ঢাকা ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা ফাঁকা বছরজুড়ে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৩০:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০২২ ৩৮ বার পড়া হয়েছে
চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা ফাঁকা বছরজুড়ে

এম এম মামুন, রাজশাহী:
রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা ফাঁকা বছরজুড়ে। শফিকুল ইসলাম (৪০) নামের রংপুরের এক কৃষকের যক্ষ্মা রোগ ধরা পড়েছে চার দিন আগে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয়েছে রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে। এখানে তিনি ভর্তি হয়েছেন। তবে সাথে কেউ নেই। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যক্ষ্মা রোগ সারতে দুই থেকে চার মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই সময়টা তাঁকে হাসপাতালেই থাকতে হবে।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চাপাবাড়ি গ্রামের এই রোগী বুধবার সকালে জানালেন, বাড়িতে স্ত্রী আর ছোট সন্তান। তাই একাই তিনি হাসপাতালে। সংসার চালানোর তাগিদে এতদিন হাসপাতালে থাকতে পারবেন না। হয়ত দ্রুতই চলে যাবেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা বলছেন, যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় লম্বা সময় ভর্তি থাকতে হয়। তাই রোগীরা থাকতে চান না। ফলে বছরজুড়েই হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা ফাঁকা পড়ে থাকে। জোর করে কোন রোগীকে আটকে রাখা যায় না। নানা অজুহাত দেখিয়ে তাঁরা হাসপাতাল থেকে চলে যান। কেউ কেউ লাপাত্তা হন না জানিয়েই।
বুধবার সকালে ব্যাগপত্র নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছিলেন সিরাজগঞ্জের জামিরা গ্রামের সাধনা বেগম। যক্ষ্মায় আক্রান্ত মধ্যবয়সী এই নারী রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২১ দিন ধরে। অসুখ এখনও সারেনি। তবে বুধবার সকালে জানালেন, বাড়িতে তাঁর বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি ছাড়পত্র নিয়ে চলে যান।
রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে রাজশাহী ছাড়াও রংপুর ও খুলনা বিভাগের রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। যক্ষ্মার চিকিৎসায় বিশেষায়িত এই হাসপাতালটি ১৫০ শয্যার। তবে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী থাকেন এখানে। বাকি শয্যাগুলো পড়ে থাকে ফাঁকা। অথচ এখানে চিকিৎসার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা আছে। পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য আছে জিন-এক্সপার্ট মেশিন, ডিজিটাল এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন। প্যাথলজির সব পরীক্ষারও ব্যবস্থা আছে। বিনামূল্যেই এসব পরীক্ষা করা হয় রোগীদের।
হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, গতবছর হাসপাতালের প্যাথলজিতে ৬ হাজার ২৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ৫২১ জনের এমটিবি (সাধারণ যক্ষ্মা) শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৩০ জনের আরআর টিবি শনাক্ত হয়েছে। আরআর টিবি রোগীদের শরীরে আর এন্টিবডি কাজ করে না। বেশিরভাগ রোগীই বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য এসে পরীক্ষা করিয়েছেন। ভর্তি থাকা রোগীর পরীক্ষা কম।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে ২০২০ সালে ২৪ হাজার ৭৫৭ জন, ২০২১ সালে ১৮ হাজার ৭৬৫ জন এবং চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ৩ হাজার ৯১৮ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। অথচ ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা খুবই কম। ২০২০ সালে এখানে ৬৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৬১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন ১১ জন। ২০২১ সালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬৭৪ জন। ওই বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬৯৮ জন। আর মারা গেছেন ২৮ জন। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে মারা গেছেন ছয়জন। ভর্তি হয়েছেন ১৪১ জন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ১১২ জন। বুধবার হাসপাতালটিতে ৬৫ নারী-পুরুষ রোগী ভর্তি ছিলেন।
একমাস ধরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঠুটাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক (৭৫) রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। নুরুল জানান, ছয়মাস তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ খেয়েছেন। পরের ছয়মাস পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাও যক্ষ্মা ভাল হয়নি বলে রাজশাহী এসেছেন। নুরুল হকের সঙ্গে থাকছেন তার ছেলে মাসুদুর রহমান। যতদিন যক্ষ্মা ভাল না হচ্ছে, ততদিন তারা বাবা-ছেলে বাড়ি ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন রোগী নুরুল হক।
তবে দীর্ঘ সময়ের চিকিৎসার জন্য অনেকেই হাসপাতালে থাকেন না। বিষয়টি স্বীকার করেছেন হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, যক্ষ্মা একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। দুই থেকে চার মাস এমনকি ছয়মাস পর্যন্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। আত্মীয়-স্বজনের পক্ষেও দূর থেকে এসে হাসপাতালে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে অনেক রোগীই ভর্তি থাকতে চায় না। কেউ কেউ পালিয়ে যায় ছাড়পত্র না নিয়েই। ঠিকানা অনুযায়ী আমরা যোগাযোগ করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, হাসপাতালে যে সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়, তার চেয়েও বেশি রোগী গ্রামে-গঞ্জে লুকায়িত অবস্থায় আছে। স্বাস্থ্যবিভাগ তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে। বেসরকারি কয়েকটি সংস্থাও কাজ করছে।
রাজশাহী বিভাগীয় সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. নাজমা আক্তার বলেন, রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স এবং ওষুধ আছে। উপজেলা পর্যায়েও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা হচ্ছে। এখন আর মাইক্রোস্কোপ দিয়ে যক্ষ্মার জীবাণু পরীক্ষা করতে হচ্ছে না। জিন-এক্সপার্ট মেশিনে দ্রুত কাজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গ্রাম থেকে লুকায়িত রোগী খুঁজে এনে ভর্তি করানোটাই একটা চ্যালেঞ্জ। করোনার কারণে এই কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। এখন আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা ফাঁকা বছরজুড়ে

আপডেট সময় : ০৪:৩০:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০২২

রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা ফাঁকা বছরজুড়ে

এম এম মামুন, রাজশাহী:
রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা ফাঁকা বছরজুড়ে। শফিকুল ইসলাম (৪০) নামের রংপুরের এক কৃষকের যক্ষ্মা রোগ ধরা পড়েছে চার দিন আগে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয়েছে রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে। এখানে তিনি ভর্তি হয়েছেন। তবে সাথে কেউ নেই। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যক্ষ্মা রোগ সারতে দুই থেকে চার মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই সময়টা তাঁকে হাসপাতালেই থাকতে হবে।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চাপাবাড়ি গ্রামের এই রোগী বুধবার সকালে জানালেন, বাড়িতে স্ত্রী আর ছোট সন্তান। তাই একাই তিনি হাসপাতালে। সংসার চালানোর তাগিদে এতদিন হাসপাতালে থাকতে পারবেন না। হয়ত দ্রুতই চলে যাবেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা বলছেন, যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় লম্বা সময় ভর্তি থাকতে হয়। তাই রোগীরা থাকতে চান না। ফলে বছরজুড়েই হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা ফাঁকা পড়ে থাকে। জোর করে কোন রোগীকে আটকে রাখা যায় না। নানা অজুহাত দেখিয়ে তাঁরা হাসপাতাল থেকে চলে যান। কেউ কেউ লাপাত্তা হন না জানিয়েই।
বুধবার সকালে ব্যাগপত্র নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছিলেন সিরাজগঞ্জের জামিরা গ্রামের সাধনা বেগম। যক্ষ্মায় আক্রান্ত মধ্যবয়সী এই নারী রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২১ দিন ধরে। অসুখ এখনও সারেনি। তবে বুধবার সকালে জানালেন, বাড়িতে তাঁর বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি ছাড়পত্র নিয়ে চলে যান।
রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে রাজশাহী ছাড়াও রংপুর ও খুলনা বিভাগের রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। যক্ষ্মার চিকিৎসায় বিশেষায়িত এই হাসপাতালটি ১৫০ শয্যার। তবে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী থাকেন এখানে। বাকি শয্যাগুলো পড়ে থাকে ফাঁকা। অথচ এখানে চিকিৎসার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা আছে। পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য আছে জিন-এক্সপার্ট মেশিন, ডিজিটাল এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন। প্যাথলজির সব পরীক্ষারও ব্যবস্থা আছে। বিনামূল্যেই এসব পরীক্ষা করা হয় রোগীদের।
হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, গতবছর হাসপাতালের প্যাথলজিতে ৬ হাজার ২৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ৫২১ জনের এমটিবি (সাধারণ যক্ষ্মা) শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৩০ জনের আরআর টিবি শনাক্ত হয়েছে। আরআর টিবি রোগীদের শরীরে আর এন্টিবডি কাজ করে না। বেশিরভাগ রোগীই বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য এসে পরীক্ষা করিয়েছেন। ভর্তি থাকা রোগীর পরীক্ষা কম।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে ২০২০ সালে ২৪ হাজার ৭৫৭ জন, ২০২১ সালে ১৮ হাজার ৭৬৫ জন এবং চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ৩ হাজার ৯১৮ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। অথচ ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা খুবই কম। ২০২০ সালে এখানে ৬৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৬১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন ১১ জন। ২০২১ সালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬৭৪ জন। ওই বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬৯৮ জন। আর মারা গেছেন ২৮ জন। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে মারা গেছেন ছয়জন। ভর্তি হয়েছেন ১৪১ জন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ১১২ জন। বুধবার হাসপাতালটিতে ৬৫ নারী-পুরুষ রোগী ভর্তি ছিলেন।
একমাস ধরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঠুটাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক (৭৫) রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। নুরুল জানান, ছয়মাস তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ খেয়েছেন। পরের ছয়মাস পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাও যক্ষ্মা ভাল হয়নি বলে রাজশাহী এসেছেন। নুরুল হকের সঙ্গে থাকছেন তার ছেলে মাসুদুর রহমান। যতদিন যক্ষ্মা ভাল না হচ্ছে, ততদিন তারা বাবা-ছেলে বাড়ি ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন রোগী নুরুল হক।
তবে দীর্ঘ সময়ের চিকিৎসার জন্য অনেকেই হাসপাতালে থাকেন না। বিষয়টি স্বীকার করেছেন হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, যক্ষ্মা একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। দুই থেকে চার মাস এমনকি ছয়মাস পর্যন্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। আত্মীয়-স্বজনের পক্ষেও দূর থেকে এসে হাসপাতালে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে অনেক রোগীই ভর্তি থাকতে চায় না। কেউ কেউ পালিয়ে যায় ছাড়পত্র না নিয়েই। ঠিকানা অনুযায়ী আমরা যোগাযোগ করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, হাসপাতালে যে সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়, তার চেয়েও বেশি রোগী গ্রামে-গঞ্জে লুকায়িত অবস্থায় আছে। স্বাস্থ্যবিভাগ তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে। বেসরকারি কয়েকটি সংস্থাও কাজ করছে।
রাজশাহী বিভাগীয় সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. নাজমা আক্তার বলেন, রাজশাহী বক্ষব্যাধী হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স এবং ওষুধ আছে। উপজেলা পর্যায়েও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা হচ্ছে। এখন আর মাইক্রোস্কোপ দিয়ে যক্ষ্মার জীবাণু পরীক্ষা করতে হচ্ছে না। জিন-এক্সপার্ট মেশিনে দ্রুত কাজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গ্রাম থেকে লুকায়িত রোগী খুঁজে এনে ভর্তি করানোটাই একটা চ্যালেঞ্জ। করোনার কারণে এই কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। এখন আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে।