রাজশাহী নগরীতে রথের মেলায় চাঁদাবাজির চেষ্টা, প্রতিরোধে বিএনপির মাইকিং

- আপডেট সময় : ০৭:২৮:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ ১০৭ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহী নগরীতে রথের মেলায় চাঁদাবাজির চেষ্টা, প্রতিরোধে বিএনপির মাইকিং
রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে রথের মেলা। কিন্তু এবার এ মেলাকে ঘিরে স্থানীয় সগরপাড়া এলাকার কিছু যুবক মেলায় ব্যাপক চাঁদাবাজির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। মেলায় চাঁদাবাজি প্রতিরোধে বিএনপির পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মেলা এলাকায় মাইকিং করে কাউকে এক টাকাও চাঁদা না দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। এর পর থেকে মেলা এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। ব্যবসায়ীরাও গত শনিবার থেকে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টির মোড় থেকে সাগরপাড়া পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে ফুটপাত ও রাস্তার ওপরে প্রায় তিন শতাধিক দোকানপাট নিয়ে ঐতিহ্যবাহী রথ মেলা বসেছে। মেলায় আসা ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রায় সকলেরই বাড়ি রাজশাহী জেলার বাইরের জেলায়। কেউ এসেছেন নওগাঁ থেকে, কেউ খুলনা, কেউ ঢাকা, কেউ সিলেট বা কেউ বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তাঁরা কেউ মিষ্টির দোকান, কেউ ফার্নিচারের দোকান, কেউ কাঠের তৈরী অক্ষরের দোকান, কেউ ব্যাঙ গাড়ির দোকান, কেউ বা শিশুদের খেলনাসহ নানা জিনিসপত্রের দোকান খুলে বসেছেন।
মেলায় আসা একাধিক দোকান মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয় বিএনপি, যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মী পরিচয়ে ২৫-৩০ জন যুবকের একটি দল মেলা শুরুর দিন গত শুক্রবারেই দোকানে দোকানে গিয়ে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলায় অনেক ব্যবসায়ী শুরুতেই দোকানও বসানোর সাহস করছিলেন না।
কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে নগর বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। এতে কিছুটা কাজ হয়। মহানগর বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা স্থানীয় নেতাদের বিষয়টি অবগত করলে তাঁরা তাৎক্ষণিক মেলা এলাকায় কাউকে চাঁদা দিতে নিষেধ করে শুক্রবার বিকেলেই মাইকিং শুরু করেন। এরপর ভয়ে আর কেউ ব্যবসায়ীদের কাছে সোমবার পর্যন্ত চাঁদা নিতে যাননি।
খুলনা থেকে আসা মাসুদ রানা নামের একজন কাঠের অক্ষর ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি প্রায় ৫ বছর ধরে এ মেলায় আসছি। কখনো এর আগে ৫০-১০০ টাকার বেশি চাঁদা দেওয়া লাগেনি। কিন্তু এবার শুরুতেই কয়েকজন এসেছিলেন চাঁদার দাবি নিয়ে। পরে চাঁদা না দিতে বিএনপির নেতাদের পক্ষ থেকে মাইকিং হওয়ার পরে দেখছি আর কেউ আসছে না।’
আরেক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত শুক্রবার শুরুর দিনেই আমার নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। আমি দিতে আপত্তি জানিয়েছি। তবে তার পরে আর কেউ আসেনি।’
কালাম নামের শিশুদের খেলনা ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার কাছেও মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়েছিলো। তবে শুক্রবার বিকেল থেকে আর কেউ আসেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ মেলায় আমরা অনেক ব্যবসায়ী বছরের পর বছর ধরে দুই টাকা লাভের মুখ দেখতে স্ত্রী-সন্তান ফেলে দূর-দূরান্ত থেকে আসি এখানে রথ মেলায় ব্যবসা করতে। কিন্তু ৫-১০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হলে; লাভ তো দূরের কথা লোকসান নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। তবে আশার কথা এখন কোনো বাধা ছাড়ায় ব্যবসা করছি।’
সিলেট থেকে আসা আরেক ব্যবসায়ী আরমান আলী বলছিলেন, ‘যখন এতো টাকা চাঁদা চাইছিল, তখন ভেবেছিলাম দোকানই মেলাবো না। পরে দেখি আর কেউ আসে না। এখন আরামে ব্যবসা করছি। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়। তবে জুয়েল হোসেনসহ আরও কয়েকজ ব্যবসায়ী দাবি করেন, তাঁদের কাছে কেউ সোমবার পর্যন্ত চাঁদা চাইতে কখনোই যায়নি।
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সূত্র মতে, রথযাত্রাকে ঘিরে বহুর বছর ধরেই রাজশাহী শহরে মেলা বসে। একসময় রাজশাহী নগরীর সপুার ছয়ঘাটি এলাকায় এ রথমেলা বসত। ওই সময় মেলাকে ঘিরে এক সময় মাটির তৈজষপত্র, পুতুল, বেহেলা, শোলার তৈরী কুমির, হাতি, ঘোড়া, তীর-ধনুকসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী নানা জিনিসপত্র বিক্রি হতো। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে রথমেলা চলে যায় নগরীর সাগরপাড়া এলাকায়। এরপর থেকে যুগ যুগ ধরে এখানেই রথমেলা বসে। কালের আবর্তে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় মেলায় একমাত্র ব্যাঙগাড়ী ছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাকি সব জিনিসপত্রই এ মেলা থেকে হারিয়ে গেছে। কিন্তু মেলার পরিধি বেড়েছে এখন আরও ব্যাপক হারে।
রাজশাহীর রথবাড়ি পরিবারের সদস্য বিমল সরকার বলেন, এ মেলায় আগে দুই-পঁঞ্চাশ টাকা স্থানীয় ছেলে-পেলে নিত তারা পাহার দিত বলে। কিন্তু কখনোই সেটি ১০০ টাকার ওপরে যায়নি। এবার নাকি ১০-২৯ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। বিষয়টি হবে খুবই দুঃখজনক। এখানে আমাদের কিছু করার নাই। পুলিশ প্রশাসন আছে। তারা দেখুক বিষয়টি।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, রথমেলাকে ঘিরে যেন কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছি আমরা। স্থানীয় নেতাদের মাইকিং করে সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বলা হয়েছে। তাই সেটি করেছেও। ফলে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিব।