ঢাকা ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রামেক হাসপাতালে নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন, ভোগান্তিতে রোগীরা

এম এম মামুন, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
  • আপডেট সময় : ০২:২৯:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ৫২ বার পড়া হয়েছে

collected

চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রামেক হাসপাতালে নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন, ভোগান্তিতে রোগীরা

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মিলছে না সরকারিভাবে দেওয়া জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন।এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। বিনামূল্যে দেওয়া এই ভ্যাকসিন নিতে এসে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। আবার অনেকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় এক ডোজ ভ্যাকসিনের ভয়েল কিনে অন্য রোগীরে সাথে ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। এই সুযোগে ফায়দা লুটছেন ওষুধ বিক্রেতারা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটি থেকে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন রোগীদের সরবারহ করা হয়ে থাকে। গত ২৯ ডিসেম্বর চাহিদার বিপরীতে ভ্যাকসিন এসেছে মাত্র ২০০ ভায়াল। গত ৩ জানুয়ারি থেকে পুরোদমে বন্ধ হয়ে যায় ভ্যাকসিন সরবারহ। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ভ্যাকসিনের চাহিদা থাকে ২৮০ থেকে ৩০০টির মতো। সেই হিসেবে প্রতি মাসে প্রায় ৯ হাজার পিস ভ্যাকসিনের প্রয়োজন রোগীদের জন্য।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতে নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এসে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই রোগীদের অতিরিক্ত দামে বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যাকসিন বাইরের ফার্মেসি গুলো থেকে কিনে নিতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, দ্রুত যেন জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন হাসপাতালগুলো বিনামূল্যে রোগীদের সরবারহ করা হয়।

গত শনিবার নগরীর মেহেরচন্ডি এলাকায় বাড়ির পাশে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হন রাকিবুল আলী (১৮)। সোমবার রামেক হাসপাতালে আসেন জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন নিতে। কিন্তু সরবারহ না থাকায় তাকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন অতিরিক্ত দামে বাহির থেকে কিনে নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এলাকার অনেকেই বলেছি জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন হাসপাতালে বিনামূল্যে দেয়। কিন্তু এসে শুনলাম ভ্যাকসিন সরবারহ নেই। তারপর তিনি ভ্যাকসিন ফার্মেসী থেকে কিনেন।

সাজেদা বেগম নামের এক মহিলা তার মেয়ে সাইলা খাতুনকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন দিতে নিয়ে আসেন রামের হাসপাতালে। এসে শুনেন ভ্যাকসিন নেই। তিনি বলেন, গত মাসে নাতনিকে নিয়ে এসেছিলাম জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন দিতে। তখন ভ্যাকসিন কিনতে হয়নি। কিন্তু এবার এসে শুনছি হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেই। বাইরে থেকে কিনে নিতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ, স্বামী রিকশা চালায়। আমাদের পক্ষে ৫০০-৬০০ টাকা খরচ করে একবার ভ্যাকসিন দেওয়া কি সম্ভব। একজন রোগীকে চারবার ভ্যাকসিন দিতে হয়। আমাদের পক্ষ এতো টাকা খরচ করে ভ্যাকসিন দেওয়া কষ্ট দায়ক।

রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার সাদিকুল ইসলাম (১০) রামেক হাসপাতালে বাবা রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে এসেছে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন নিতে। তার বাবা রাকিবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন সরবারহ বন্ধ। এরজন্য তাকে বাইরে ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসনি কিনে আনতে হয়েছে। আক্রান্ত চারজনের টাকা এক সাথে করে ভ্যাকসিন কিনে তারপর ছেলেকে দিয়েছি।

জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, জানুয়ারি থেকে পুরোদমে বন্ধ হয়ে গেছে ভ্যাকসিন সরবারহ। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ভ্যাকসিনের চাহিদা ২৮০ থেকে ৩০০টির মতো। সেই হিসেবে প্রতি মাসে প্রায় ৯ হাজার পিস ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হয়। আপাতত ভ্যাকসিন সরবারহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। আমরা অফিসিয়ালি চিঠি পাঠিয়েছি। হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিনের সমস্যা সমাধান হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রামেক হাসপাতালে নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন, ভোগান্তিতে রোগীরা

আপডেট সময় : ০২:২৯:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

রামেক হাসপাতালে নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন, ভোগান্তিতে রোগীরা

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মিলছে না সরকারিভাবে দেওয়া জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন।এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। বিনামূল্যে দেওয়া এই ভ্যাকসিন নিতে এসে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। আবার অনেকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় এক ডোজ ভ্যাকসিনের ভয়েল কিনে অন্য রোগীরে সাথে ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। এই সুযোগে ফায়দা লুটছেন ওষুধ বিক্রেতারা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটি থেকে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন রোগীদের সরবারহ করা হয়ে থাকে। গত ২৯ ডিসেম্বর চাহিদার বিপরীতে ভ্যাকসিন এসেছে মাত্র ২০০ ভায়াল। গত ৩ জানুয়ারি থেকে পুরোদমে বন্ধ হয়ে যায় ভ্যাকসিন সরবারহ। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ভ্যাকসিনের চাহিদা থাকে ২৮০ থেকে ৩০০টির মতো। সেই হিসেবে প্রতি মাসে প্রায় ৯ হাজার পিস ভ্যাকসিনের প্রয়োজন রোগীদের জন্য।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতে নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এসে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই রোগীদের অতিরিক্ত দামে বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যাকসিন বাইরের ফার্মেসি গুলো থেকে কিনে নিতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, দ্রুত যেন জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন হাসপাতালগুলো বিনামূল্যে রোগীদের সরবারহ করা হয়।

গত শনিবার নগরীর মেহেরচন্ডি এলাকায় বাড়ির পাশে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হন রাকিবুল আলী (১৮)। সোমবার রামেক হাসপাতালে আসেন জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন নিতে। কিন্তু সরবারহ না থাকায় তাকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন অতিরিক্ত দামে বাহির থেকে কিনে নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এলাকার অনেকেই বলেছি জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন হাসপাতালে বিনামূল্যে দেয়। কিন্তু এসে শুনলাম ভ্যাকসিন সরবারহ নেই। তারপর তিনি ভ্যাকসিন ফার্মেসী থেকে কিনেন।

সাজেদা বেগম নামের এক মহিলা তার মেয়ে সাইলা খাতুনকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন দিতে নিয়ে আসেন রামের হাসপাতালে। এসে শুনেন ভ্যাকসিন নেই। তিনি বলেন, গত মাসে নাতনিকে নিয়ে এসেছিলাম জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন দিতে। তখন ভ্যাকসিন কিনতে হয়নি। কিন্তু এবার এসে শুনছি হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেই। বাইরে থেকে কিনে নিতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ, স্বামী রিকশা চালায়। আমাদের পক্ষে ৫০০-৬০০ টাকা খরচ করে একবার ভ্যাকসিন দেওয়া কি সম্ভব। একজন রোগীকে চারবার ভ্যাকসিন দিতে হয়। আমাদের পক্ষ এতো টাকা খরচ করে ভ্যাকসিন দেওয়া কষ্ট দায়ক।

রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার সাদিকুল ইসলাম (১০) রামেক হাসপাতালে বাবা রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে এসেছে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন নিতে। তার বাবা রাকিবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন সরবারহ বন্ধ। এরজন্য তাকে বাইরে ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসনি কিনে আনতে হয়েছে। আক্রান্ত চারজনের টাকা এক সাথে করে ভ্যাকসিন কিনে তারপর ছেলেকে দিয়েছি।

জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, জানুয়ারি থেকে পুরোদমে বন্ধ হয়ে গেছে ভ্যাকসিন সরবারহ। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ভ্যাকসিনের চাহিদা ২৮০ থেকে ৩০০টির মতো। সেই হিসেবে প্রতি মাসে প্রায় ৯ হাজার পিস ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হয়। আপাতত ভ্যাকসিন সরবারহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। আমরা অফিসিয়ালি চিঠি পাঠিয়েছি। হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিনের সমস্যা সমাধান হবে।