মহাদেবপুরে হাট-বাজার ইজারায় নিগোশিয়েশনের অভিযোগ
- আপডেট সময় : ০২:২০:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
মহাদেবপুরে হাট-বাজার ইজারায় নিগোশিয়েশনের অভিযোগ
কাজী সামছুজ্জোহা মিলন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
মহাদেবপুরে হাট-বাজার ইজারায় নিগোশিয়েশনের অভিযো। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সদর ও মাতাজী হাট-বাজার ইজারায় নিগোশিয়েশনের অভিযোগ উঠেছে। পুরো উপজেলা জুড়ে এনিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
অনেকেই বলছেন যে, একটি মহল সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে নিগোশিয়েশনের মাধ্যমে কম টাকায় ইজারা নিয়েছেন। বিষয়টি অত্যন্ত গোপনে ম্যানেজ করা হয়েছে। এই অবস্থা বহাল থাকলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে রক্ষিত বিভিন্ন হাটের দরপত্র বাক্স খোলা হয়। এতে মহাদেবপুর সদর হাট এবং মাতাজী হাটের জন্য দুইটি করে দরপত্র জমা পড়ে। সদর হাটে সর্বোচ্চ ৯০ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা দর দেয়ায় হাটের আগের ইজারাদার এমদাদুল হককে হাট ইজারা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। দ্বিতীয় দরদাতা ফজলুর রহমান দিয়েছিলেন ৯০ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। এই হাটটির সরকারি কাঙ্খিত মূল্য ধরা হয় ৯০ লক্ষ ৩ হাজার ৮৭৭ টাকা। গত ৩ বছরের ইজারা মূল্যের গড় হিসেবে এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গতবছর এই হাটের ডাক ছিল ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা। তার আগের বছর সরকারি খাস কালেকশনে মাত্র ২৯ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা আদায় দেখানো হয়। সেই সুবাদে গড় মূল্য কমে আসে। কিন্তু প্রতিবছর যেখানে খাজনা বাড়ে, সেখানে গতবছরের চেয়ে এবছর হাটের ইজারা ৫৫ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা কম হলো। এছাড়া এটা সরকারি কাঙ্খিত মূল্যের চেয়ে মাত্র ১২ হাজার ৮৭৭ টাকা বেশি।
একইভাবে গত ৩ বছরের গড়ে মাতাজী হাটের সরকারি কাঙ্খিত মূল্য ধরা হয় ২ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৩ হাজার ২৫৭ টাকা। এই হাটের জন্য সর্বোচ্চ দর দেন নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। গতবছরও তাঁর লোক এই হাটটির ইজারা পেয়েছিলেন। অপর দরদাতা খাইরুল বাসার দেন ১ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু গতবছর এই হাটের ডাক ছিল ৩ কোটি ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। গতবছরের তুলনায় এবছর হাটের ইজারা ৫৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা কম হলো। এছাড়া সরকারি কাঙ্খিত মূল্যের চেয়ে মাত্র ৫৬ হাজার ৭৪৩ টাকা বেশি।
মহাদেবপুর সদর হাটের জন্য মোট ৮টি ও মাতাজী হাটের জন্য মোট ৪টি সিডিউল বিক্রি হয়। কিন্তু উভয় হাটের জন্য মাত্র ২টি করে সিডিউল জমা পড়ে। বাকী সিডিউলগুলোর ক্রেতাদের সাথে নিগোশিয়েট করা হয়েছে বলে গুঞ্জন চলছে। এই কারণেই তারা দরপত্র জমা দেননি। এছাড়া দরপত্রদাতাদের মধ্যে প্রতিযোগীতা হলে সরকারি কাঙ্খিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দর দেয়া হতো বলেও অভিজ্ঞরা মনে করেন।
একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়, বুধবার দিবাগত রাতে ওই দুটি হাটের সিডিউল ক্রেতাদের স্থানীয় এক প্রভাবশালীর চেম্বারে ডেকে নিয়ে সকলকে ম্যানেজ করা হয়। এর ফলেই তারা আর কেউ সিডিউল জমা দেননি। প্রতিপক্ষের কেউ সিডিউল জমা দিচ্ছেন না এটা নিশ্চিত হয়েই যে দুটি টেন্ডার দাখিল করা হয় সেগুলোতে সরকারি কাঙ্খিত মূল্যের চেয়ে সামান্য বেশি দর দেয়া হয়। এই নিগোশিয়েশন না হলে প্রতিযোগীতায় সরকারি ঘরে অনেক বেশি রাজস্ব জমা হতো বলে অভিজ্ঞরা মনে করেন। এটা সরকারের সাথে পুরোপুরি প্রতারণা বলেও তারা জানান।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার সবচেয়ে বড় এই দুটি হাটের নিগোশিয়েশনের বিষয়টি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন বিষয়টি ছিল ট্যক অব দ্য টাউন। উৎসাহীরা শেষ খবর জানার জন্য সারাদিন উপজেলা কমপ্লেক্স চত্ত্বরে ভিড় জমান।
জানতে চাইলে মহাদেবপুর হাটের ইজারাদার এমদাদুল হক নিগোশিয়েশনের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, গতবার (১৪২৮ বঙ্গাব্দ) হাট ইজারা নিয়ে করোনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেটা পুষিয়ে নিতে এবারও এই হাট ইজারা নিলেন।
মাতাজী হাটের ইজারাদারের পার্টনার ও ম্যানেজার আরিফুল ইসলামও একই কথা জানান। তিনি বলেন, গতবার করোনায় সরকারি নির্দেশনায় ৮ সপ্তাহ হাট বন্ধ থাকে। এতে তাদের ৭০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সরকার হাটের সময় এক সপ্তাহও বাড়ায়নি।থ
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন বলেন, ‘নিগোশিয়েশন হয়েছে বলে আমারও তাই মনে হয়। তবে সিডিউল কম জমা পড়লে ইজারা দেয়া যাবে কিনা আইন ভালোভাবে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।থ তিনি আরও বলেন, ‘ইজারা দেবার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিষয়টি মূল্যায়ন কমিটির সভায় চুড়ান্ত করা হবে।থ
নিগোশিয়েশন হবার মত সব রকম আলামত পাবার পরও নতুন করে টেন্ডার জমা দানের ঘোষণা না দিয়ে তাদেরকেই নীতিগতভাবে ইজারা দেয়া যায়না বলে দাবি করেন সুধীজন।
অপরদিকে এর সাথে জড়িত সকলেই সরকারের রাজস্ব কমানোর দায় এড়াতে পারেন না বলেও তারা মনে করেন।