মহাদেবপুরে এবারও প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর দায়সারা আয়োজন
- আপডেট সময় : ১০:০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ৩৭ বার পড়া হয়েছে
মহাদেবপুরে এবারও প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর দায়সারা আয়োজন
কাজী সামছুজ্জোহা মিলন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরে এবারও দায়সারা গোছে আয়োজন করা হয় প্রাণি সম্পদ প্রদর্শনীর। প্রদর্শনী শেষ করা হয় মাত্র দুথঘন্টায়। বিস্তর টাকা খরচ করে আয়োজিত এই মেলায় সাধারণ মানুষের কোন উপস্থিতি ছিল না। ফলে উন্নতজাতের পশুপাখি পালনে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য মেলা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হয়েছে। এই মেলা থেকে সাধারণ মানুষ কোন উপকার পাননি।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) এর সহযোগীতায় পুষ্টি, মেধা, দারিদ্র্য বিমোচনে গত বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতালের উদ্যোগে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সরকারি অর্থ ব্যয় করে ডেকোরেশন করে ৩২টি স্টল সাজানো হয়। কিন্তু মাত্র ১৫টি স্টলে প্রদর্শনী হয়। বাকিগুলো খালি থাকে। মেলার দর্শনীয় গেট পার হলেই প্রথমেই চোখে পড়ে পরপর ৬টি ওষুধ কোম্পানির স্টল। এছাড়া কয়েকটি স্টলে একটি করে ছাগল ও একটি করে গরু ছিল। স্টল দেয়া প্রত্যেককেই পুরস্কৃত করা হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন যে, মেলা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে কোন মাইকিং করা হয়নি। এমনকি বেশিরভাগ খামারিকেও জানানো হয়নি।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের দাউল বারবাকপুর গ্রামের এটিএন বাংলার নির্বাচিত সাদা মনের মানুষ গেছোমামা সামসুদ্দিন মন্ডল জানান, তার ছেলের ডেইরি খামার রয়েছে। গতবার মেলায় পুরস্কার পায়। কিন্তু এবার তাকে কিছুই জানানো হয়নি। উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের খামারি টারজানও জানান একই কথা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেলার বিষয় মাইকিং করে বহুল প্রচারের জন্য কর্তৃপক্ষের চিঠিতে উল্লেখ থাকলেও এখানে সে সরকারি আদেশ মানা হয়নি।
মেলায় ওষুধ কোম্পানির স্টল দেয়া নিয়ে এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এখানে অর্ধ শতাধিক ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিজেদের পছন্দমত ৬টি কোম্পানিকে স্টল দেয়ার সুযোগ দিয়েছে।
জানতে চাইলে মেলায় স্টল দেয়া এসকেএফ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ শামিম আহমেদ জানালেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাদের ডাকে তারা মেলায় স্টল দিয়েছেন। তবে সেখানে তাদের কোন ওষুধ বিক্রি হয়নি। সব মিলিয়ে ৮ থেকে ১০ জন সাজেশন নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
মেলার অন্য স্টলগুলো থেকেও কোন কিছু বিক্রি হয়নি বলে জানান গরু, ছাগল ও কবুতর নিয়ে আসা ব্যক্তিরা।
দুপুর ১২টায় ৪৮ নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফিতে কেটে মেলার উদ্বোধন করেন। মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা।
উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবীব ভোদন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া রহমান পলি ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার শাকিল এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় এতে সভাপতিত্ব করেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আবদুল মালেক।
আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ শেষেই দুপুর ২টায় মেলার কার্যক্রম শেষ করা হয়। দিনব্যাপি মেলা অনুষ্ঠানের নির্দেশনা থাকলেও এখানে সে নির্দেশনা মানা হয়নি।
এসব বিষয় জানতে বিকেল ৩টায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে গিয়ে কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। একজন কর্মচারি জানালেন তিনি খুব ক্লান্ত, রেষ্ট নিচ্ছেন। আজ আর অফিসে আসবেন না। বিকেল ৫টা পর্যন্ত তার মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। পরদিন বৃহস্পতিবার তার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। কর্মচারিরা জানান, তিনি বগুড়া গিয়েছেন। এদিনও তিনি ফোন রিসিফ করেননি।
জানতে চাইলে, মোবাইলফোনে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মহির উদ্দিন জানান, মাইকিং করার কথা। না করলে তা ঠিক হয়নি। খামারিদেরও জানানোর কথা। এছাড়া মেলা সারাদিনব্যাপিই করতে হবে। প্রাণিসম্পদ বিষয়ে সব ধরনের ষ্টেক হোল্ডার যেমন পশুখাদ্য ব্যবসায়ীরাও মেলায় অংশ নিতে পারেন। তবে জেলার অন্য কোথাও ওষুধ কোম্পানির স্টল দেয়া হয়নি। এসব ব্যাপারে তিনি খোঁজ নিবেন বলেও জানান।
উল্লেখ্য, গতবছর ২৯ আগষ্টও অনুরুপ দায়সারা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। মাত্র দেড়ঘন্টায় শেষ করা হয়েছিল প্রদর্শনী।