ঢাকা ০৮:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাণীনগরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তিন মাদকসেবির কারাদণ্ড নাটোরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ জেলা শাখার সমাবেশ মান্দায় পরকীয়ার জেরে বিজিবি সদস্যকে আটক করে গণপিটুনি পঞ্চগড় উত্তরবঙ্গের অন্যতম সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা- টি ট্যুরিজম চেয়ারম্যান পঞ্চগড়ে বিএডিসির নিকট আলুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চাষীদের মানববন্ধন রাজশাহীতে ট্রেনের ধাক্কায় ৭৮ বছরের বৃদ্ধার মৃত্যু শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে সমলয় পদ্ধতিতে বোর ধান কর্তনের উদ্বোধন রাজশাহীতে ওসিকে বরখাস্তসহ ৩ দফা দাবিতে আইনজীবীদের মানববন্ধন আটোয়ারী উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন, সভাপতি জাহেদ, সম্পাদক দুলাল পঞ্চগড়ে মরিচের বাম্পার ফলন, লাল রঙে ভরে উঠেছে গ্রামের সুবজ বনানী, দামে না পেয়ে হতাশ কৃষক

রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে প্রধান শিক্ষককে কক্ষে তালা, গাছে ঝুলছে চেয়ার

এম এম মামুন:
  • আপডেট সময় : ১২:১৭:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫ ১১৪ বার পড়া হয়েছে

collected

চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে প্রধান শিক্ষককে কক্ষে তালা, গাছে ঝুলছে চেয়ার

স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মারধর করে কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের চেয়ার গাছে ঝুলতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালাবদ্ধ এবং তাঁর ব্যবহৃত চেয়ারটি বিদ্যালয়ের সামনের একটি গাছে ঝুলছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে গত তিন দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে চারটি তালা ঝুলছে। প্রধান শিক্ষক মোসা. মঞ্জু মনোয়ারা অভিযোগ করে বলেন, তাঁকে মারধর করা হয়েছে এবং কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে চেয়ার বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার পর চলতি বছরের ৩ মার্চ নতুন সভাপতি হন বিএনপি-সমর্থিত মামুন-অর-রশিদ। তিনি নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে।

অন্যদিকে, নওহাটা পৌর বিএনপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা, যিনি পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ, তিনি এ কমিটিকে মেনে নেননি। তিনিও সভাপতি পদের জন্য আগ্রহী ছিলেন।

গত মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়েছিল। ওই সভায় পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে সভা শুরুর আগেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি, গালিগালাজ এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তখন প্রধান শিক্ষককে তার অফিস কক্ষ থেকে বের করে চারটি তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর ব্যবহৃত চেয়ার বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার দেখা যায়, সেই চেয়ারটি কে বা কারা গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রথমে চেয়ারটি ডোবায় ফেলা হয়েছিল। পরে তা তুলে এনে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

ঘটনার পর বুধবার (৭ মে) প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা পবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন, নওহাটা পৌরসভার বাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ও পৌর যুবদলের সদস্য মো. আতাউর (৩৫), বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও পৌর যুবদলের সদস্য মো. মকসেদ আলী (৩৫), পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা (৫০) এবং বাগধানী গ্রামের মো. জমসেদ (৪০)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকেও অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাধা দিলে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন এবং তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এরপর কক্ষে তালা লাগিয়ে তাঁরা চলে যান এবং প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেন।

প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, এটা বিএনপির নিজেদের দ্বন্দ্ব। বিদ্যালয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তালার কারণে অফিসের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। উপবৃত্তি, পরীক্ষার ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা জানান, ঘটনার পর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। প্রতিটি শ্রেণিতে যেখানে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা, সেখানে এখন আসছে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন।

পরিচালনা কমিটির সভাপতি মামুন-অর-রশিদ বলেন, মঙ্গলবার ছিল কমিটির সভা। আমরা যাওয়ার আগেই ওই ঘটনা ঘটে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অফিস রুম তালাবদ্ধ।

অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা নজির বলেন, আমি শুধু দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, বাগধানীর স্কুলে বাগধানীর বাইরের লোককে সভাপতি বানানো ঠিক হয়নি। আমরা কোনো তালা মারিনি, কোনো ভাঙচুরও করিনি। প্রধান শিক্ষক যা বলছেন, তাঁকে কেউ শিখিয়ে দিয়েছে।

পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, পরিচালনা কমিটির সভায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে প্রধান শিক্ষককে কক্ষে তালা, গাছে ঝুলছে চেয়ার

আপডেট সময় : ১২:১৭:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে প্রধান শিক্ষককে কক্ষে তালা, গাছে ঝুলছে চেয়ার

স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মারধর করে কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের চেয়ার গাছে ঝুলতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালাবদ্ধ এবং তাঁর ব্যবহৃত চেয়ারটি বিদ্যালয়ের সামনের একটি গাছে ঝুলছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে গত তিন দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে চারটি তালা ঝুলছে। প্রধান শিক্ষক মোসা. মঞ্জু মনোয়ারা অভিযোগ করে বলেন, তাঁকে মারধর করা হয়েছে এবং কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে চেয়ার বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার পর চলতি বছরের ৩ মার্চ নতুন সভাপতি হন বিএনপি-সমর্থিত মামুন-অর-রশিদ। তিনি নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে।

অন্যদিকে, নওহাটা পৌর বিএনপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা, যিনি পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ, তিনি এ কমিটিকে মেনে নেননি। তিনিও সভাপতি পদের জন্য আগ্রহী ছিলেন।

গত মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়েছিল। ওই সভায় পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে সভা শুরুর আগেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি, গালিগালাজ এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তখন প্রধান শিক্ষককে তার অফিস কক্ষ থেকে বের করে চারটি তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর ব্যবহৃত চেয়ার বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার দেখা যায়, সেই চেয়ারটি কে বা কারা গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রথমে চেয়ারটি ডোবায় ফেলা হয়েছিল। পরে তা তুলে এনে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

ঘটনার পর বুধবার (৭ মে) প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা পবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন, নওহাটা পৌরসভার বাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ও পৌর যুবদলের সদস্য মো. আতাউর (৩৫), বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও পৌর যুবদলের সদস্য মো. মকসেদ আলী (৩৫), পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা (৫০) এবং বাগধানী গ্রামের মো. জমসেদ (৪০)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকেও অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাধা দিলে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন এবং তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এরপর কক্ষে তালা লাগিয়ে তাঁরা চলে যান এবং প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেন।

প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, এটা বিএনপির নিজেদের দ্বন্দ্ব। বিদ্যালয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তালার কারণে অফিসের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। উপবৃত্তি, পরীক্ষার ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা জানান, ঘটনার পর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। প্রতিটি শ্রেণিতে যেখানে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা, সেখানে এখন আসছে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন।

পরিচালনা কমিটির সভাপতি মামুন-অর-রশিদ বলেন, মঙ্গলবার ছিল কমিটির সভা। আমরা যাওয়ার আগেই ওই ঘটনা ঘটে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অফিস রুম তালাবদ্ধ।

অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা নজির বলেন, আমি শুধু দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, বাগধানীর স্কুলে বাগধানীর বাইরের লোককে সভাপতি বানানো ঠিক হয়নি। আমরা কোনো তালা মারিনি, কোনো ভাঙচুরও করিনি। প্রধান শিক্ষক যা বলছেন, তাঁকে কেউ শিখিয়ে দিয়েছে।

পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, পরিচালনা কমিটির সভায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।