ঢাকা ০৭:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মান্দায় ন্যায্য মূল্যে কৃষি পণ্যের দোকান উদ্বোধন বাংলাদেশের আগামি দিনের প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমান- দুলু রাজশাহীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন ঘিরে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে পুলিশ আট দফা দাবিতে রাজশাহীর ডিসিকে ক্যাবের স্মারকলিপি সিংড়ায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা লালপুরে গোসাই আশ্রমে দুইদিন ব্যাপী ৩২৭তম নবান্ন উৎসব শাহজাদপুরে বিশেষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত শাহজাদপুরে ড. এম. এ মতিন স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন। শেরপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সেনা সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা! রাজশাহীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন

ল্যাম্প লাইটের আলোয় লিখে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মুনিরার এবারও জিপিএ-৫

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৪১:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ৪৩ বার পড়া হয়েছে
চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ল্যাম্প লাইটের আলোয় লিখে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
মুনিরার এবারও জিপিএ-৫

এম এম মামুন, রাজশাহী প্রতিনিধি
ল্যাম্প লাইটের আলোয় লিখে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীমুনিরার এবারও জিপিএ-৫। অনেকের ধারণা প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝাস্বরূপ। তাদের বোঝা না মনে করে একটু সাহস যোগালে তারাও ভাল কিছু করতে পারে তার এমন উদাহরণ দিয়েছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মুনিরা ইয়াসমিন ঋতু।

এবারও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ – ৫ পেয়েছেন মুনিরা। কিন্তু সাহসী মন বল নিয়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন নওগাঁ জেলার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কিশোরী মুনিরা। পড়া লেখা করেন রাজশাহীতে। বসবাসও করেন রাজশাহীতেই।

মুনিরা ইয়াসমিন ঋতু একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তিনি রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্রী। এর আগে ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ড থেকে তিনি গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।

মুনিরা ইয়াসমিন ঋতু রাজশাহী নগরীর ভদ্রা এলাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করেন। তাদের বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামে। বাবা স্থানীয় একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মা মেরিনা পারভীন রিনা একজন গৃহিণী ছিলেন। সম্প্রতি তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন।

মুনিরা ইয়াসমিন ঋতুর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার গল্প। জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মুনিরার পথ চলা মোটেও সহজ ছিল না। তার চোখের জ্যোতি একেবারেই কম। চিকিৎসার জন্য দেশ-বিদেশে গিয়েছেন চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন ভাল কোন ফলাফল আসেনি।

চোখের কোনো চিকিৎসা নেই বলে ধারণা মুনিরার। চোখে চশমা পরিধান করে থাকলেও তা কোন কাজে আসে না। হয়-তো-বা-বাকিটা জীবন এভাবেই চলতে হবে তাকে। যতটুকু দেখতে পান তা সূর্যের আলোয় অথবা প্রখর আলোসম্পন্ন টেবিল ল্যাম্পের মাধ্যমে। দিনের বেলাতেও ঘরে ভিতর থাকলে লাগে টেবিল ল্যাম্প। বিভিন্ন পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে যেখানে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক আলোতে লিখতে পারে। কিন্তু মুনিরা শুধুমাত্র মানুষের ছায়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পান না। প্রতিটি পরীক্ষায় টেবিল ল্যাম্প লাইটের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে হয়। সূর্যের আলোতে মুনিরা দেখতে পেলেও তা সামান্য। চলাফেরা করে খুব সাবধানে। পরিচিত জায়গায় চলাফেরা স্বভাবিক হলেও অপরিচিত জায়গায় একেবারেই চলাফেরা করতে পারেন না।

২০০৯ সালে মুনিরার শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাজশাহীর ‘পিনাকল স্টাডি হোমথর মাধ্যমে। পরে শাহিন স্কুল লক্ষ্মীপুর শাখায় ভর্তি হন দ্বিতীয় শ্রেণিতে। সেখানে তৃতীয় শ্রেণিতে তিনি তার মেধার মাধ্যমে বৃত্তি পান। তারপর রাজশাহীর ভদ্রা এলাকার সাইদুর রহমান একাডেমিতে ভর্তি হন চতুর্থ শ্রেণিতে। সেখানে চতুর্থ শ্রেণিতে বৃত্তি এবং পঞ্চম শেণিতে পান বোর্ড বৃত্তি। এরপর ভদ্রা এলাকায় অবস্থিত অক্ষর একাডেমিতে ভর্তি হন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সেখানে সফলতার সঙ্গে পড়াশোনা করে ২০১৬ সালের জেএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ড থেকে পান জিপিএ-৫।

২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছিলেন গোল্ডেন জিপিএ-৫। সর্বশেষ ২০২২ সালে প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পেয়েছেন গোল্ডেন জিপিএ-৫। মুনিরা যখন প্রাইমারি স্কুলে যখন ভর্তি হন তখন অনেকেই ভেবেছিলেন সে-তো-দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তার দ্বারা পড়ালেখা হবে না। ক্লাসে যখন টেবিলে ল্যাম্পের মাধ্যমে লিখতেন। তা দেখে সহপাঠি হাসাহাসি করত।

মুনিরার এই সফলতার গল্পটা শুরু হয় তার মা মেরিনা পারভীন রিনার হাত ধরেই। গত বছরের ১১ জুন মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার মা সব সময় সাহস জুগিয়েছেন। সুস্থ্য থাকা অবস্থায় তার মা সংসারের কাজ শেষ করে মুনিরাকে নিয়ে স্কুল ও কোচিং-এ। মুনিরার একমাত্র ছায়াসঙ্গী ছিলেন তার মা। মুনিরার অদম্য ইচ্ছা শক্তি তার মাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। দুই মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে মুনিরা মেজো। মুনিরার মা মুনিরাকে কখনও বোঝা মনে করেননি। একজন আদর্শ মায়ের মত মুনিরার সাথে আচারণ করত এবং সব সমস্যার সমাধান করতেন। তবে মা হারা এই অদম্য দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কিশোরী তার স্বপ্নগুলোকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে চান।

মুনিরা শুধু পড়াশোনাতেই না তার রয়েছে আশ্চর্য সব প্রতিভা। সে ড্রয়িং করতে পারে যেকোনো কিছু। কবিতা, ছোটগল্প লিখাতেও সে পটু। সে নানারকম হস্তশিল্প নির্মাণ করতে পারে।
মুনিরা বলেন, আমাকে নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করেছে। এর যে কত কষ্ট তা আমি ছাড়া অন্যা কেউ অনুভব করতে পারেননি। আমি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যারা প্রতিবন্ধী তাদের ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ভাল কিছু করতে চাই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ল্যাম্প লাইটের আলোয় লিখে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মুনিরার এবারও জিপিএ-৫

আপডেট সময় : ০৪:৪১:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ল্যাম্প লাইটের আলোয় লিখে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
মুনিরার এবারও জিপিএ-৫

এম এম মামুন, রাজশাহী প্রতিনিধি
ল্যাম্প লাইটের আলোয় লিখে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীমুনিরার এবারও জিপিএ-৫। অনেকের ধারণা প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝাস্বরূপ। তাদের বোঝা না মনে করে একটু সাহস যোগালে তারাও ভাল কিছু করতে পারে তার এমন উদাহরণ দিয়েছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মুনিরা ইয়াসমিন ঋতু।

এবারও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ – ৫ পেয়েছেন মুনিরা। কিন্তু সাহসী মন বল নিয়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন নওগাঁ জেলার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কিশোরী মুনিরা। পড়া লেখা করেন রাজশাহীতে। বসবাসও করেন রাজশাহীতেই।

মুনিরা ইয়াসমিন ঋতু একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তিনি রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্রী। এর আগে ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ড থেকে তিনি গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।

মুনিরা ইয়াসমিন ঋতু রাজশাহী নগরীর ভদ্রা এলাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করেন। তাদের বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামে। বাবা স্থানীয় একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মা মেরিনা পারভীন রিনা একজন গৃহিণী ছিলেন। সম্প্রতি তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন।

মুনিরা ইয়াসমিন ঋতুর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার গল্প। জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মুনিরার পথ চলা মোটেও সহজ ছিল না। তার চোখের জ্যোতি একেবারেই কম। চিকিৎসার জন্য দেশ-বিদেশে গিয়েছেন চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন ভাল কোন ফলাফল আসেনি।

চোখের কোনো চিকিৎসা নেই বলে ধারণা মুনিরার। চোখে চশমা পরিধান করে থাকলেও তা কোন কাজে আসে না। হয়-তো-বা-বাকিটা জীবন এভাবেই চলতে হবে তাকে। যতটুকু দেখতে পান তা সূর্যের আলোয় অথবা প্রখর আলোসম্পন্ন টেবিল ল্যাম্পের মাধ্যমে। দিনের বেলাতেও ঘরে ভিতর থাকলে লাগে টেবিল ল্যাম্প। বিভিন্ন পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে যেখানে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক আলোতে লিখতে পারে। কিন্তু মুনিরা শুধুমাত্র মানুষের ছায়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পান না। প্রতিটি পরীক্ষায় টেবিল ল্যাম্প লাইটের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে হয়। সূর্যের আলোতে মুনিরা দেখতে পেলেও তা সামান্য। চলাফেরা করে খুব সাবধানে। পরিচিত জায়গায় চলাফেরা স্বভাবিক হলেও অপরিচিত জায়গায় একেবারেই চলাফেরা করতে পারেন না।

২০০৯ সালে মুনিরার শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাজশাহীর ‘পিনাকল স্টাডি হোমথর মাধ্যমে। পরে শাহিন স্কুল লক্ষ্মীপুর শাখায় ভর্তি হন দ্বিতীয় শ্রেণিতে। সেখানে তৃতীয় শ্রেণিতে তিনি তার মেধার মাধ্যমে বৃত্তি পান। তারপর রাজশাহীর ভদ্রা এলাকার সাইদুর রহমান একাডেমিতে ভর্তি হন চতুর্থ শ্রেণিতে। সেখানে চতুর্থ শ্রেণিতে বৃত্তি এবং পঞ্চম শেণিতে পান বোর্ড বৃত্তি। এরপর ভদ্রা এলাকায় অবস্থিত অক্ষর একাডেমিতে ভর্তি হন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সেখানে সফলতার সঙ্গে পড়াশোনা করে ২০১৬ সালের জেএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ড থেকে পান জিপিএ-৫।

২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছিলেন গোল্ডেন জিপিএ-৫। সর্বশেষ ২০২২ সালে প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পেয়েছেন গোল্ডেন জিপিএ-৫। মুনিরা যখন প্রাইমারি স্কুলে যখন ভর্তি হন তখন অনেকেই ভেবেছিলেন সে-তো-দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তার দ্বারা পড়ালেখা হবে না। ক্লাসে যখন টেবিলে ল্যাম্পের মাধ্যমে লিখতেন। তা দেখে সহপাঠি হাসাহাসি করত।

মুনিরার এই সফলতার গল্পটা শুরু হয় তার মা মেরিনা পারভীন রিনার হাত ধরেই। গত বছরের ১১ জুন মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার মা সব সময় সাহস জুগিয়েছেন। সুস্থ্য থাকা অবস্থায় তার মা সংসারের কাজ শেষ করে মুনিরাকে নিয়ে স্কুল ও কোচিং-এ। মুনিরার একমাত্র ছায়াসঙ্গী ছিলেন তার মা। মুনিরার অদম্য ইচ্ছা শক্তি তার মাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। দুই মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে মুনিরা মেজো। মুনিরার মা মুনিরাকে কখনও বোঝা মনে করেননি। একজন আদর্শ মায়ের মত মুনিরার সাথে আচারণ করত এবং সব সমস্যার সমাধান করতেন। তবে মা হারা এই অদম্য দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কিশোরী তার স্বপ্নগুলোকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে চান।

মুনিরা শুধু পড়াশোনাতেই না তার রয়েছে আশ্চর্য সব প্রতিভা। সে ড্রয়িং করতে পারে যেকোনো কিছু। কবিতা, ছোটগল্প লিখাতেও সে পটু। সে নানারকম হস্তশিল্প নির্মাণ করতে পারে।
মুনিরা বলেন, আমাকে নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করেছে। এর যে কত কষ্ট তা আমি ছাড়া অন্যা কেউ অনুভব করতে পারেননি। আমি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যারা প্রতিবন্ধী তাদের ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ভাল কিছু করতে চাই।