ঢাকা ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালপুরে গোসাই আশ্রমে দুইদিন ব্যাপী ৩২৭তম নবান্ন উৎসব

লালপুর থেকে ফজলুর রহমান পলাশঃ
  • আপডেট সময় : ১২:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ৯৬ বার পড়া হয়েছে

collected

চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

লালপুরে ৩২৭তম গোসাই আশ্রমে ২ দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব

নাটোরের লালপুরে গোসাই আশ্রমে দুইদিন ব্যাপী নবান্ন উৎসব শুরু হয়েছে। ঐতিহ্যের এক অন্যতম নিদর্শন শ্রী. ফকির চন্দ্র গোসাইয়ের আশ্রম। প্রায় সোয়া ৩০০ বছরের পুরনো এই আশ্রম। অশ্রমের অন্যতম প্রধান উৎসব হলো নবান্ন। হাজারো ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশে মুখরিত হয়ে উঠেছে এই অংশ্রমস্থল। মঙ্গলবার (৩ ডিসেন্বর ২০২৪) উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুরে সকালে আশ্রম কমিটির সভাপতি শ্রী সঞ্জয় কুমারের সভাপত্বিতে আশ্রমের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, দুপুরে অতিথী ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মাহমুদ, লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির নাটোর জেলা সভাপতি প্রসাদ কুমার বাচ্চা সরকার ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীবৃন্দ।

আশ্রম এলাকা ঘুরে ভক্ত ও সেবাইতদের সাথে কথা বলে জানাযায় নারী পুরুষ নির্বিশেষে ভক্তরা আশ্রমে পৌঁছেই শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোসাইজী ও তার শিষ্য সাধু বৃন্দের সমাধীতে ভক্তি শ্রদ্ধা জানান। ভক্তরা আশ্রমের উন্নয়নে সাধ্যমত দান করছেন। নি:সন্তান বন্ধ্যা মহিলারা আশ্রমের অক্ষয় তলা নামক স্থানে বটগাছের নিচে সদ্য শেষে ভেজা কাপড়ে বসে আঁচল বিছিয়ে সন্তান লাভের জন্য ভীখ মাংগছেন। কথিত আছে যদি গাছের ফল বা পাতা আঁচলের ওপর পড়ে তাহলে নি:সন্তান নারী সন্তান লাভ করবে। আশ্রম প্রাঙ্গনে দুপুরে সারিবদ্ধভাবে বসে গোসাইজীর ভক্তরা কলার পাতায় করে খিচুড়ি, পাঁচ তরকারী ও পায়েশ ভক্ষণ করেন।

আশ্রমের প্রধান সেবাইত শ্রী পরমানান্দ সাধু জানান, বাংলা ১২১৭ সালে উপজেলা সদর থেকে আট কিলো মিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দুড়দুড়িয়ার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গহীন অরণ্যে একটি বটগাছের নিচে আস্তানা স্থাপন করেন ফকির চাঁদ বৈষ্ণব। এখানেই সাধু ধ্যান-তপস্যা ও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার আরম্ভ করেন। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা, গঙ্গা স্নান ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত সাধক সমবেত হন। সাধু ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের মৃত্যুর পর নওপাড়ার জমিদার তারকেস্বর বাবু তাঁর (সাধুর) স্মরণে সমাধিটি পাকা করে দেন। এ ছাড়াও ভক্তদের সুবিধার্থে ৬৮ বিঘা জমি ও সান বাঁধানো বিশাল দুটি পুকুর দান করেন। আশ্রম চত্ত্বরে দালান কোঠা নির্মানেও তিনি সহযোগিতা করেন। আশ্রমের প্রবেশ পথে রয়েছে ময়ূর, বাঘ ও বিভিন্ন প্রাণির মূর্তি এবং লতা-পাতা কারুকার্য খচিত সুবিশাল ফটক। প্রধান দ্বার প্রান্তে ডান পাশে রয়েছে ভক্ত সাধু ও সাধু মাতাদের আবাসন। বাম পাশে রয়েছে ৬ জন সাধুর সমাধি মন্দির। একটু সামনেই রয়েছে শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের চার কোনা প্রধান সমাধি স্তম্ভ। বর্গাকৃতির ৪০ ফুট সমাধি সৌধের রয়েছে আরেকটি ৩০ ফুট গৃহ। এর একটি দরজা ছাড়া কোন জানালা পর্যন্ত নেই। মূল মন্দিরে শুধুমাত্র প্রধান সেবাইত প্রবেশ করেন। কাথিত আছে, মন্দিরের মধ্যে সাধু ফকির চাঁদ স্বশরীরে প্রবেশ করে ঐশ্বরিকভাবে স্বর্গ লাভ করেন। তাঁর শবদেহ দেখা যায় নি। পরিধেয় বস্ত্রাদি সংরক্ষণ করে সমাধি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। গম্বুজ আকৃতির সমাধির উপরিভাগ গ্রিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। ঘরের দেয়াল ও দরজায় বিভিন্ন প্রাণি, গাছ, লতা-পাতা খচিত কারুকার্য শোভা পাচ্ছে। সমাধির মাত্র পাঁচ গজ দূরে রয়েছে বিশাল আকৃতির এক কুয়ার একটি সিঁড়ি পথ রয়েছে পাশের রান্না ঘরের সাথে সংযুক্ত। এই সিঁড়ি পথে সাধুগণ স্নানে যেতেন এবং রান্নাসহ পানিয় জল সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে কুয়ার পানি ব্যবহার অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। আশ্রম চত্ত্বরে রয়েছে ১৪২ জন ভক্ত সাধুর সমাধি। বাংলা (৩২৮ বছর পূর্বে) শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোসাইজীর আশ্রম স্থাপিত হয়।

এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার ভক্ত বৃন্দের আগমন ঘটে। দুই শতাব্দির স্মৃতিবাহী ফকির চাঁদ গোসাই আশ্রম দেশ-বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের কোলাহলে মুখরিত আশ্রমটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। আশ্রমটি ৩২ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দুই দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

লালপুরে গোসাই আশ্রমে দুইদিন ব্যাপী ৩২৭তম নবান্ন উৎসব

আপডেট সময় : ১২:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

লালপুরে ৩২৭তম গোসাই আশ্রমে ২ দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব

নাটোরের লালপুরে গোসাই আশ্রমে দুইদিন ব্যাপী নবান্ন উৎসব শুরু হয়েছে। ঐতিহ্যের এক অন্যতম নিদর্শন শ্রী. ফকির চন্দ্র গোসাইয়ের আশ্রম। প্রায় সোয়া ৩০০ বছরের পুরনো এই আশ্রম। অশ্রমের অন্যতম প্রধান উৎসব হলো নবান্ন। হাজারো ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশে মুখরিত হয়ে উঠেছে এই অংশ্রমস্থল। মঙ্গলবার (৩ ডিসেন্বর ২০২৪) উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুরে সকালে আশ্রম কমিটির সভাপতি শ্রী সঞ্জয় কুমারের সভাপত্বিতে আশ্রমের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, দুপুরে অতিথী ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মাহমুদ, লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির নাটোর জেলা সভাপতি প্রসাদ কুমার বাচ্চা সরকার ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীবৃন্দ।

আশ্রম এলাকা ঘুরে ভক্ত ও সেবাইতদের সাথে কথা বলে জানাযায় নারী পুরুষ নির্বিশেষে ভক্তরা আশ্রমে পৌঁছেই শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোসাইজী ও তার শিষ্য সাধু বৃন্দের সমাধীতে ভক্তি শ্রদ্ধা জানান। ভক্তরা আশ্রমের উন্নয়নে সাধ্যমত দান করছেন। নি:সন্তান বন্ধ্যা মহিলারা আশ্রমের অক্ষয় তলা নামক স্থানে বটগাছের নিচে সদ্য শেষে ভেজা কাপড়ে বসে আঁচল বিছিয়ে সন্তান লাভের জন্য ভীখ মাংগছেন। কথিত আছে যদি গাছের ফল বা পাতা আঁচলের ওপর পড়ে তাহলে নি:সন্তান নারী সন্তান লাভ করবে। আশ্রম প্রাঙ্গনে দুপুরে সারিবদ্ধভাবে বসে গোসাইজীর ভক্তরা কলার পাতায় করে খিচুড়ি, পাঁচ তরকারী ও পায়েশ ভক্ষণ করেন।

আশ্রমের প্রধান সেবাইত শ্রী পরমানান্দ সাধু জানান, বাংলা ১২১৭ সালে উপজেলা সদর থেকে আট কিলো মিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দুড়দুড়িয়ার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গহীন অরণ্যে একটি বটগাছের নিচে আস্তানা স্থাপন করেন ফকির চাঁদ বৈষ্ণব। এখানেই সাধু ধ্যান-তপস্যা ও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার আরম্ভ করেন। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা, গঙ্গা স্নান ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত সাধক সমবেত হন। সাধু ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের মৃত্যুর পর নওপাড়ার জমিদার তারকেস্বর বাবু তাঁর (সাধুর) স্মরণে সমাধিটি পাকা করে দেন। এ ছাড়াও ভক্তদের সুবিধার্থে ৬৮ বিঘা জমি ও সান বাঁধানো বিশাল দুটি পুকুর দান করেন। আশ্রম চত্ত্বরে দালান কোঠা নির্মানেও তিনি সহযোগিতা করেন। আশ্রমের প্রবেশ পথে রয়েছে ময়ূর, বাঘ ও বিভিন্ন প্রাণির মূর্তি এবং লতা-পাতা কারুকার্য খচিত সুবিশাল ফটক। প্রধান দ্বার প্রান্তে ডান পাশে রয়েছে ভক্ত সাধু ও সাধু মাতাদের আবাসন। বাম পাশে রয়েছে ৬ জন সাধুর সমাধি মন্দির। একটু সামনেই রয়েছে শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের চার কোনা প্রধান সমাধি স্তম্ভ। বর্গাকৃতির ৪০ ফুট সমাধি সৌধের রয়েছে আরেকটি ৩০ ফুট গৃহ। এর একটি দরজা ছাড়া কোন জানালা পর্যন্ত নেই। মূল মন্দিরে শুধুমাত্র প্রধান সেবাইত প্রবেশ করেন। কাথিত আছে, মন্দিরের মধ্যে সাধু ফকির চাঁদ স্বশরীরে প্রবেশ করে ঐশ্বরিকভাবে স্বর্গ লাভ করেন। তাঁর শবদেহ দেখা যায় নি। পরিধেয় বস্ত্রাদি সংরক্ষণ করে সমাধি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। গম্বুজ আকৃতির সমাধির উপরিভাগ গ্রিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। ঘরের দেয়াল ও দরজায় বিভিন্ন প্রাণি, গাছ, লতা-পাতা খচিত কারুকার্য শোভা পাচ্ছে। সমাধির মাত্র পাঁচ গজ দূরে রয়েছে বিশাল আকৃতির এক কুয়ার একটি সিঁড়ি পথ রয়েছে পাশের রান্না ঘরের সাথে সংযুক্ত। এই সিঁড়ি পথে সাধুগণ স্নানে যেতেন এবং রান্নাসহ পানিয় জল সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে কুয়ার পানি ব্যবহার অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। আশ্রম চত্ত্বরে রয়েছে ১৪২ জন ভক্ত সাধুর সমাধি। বাংলা (৩২৮ বছর পূর্বে) শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোসাইজীর আশ্রম স্থাপিত হয়।

এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার ভক্ত বৃন্দের আগমন ঘটে। দুই শতাব্দির স্মৃতিবাহী ফকির চাঁদ গোসাই আশ্রম দেশ-বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের কোলাহলে মুখরিত আশ্রমটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। আশ্রমটি ৩২ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দুই দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।