রাজশাহীতে আ.লীগ নেতার গাড়িতে ঘুরছেন বিএনপি নেতা

- আপডেট সময় : ০২:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ ২৭৩ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীতে আ.লীগ নেতার গাড়িতে ঘুরছেন বিএনপি নেতা
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতার গাড়ীতে ঘুরছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার এমন অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। গত ১১ জুন দুপুরে বিএনপির ওই নেতাকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক সুনন্দন দাস রতনের প্রাইভেটকার থেকে নামতে দেখা গেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, গোদাগাড়ীর খেতুরী ধামের সামনে কালো রঙের ওই গাড়িটি থেকে প্রথমে নামেন সেন্টু সরকার নামের এক ব্যক্তি। এরপর গাড়ি থেকে নামেন বিশ্বনাথ সরকার। শেষে গাড়িটি থেকে নামেন বিশ্বনাথ সরকারের ভাতিজা অলোক সরকার আলো।
আওয়ামী লীগ নেতা সুনন্দন দাস রতন কাস্টমসের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। চাকরিজীবনে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার পর তিনি এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর নজরে আসেন। দলে পদ পান। ফারুক চৌধুরী তাকে শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ট্রাস্টিও করেন। গত বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রতন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন।
নানা অপকর্মের কারণে খেতুর ধামের ওই ট্রাস্টি বোর্ড থেকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রতনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে তার গাড়িতে চড়েই এই ধামে যান বিএনপির নেতারা। বিষয়টি স্বীকার করেছেন গাড়িচালক ইসরাইল হোসেন। তিনি জানান, গাড়িটির মালিক সুনন্দন দাস রতন। এই গাড়িতে তিনি রাজশাহী শহর থেকে তিনজনকে নিয়ে সেদিন ধামে যান।
বিষয়টি নিয়ে কয়েকদফা ফোন করা হলেও ধরেননি রতন। তাই এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের অভিযোগ, অব্যাহতি দেওয়ার কারণে রতন এখন পুরো ট্রাস্টি বোর্ডই ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। গত মার্চে তিনি একবার ধামে তালাও দিয়েছিলেন তার লোকজন পাঠিয়ে। তাতে সফল না হয়ে এখন বিএনপি নেতাদের দিয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছেন। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার ট্রাস্টি বোর্ডকে জানিয়েছিলেন, গত ১৩ জুন এখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আসবেন। কিন্তু আসলে তার আসার কথা কেউ জানে না। তার নাম ভাঙিয়ে সমবেত হয়ে তারা ট্রাস্টি বোর্ডই পুনর্গঠনের চেষ্টা করতেন। এর পেছনে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা রতন। তাই তারা রতনের গাড়িতে চড়েই ধামে এসেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত কথিত মিলনমেলা হয়নি।
উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে ওই মিলনমেলা করার কথা বলা হয়েছিল। সেটি না হওয়ায় শনিবার রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট। সেখানে দাবি করা হয়, আগের দিন বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এহসানুল কবির টুকু অনুষ্ঠান আয়োজনে বাগড়া দেন। তিনি সহদেব কুমার পান্না নামের এক ভক্তকে মারধর করে ধাম থেকে বের করে দেন। পরবর্তীতে ওই মিলনমেলা স্থগিত করা হয়।
জানতে চাইলে টুকু দাবি করেন, কেন্দ্রীয় নেতা আসবেন- এ কথা শোনার পর তিনি প্রস্তুতি দেখতে ধামে যান। সেখানে গিয়ে তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সহদেব কুমার পান্নাকে দেখতে পান। তিনি তাকে বিএনপির অনুষ্ঠানের ভেতর না থাকতে বলেছিলেন। পান্নাকে কোনরকম মারধরের ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।
এদিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করেছে দাবি করে রোববার দুপুরে ধামেই সংবাদ সম্মেলন করে ট্রাস্টি বোর্ড। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বোর্ডের সভাপতি বিদ্যুৎ নারায়ণ সরকার। এছাড়াও সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন সদস্য ট্রাস্টি শ্যামাপদ স্যানাল, গণেশ চন্দ্র ঘোষ, রামকুমার সাহা, বাবু মণ্ডল বাবু ও রাজানাথ পাল। সহদেব কুমার পান্নাকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি দাবি করে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা দাবি করেন, ১১ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ধামে অন্তত অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর ভেতর কাউকে মারধর করা সম্ভব নয়। ধামজুড়ে থাকা সিসি ক্যামেরাতেও এমন কোনো ঘটনা দেখা যায়নি। বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য এমন কথা প্রচার করা হয়েছে। আর আগের দিন বিকেলে অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তাই অনুমতি দেওয়া যায়নি। তাছাড়া এ অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়েরও আসার কথা ছিল না। তাঁর নাম ভাঙানো হয়েছে।
তারা জানান, ট্রাস্টি বোর্ড চলে ১১৩ বছর আগে বৃটিশ আমলে রেজিস্ট্রার্ড এক নীতিমালা মেনে। চাইলেই বোর্ড ভেঙে দেওয়া যায় না। সুনন্দন দাস রতন তার জমিতে যাওয়ার জন্য ধামের ভেতর দিয়ে রাস্তা করছিলেন। ব্যক্তিস্বার্থে এমন কাজ করার জন্য তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারপর এখন তিনি বিএনপির জেলার সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দেবাশিষ রায় মধুকে দিয়ে বোর্ড ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। এই কারণেই বিশ্বনাথ সরকার ১১ জুন রতনের গাড়িতে চড়েই ধামে আসেন। এই গাড়ি এবং গাড়ির চালক ইসরাইল হোসেনকে তারা সবাই চেনেন। সেদিন দেখেছেনও।
আওয়ামী লীগ নেতা রতনের গাড়িতে চড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ‘রতনকে আমি চিনিই না। তার গাড়িতে চড়ার প্রশ্নই ওঠে না।’ তিনি দাবি করেন, তারা ধামে শুধু একটি মিলনমেলা ও আলোচনা সভা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। তবে ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনের জন্যই’ওই মিলনমেলা বলে স্বীকার করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দেবাশিষ রায় মধু বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ড বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর গঠন করে দেওয়া। কমিটিতে যারা রয়েছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগ করে। আমরা এটা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কারণ, হিন্দু কমিউনিটির সবাই এটা চায়। সে জন্যই মিলনমেলা ও আলোচনা সভার আয়োজন ছিল।’