি বিজড়িত এই কালিদহ সাগর।প্রতি বছরের মত এবারও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে বহুসংখ্যক স্নানার্থীর সমাগম ঘটে এখানে। স্নানার্থীগন তাদের বিশ্বাস মতে এই স্নানের মাধ্যমে পাপ মোচন ও মনের সকল সংকীর্ণতা দূর করার জন্য স্নান করেন। স্নান শেষে শত শত ভক্তবৃন্ধ সাগরপাড়ে অনুষ্ঠিত গঙ্গাপূজা ও সংকীর্ত্তনে অংশ নেয়।

এ সময় ভক্তগণ তাদের পূর্ব পুরুষের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন।যানা যায় ১২৫৭ খ্রিস্টাব্দে শেরপুর রাজ্যের (সেকালের দশকাহনীয়া) কুচ রাজা দলীপ সামন্ত এই কালিদহ সাগর পাড়ে তার রাজধানী স্থাপন করেন। শেরপুর জেলাসহ জামালপুর জেলার ইসলামপুর, বকশিগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা, ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলা সহ নেত্রকোনা জেলার একটি বড় অংশ এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পার্বত্য এলাকার কিয়দাংশ জুড়ে ছিল সেই রাজ্যের বিস্তৃতি। সর্পদেবী মনসা চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গা ডুবিয়ে দিয়েছিলেন এখানেই।তাই হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শত শত বছর পূর্ব থেকেই গড়জরীপার মাটির দূর্গ সংলগ্ন এই কালীদহ সাগর পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এখানে বারনী স্নান করতে দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার পুণ্যার্থীরা ছুটে আসেন। এই দিনে এবং জন্মাষ্টমীতে এখানে মেলা বসতো। সেই মেলায় দেশীয় হস্তশিল্প, মাটির খেলনা, বাঁশ বেতের তৈজসপত্র, মুখরোচক খাবারের পশরা সাজিয়ে শত শত দোকান বসত।

লোকজন সেই মেলায় অংশগ্রহণ করতে বছর জুড়ে অপেক্ষায় থাকতেন। সকল ধর্ম বর্ণের হাজার হাজার মানুষ মেলায় উৎসবে মেতে উঠত। এখনও স্নানের দিন ভোর থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত মেলা চললেও আগের মতো জৌলুস নেই। এবার মেলায় উল্লেখযোগ্য পূণ্যার্থীর আগমন ঘটে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগত পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে আগতরা অভিযোগ করে বলেন,”এখানে বিপুল সংখ্যক পূণ্যার্থীদের স্নানের জন্য কোন ঘাট নেই, স্নানের জায়গা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য রাস্তা না থাকায় অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হয়, খাবার পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা নেই, স্নান শেষে কাপড় পরিবর্তনের জন্য কোন ঘর নেই, মেলার মাঠে ধান চাষ করায় মেলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই।” তাঁরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এসকল সমস্যার সমাধান করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।