রাজশাহীতে পরিত্যক্ত বাসায় কলেজ ছাত্রকে আটকে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা

- আপডেট সময় : ০৪:৪১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫ ৯৯ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীতে পরিত্যক্ত বাসায় কলেজ ছাত্রকে আটকে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা
রাজশাহী সিটি কপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিত্যক্ত বাড়িতে এক কলেজছাত্রকে আটকে রেখে চার তরুণ দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় খবর পেয়ে পুলিশ নগরীর উপশহরের এই পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে কলেজ ছাত্রকে উদ্ধার করে। এ সময় চারজনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। আটক চারজন হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাদাত হোসেন এবং নাটোর সদরের আকাশ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম ও রাইফুল তারা রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম ফাহিম হোসেন জীম। তিনি রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
আটক শাহাদাত হোসেন মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আটকের সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি কোনো টাকা-পয়সা দাবি করিনি। আমি শুধু জীমকে বলেছি, তোমার বন্ধু ছাত্রলীগ করে তাকে এনে দাও। তারপর তুমি চলে যাও। অন্ধকারে পরিত্যক্ত বাসায় কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যখন আসি তখন অন্ধকার ছিল না।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন জীম বলেন, ‘আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার পদত্যাগ পর্যন্ত আমি আন্দোলনে ছিলাম। কিছুদিন ধরে আমাকে বারবার কল করা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, আমি নাকি ছাত্রলীগ করি। আমি নগর ভবনের সামনে ছিলাম। সেখান থেকে আমাকে তুলে আনা হয়েছে। আনার পরে মারধর করে। তারা বলে, আমার সঙ্গে নাকি ছাত্রলীগের যোগাযোগ আছে। তারা আমার কাছে চাঁদাও দাবি করেছিল। পরে আমি আমার দুজন বন্ধুকে ডাকলাম। আমার বন্ধুরা এসে লোকজন ডেকে আমাকে উদ্ধার করল।
জীমকে উদ্ধারে যাওয়া রাজশাহী উপশহরের বাসিন্দা ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান কাফি জানান, আমরা খবর পাই যে সাবেক মেয়রের পরিত্যক্ত বাড়ির গ্যারেজে এক ছাত্রকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।
আমরা গিয়ে দেখি, ওই ছাত্রকে গ্যারেজে অন্ধকারের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। আমি ওই চারজনের পরিচয় জানতে চাই। তখন তারা নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বলে, ওপরের নির্দেশ আছে এই ছেলেকে ধরার জন্য। তার বন্ধু ছাত্রলীগ করে। একে ধরলে তার বন্ধুকে পাওয়া যাবে। আমি তাদের কাছে ওপরের নির্দেশটিই দেখতে চাই। কিন্তু তারা কোনো নির্দেশনা দেখাতে পারেনি। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের থানায় নিয়ে যায়। কাফি আরও জানান, ‘এরা যে ছেলেটিকে ধরে আনে সে ছাত্রলীগ না। মোবাইলে ছবি দেখলাম সে নিজেই আন্দোলনে ছিল। ছেলেটির কাছে প্রথমে দেড় লাখ এবং পরে এক লাখ টাকা দাবি করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই চারজন নিজেদের তাহাস নূর নামে একজনের লোক বলে পরিচয় দেয়। তাহাস ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগর ভবন পাহারার দায়িত্বে ছিলেন।’
তাহাস নূর রাজশাহী কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি। ওই চারজন আন্দোলনের সময় আমার সাথে ছিল। আমরা একসঙ্গে নগর ভবন পাহারা দিয়েছি। তারা আমাকে জানায় যে, তারা একজন ছাত্রলীগকে ধরেছে। আমি তাকে পুলিশে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। পরে কী হয়েছে সেটা আমি বলতে পারব না।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটস্থলে গিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্ত চারজনকে থানায় আনা হয়েছে। ভুক্তভোগী ছেলেটি চাইলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। আমরা মামলা গ্রহণ করব।