রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে সড়কে আলু ফেলে কৃষকদের বিক্ষোভ, ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম!

- আপডেট সময় : ০১:৪৮:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২৪৬ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে সড়কে আলু ফেলে কৃষকদের বিক্ষোভ, ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম!
রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন কৃষকেরা। রোববার (২ ফেব্রুয়ারী) বেলা ১১টার সময় রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে তারা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে মোহনপুর উপজেলা সদর এলাকায় আলু ফেলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। অনেক আলু চাষী শুয়ে পড়েন মহাসড়কে। ক্ষুব্ধ কৃষকেরা জানান, প্রতি কেজি আলু সংক্ষণের জন্য আগে হিমাগারগুলোকে ৪ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এবার তা বৃদ্ধি করে ৮ টাকা করা হয়েছে। ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই তারা দ্রুত আগের ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানান। আগামী তিনদিনের মধ্যে এই না মানা হলে আগামীতে তারা কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি মহাসড়ক অবরোধের হুমকি দেন। চাষীদের এই কর্মসূচির সঙ্গে স্থানীয় জামাত ইসলামী ও বিএনপি একাত্মতা ঘোষণা করেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মোহনপুর উপজেলা জামায়াতের আমির জিএম আব্দুল আউয়াল, প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শামিমুল ইসলাম এবং প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আর রশিদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মোহনপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সামাদ, তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান। সমাবেশে প্রধান অতিথি বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে এরই মধ্যে কৃষকদের রাস্তায় নামতে হয়েছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। প্রশাসন মাত্র কয়েকজন কোল্ড স্টোরেজদের মালিকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে চুপ করে আছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন কয়েকটি কোল্ডস্টোরেজ আগে না সারা দেশের কৃষক আগে। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতর হয়েছে কিন্তু এখনো মনে হচ্ছে তাদের দোসররা এখনো প্রশাসনে রয়ে গেছে ।তারাই কোল্ডস্টোরেজের মালিকের স্বার্থ সংরক্ষণ করছে। কৃষকদের দাবি খুব সামান্য দাবি। এটা তো সবার কথা, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আজকে আমরা এই সমাবেশ থেকে উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, আমরা রাজশাহী থেকে এত পরিমাণ আলো দিব, আপনারা ভারতে রপ্তানি করুন। দাবি মানার জন্য আপনারা ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। আমি বলব, এই সামান্য দাবি মানার জন্য ৭২ ঘণ্টার প্রয়োজন পড়ে না শুধু আগের ভাড়া কার্যকর করলেই মিটে যায়। আমি আজকে প্রশাসনের মাধ্যমে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই দাবি মানার অনুরোধ জানাচ্ছি। সমাবেশে মোহনপুরসহ তানোর ও পবা উপজেলার সহস্রাধিক কৃষক অংশ নেন।
তানোরের আলু চাষি লুৎফর রহমান তার বক্তব্যে মালিকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা কৃষক প্রয়োজনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিব তবু আপনাদের অন্যায় দাবি মেনে নেব না। কোন বিশৃঙ্খলা হলে এর দায়-দায়িত্ব আপনাদের বহন করতে হবে। আপনারা মনে করবেন না যে আপনারা টাকা দিয়ে একটি পক্ষকে কিনে নিবেন আর তার বলির শিকার হবে এদেশের ৮০ ভাগ গরীব কৃষক। আপনাদের টাকা আপনাদের একাউন্টে রাখুন ।ওই টাকার দিকে আমাদের নজর নাই, কিন্তু আপনারা কেন কোটিপতি হয়ে এই গরিব চাষির কষ্টের টাকার দিকে ভিক্ষুকের মতো হাত বাড়াচ্ছেন এর জবাব আপনাদের দিতে হবে ইনশাল্লাহ।
আলু চাষী ইমরান আলী বলেন, আমরা এতদিন হিমাকারি ৯০/৯৫ কেজি পর্যন্ত এক বস্তায় আলু রেখেছি। আমাদের কাছ থেকে যারা ৩৪০ টাকা করে নিয়েছে। তাদের নির্দেশক্রমেই আমরা আবার এক বস্তায় ৭০ কেজি আলু রাখি। আমরা ভাড়া দিই ৩৪০ টাকা বস্তা হিসেবে। সেখান থেকে আবার যে যেরকম আলু রাখি, সেই পরিমাণ হিসেবে আমাদের কমিশন আকারে কিছু টাকা ফেরত দেয। এর আগে পেইড বুকিং এর সময় আমরা ১৭০ টাকা দিতাম । তাদের আইন অনুযায়ী কেউ ২১০ কেউ ২২০ টাকা দিয়েছি। তারা তো তখন বলে নাই যে এবার বস্তায় ৫০ কেজি বেশি আলু রাখা যাবে না আর আলুর কেজি পড়বে ৮ টাকা করে। হঠাৎ করে ওরা বলছে যে এক বস্তায় ৫০ কেজির বেশি আলু রাখা যাবে না ।আর কেজিপ্রতি আলুর ভাড়া পড়বে ৮ টাকা। তারা ব্যবসায়ীদের সাথে কোন কথা বলেনি, আমাদের চাষীদের সাথে কোনো কথা বলেনি, কৃষি মন্ত্রণালয়কে জানাইনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানাইনি । নিজেরাই হঠাৎ করে লোহার মই চাপিয়ে দেওয়ার মতো আমাদের ওপর এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে। এবার আমরা একইভাবে আলুর পেইড বুকিং দিয়েছি। আলু চাষ করেছি। বস তা কিনেছি। এবার আলু একটু বেশি হচ্ছে দেখে তারা এই হঠকারী সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এখান থেকে আমাদের বের হওয়ার একটাই পথ আন্দোলন ।আমরা যে এখনো মৌখিকভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এটাই তাদের ভাগ্য। ওরা যে আমাদের কৃষকদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করেছে তার প্রতিবাদে আমরা যে নিষ্ঠুর হইনি এটা আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। আমাদের এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা পিছুপা হবো না বাড়িতে ফিরে যাব না।
মোহনপুরের আলু চাষী ইউনুস আলী বলেন, ‘আমরা কৃষক প্রয়োজনে বুকে তাজা রক্ত ঢেলে দিব তবু আপনাদের অন্যায় দাবি মেনে নেব না। কোন বিশৃঙ্খলা হলে এর দায়-দায়িত্ব আপনাদের বহন করতে হবে। আপনারা মনে করেন না যে আপনারা টাকা দিয়ে একটি পক্ষকে কিনে নিবেন আর তার বলির শিকার হবে এদেশের ৮০ ভাগ গরীব কৃষক । আপনাদের টাকা আপনাদের একাউন্টে রাখুন ওই টাকার দিকে আমাদের নজর নাই কিন্তু আপনারা কেন কোটিপতি হয়ে এই গরিব চাষীর কষ্টের টাকার দিকে হাত বাড়া ভিক্ষুকের মতো হাত বাড়াচ্ছেন এর জবাব আপনাদের দিতে হবে ইনশাল্লাহ। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর তানোর উপজেলার কৃষকেরা একই দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। ভাড়া বৃদ্ধির তানোরের কয়েকটি হিমাগারের সামনেও বিক্ষোভ হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান সেদিন বলেন, ‘গত বছর বস্তা হিসেবে হিমাগারে আলু নেওয়া হয়েছে। ৫০ কেজির বস্তায় ৩৪০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এর ফলে কেজি প্রতি সংরক্ষণে খরচ পড়ে প্রায় সাত টাকা। কিন্তু আলুর মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা বস্তায় ৭০-৮০ কেজি পর্যন্ত আলু ঢুকিয়ে দেন। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবার আলুর কেজি দরে ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের সুদ হারসহ সব খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ কোল্ড ষ্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন চলতি মৌসুমে কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করেছে সর্বোচ্চ আট টাকা। এরপরেও কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত রয়েছে, এ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা এর চেয়েও কম ভাড়ায় তারা নিজস্ব সিদ্ধান্তে আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন।