রাজশাহীতে রাত জেগে চিড়িয়াখানার হরিণ পাহারা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
- আপডেট সময় : ০৩:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪ ৭১ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীতে রাত জেগে চিড়িয়াখানার হরিণ পাহারা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
দ্বিতীয় দফায় দেশ স্বাধীন করে সারা বিশ্বে প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ বাহিনীর অনুপস্থিতিতে বাহিনীটির শূন্যতা পূরণে দেশব্যাপী কাজ করে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন তারা। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম, রাত জেগে সরকারি স্থাপনা ও সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় পাহারা দেওয়ার বিষয়গুলো দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আর রাজশাহীতে চিড়িয়াখানার দেড় শতাধিক হরিণ রক্ষায় রাত জেগে শিক্ষার্থীরা অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়াচ্ছেন।
গত বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেছে, অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী চিড়িয়াখানার ১৪০টি হরিণ পাহারা দিতে এর চারপাশে অবস্থান নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সেখানে রাত জেগে টহলে ছিল সেনাবাহিনীর সদস্যরাও।
রাত জেগে হরিণ পাহারা দেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। তাদেরই একজন আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা দেশের তরুণ প্রজন্ম স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছি। এই পতন ঘটাতে গিয়ে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী শরীরের তাজা রক্ত জমিনে ঢেলে দিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন। নির্বিচারে পুলিশ গুলি করেছে অথচ দেশ স্বাধীনের পর তারাই আবার মাঠে নেই।
এই সুযোগে কিছু দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস ও লুটপাট করতে মাঠে নেমেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা জুতা সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ তথা রাষ্ট্রের এমন কোনো কাজ নেই যা আমরা পারি না। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আমরা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি সাধনে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই মাঠে আছি। সেই সূত্র ধরে রাত জেগে চিড়াখানার হরিণ পাহারা দিচ্ছি।
আরেক শিক্ষার্থী লিমা বলেন, দেশ স্বাধীন। কিন্তু আমাদের এই স্বাধীনতাকে বিতর্কিত করতে কিছু দুষ্কৃতকারী ঢুকে গেছে। তারা নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বাড়িঘর লুটসহ নানা অপকর্ম করছে। আমরা সেগুলো প্রতিহত করতে শত শত শিক্ষার্থী মাঠে আছি। চূড়ান্ত বিজয় তথা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে যা যা করা দরকার আমরা করে যাব।
জানা গেছে, রাজশাহীতে দিন-দুপুরে মানুষের বাড়িতে ঢুকে মালামাল লুট হচ্ছে। গৃহপালিত পশু তথা গরু-ছাগল দিন-দুপুরে দুষ্কৃতকারীরা গায়ের জোর দেখিয়ে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী ও সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছে। তারপরও সুযোগ বুঝে দুর্বৃত্তরা এসব অপকর্ম করেই যাচ্ছে।
বুধবার রাতে শালবাগান বাজার নির্মাণ কাজের প্রায় ১ হাজার রড চুরি করেছিল রাহুল, পাপ্পুসহ কয়েকজন দুর্বৃত্ত। পরে রাতেই শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী সেগুলো উদ্ধার করে শালবাগান বাজার মালিক সমিতির কাছে হস্তান্তর করে। এ ছাড়া সচেতন এলাকাবাসী নগরীর চন্দ্রিমা থানা থেকে ছিনতাই করা দুটি মোটরসাইকেলও থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
এ বিষয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীসহ আমরা এলাকাবাসী অতন্দ্র প্রহরী হিসেবেই রাত-দিন রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাহারা দিচ্ছি। গত রাতে প্রায় এক হাজার কেজি রড দুর্বৃত্তরা শালবাগান বাজার থেকে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে আমরা সেগুলো উদ্ধার করে সংশ্লিষ্টদের জমা দিয়েছি।
এ ছাড়া চন্দ্রিমা থানা পুলিশের দুটি মোটরাসাইকেল থানা এলাকা থেকে দুষ্কৃতকারীরা নিয়ে যাচ্ছিল। পরে সেগুলোও উদ্ধার করে জমা দিয়েছি।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ বলেন, পুলিশ প্রশাসন মাঠে নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণসহ সরকারি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ যেভাবে পাহারা দিচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।