বাগাতিপাড়ায় স্ট্রীট লাইট প্রকল্পের কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছেন না উপজেলাবাসী

- আপডেট সময় : ১২:০১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩৯ বার পড়া হয়েছে
বাগাতিপাড়ায় স্ট্রীট লাইট প্রকল্পের কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছেন না উপজেলাবাসী
নাটোরের বাগাতিপাড়া সঠিক পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণের নিয়ম-নীতি না থাকায় লাখ লাখ টাকার আলোর প্রকল্প হাবুডুবু খাচ্ছে অন্ধকারে।উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানের সোলার স্ট্রীট লাইটগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর। ফলে স্ট্রীট লাইট প্রকল্পের কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছেন না উপজেলাবাসী। সৌর সড়কবাতির প্রায় অধিকাংশই নষ্ট ও চুরি হয়ে গেছে। সড়কের বাতিগুলো নষ্ট হওয়ার কারণে রাতের অন্ধকারেই চলাচল করতে হচ্ছে গ্রামীণ জনপদের হাজার হাজার মানুষদের। এতে রাতের আধাঁরে ঘটছে চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল আছে কিন্তু বাতি নেই। কোথাও বাতি থাকলেও প্যানেল গায়েব। অনেক সড়কবাতি ব্যাটারি ও লাইটহীন। ব্যাটারি বাক্সে পাখিরা বেঁধেছে বাসা। অবাধে চুরি হয়েছে এসব ব্যাটারি ও সোলার প্যানেল। মেরামতের কথা ভাবা তো দূরের কথা, কখনোও এগুলোর খোঁজ খবর রাখেননি কতৃপক্ষ। তিন বছর পর্যন্ত দেখভালের কথা থাকলেও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। বাতিগুলো ১০ বছর আলো দেওয়ার কথা থাকলেও কয়েক বছরের মধ্যেই তা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। নষ্ট হওয়া গ্রামীণ সড়কের শত শত সোলার স্ট্রীট লাইটগুলো পুনরায় মেরামত করার কোন বিকল্প ব্যবস্থা আছে কি না এমটি প্রশ্ন উপজেলার সচেতন মহলের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সুত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় টিআর কাবিখা বরাদ্ধের মাধ্যমে সড়কবাতি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৮ টি, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৪১লাখ ২৩ হাজার ৭৭৭ টাকা ব্যয়ে ৭৩ টি, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫০ টি এবং ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৫৬ লাখ ৪৯ হজার টাকা ব্যয়ে ১০০ টি স্ট্রীট লাইট স্থাপন করা হয়। প্রতিটি স্ট্রীট লাইট স্থাপনে গড়ে খরচ ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা। এবং বাতিগুলোর ১০ বছর আলো দেওয়ার কথা। কিন্তু মেয়াদ পুর্ণ হওয়ার আগেই অধিকাংশই নষ্ট ও চুরি হয়ে গিয়েছে। ঠিক কতটি স্ট্রীট লাইট নষ্ট বা চুরি হয়ে গেছে এর সঠিক তথ্য নেই দপ্তরে।

উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চকমহাপুরু এলাকার নাজিম উদ্দিন(৪২) জানান, তার এলাকায় বিভিন্ন মোড়ে কিছু স্ট্রীল লাইট আছে। লাইটিগুলো অনেক আগে ভালই জ্বলত। এক দেড় বছর জ্বলার পর লাইটগুলো আর জ্বলে না। কখনোও কেও দেখতে আসেনি যে লাইটগুো ঠিকঠাক মত জ্বলছে কিনা। এখন রাস্তার মোড়গুলো অন্ধকারেই আচ্ছাদিত হয়ে থাকে। তাই লাইটগুলো দ্রুত মেরামতের দাবি জানান তিনি।
উপজেলার গালিমপুর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউনবী রেনু (৭০) বলেন, বছরের পর বছর নষ্ট হওয়া সড়ক বাতিগুলো মেরামত না করায়, সুবিধা পাওয়া থেকে বি ত হচ্ছেন গ্রামীণ জনপদের বাসিন্দারা। রক্ষণাবেক্ষণে সঠিক তদারকি না থাকায় খুব অল্প সময়েই নষ্ট ও চুরি হয়েছে এই সকল স্ট্রীট লাইটগুলো। এলাকায় প্রায় সময় ভ্যান,রিকশা,গরু, ছাগল চুরির মত ঘটনা ঘটে।তাই দ্রুত জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ সড়কটির বাতিগুলো মেরামত করে আলো জ্বালানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।দয়ারামপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান(২৮) জানান, তার এলাকার স্ট্রীট লাইটগুলো লাগানোর কিছুদিন পরই নষ্ট হয়ে যায়। এগুলো মেরামত বা দেখভাল করার জন্য কাওকে কখনো দেখা যায়নি।

উপজেলা ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এএসএম শরিফুল ইসলাম লেলিন(৪৪) জানান,তার ইউনিয়নে সোলার প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ ল্যাম্প পোস্টগুলো অধিকাংশ নষ্ট ও চুরি হয়ে আছে। এতে রাত্রিকালে চলাচলকারী পথচারি ও ভ্যানচালকদের সমস্যায় পড়তে হয়।তিনি আরও জানান বছর দেড়েক আগে দিনের বেলায় অঙ্গাত দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেল নিয়ে কুমারপাড়া এলাকায় তার আম বাগানের কাছে যে স্ট্রীট লাইট ছিল তা চুরি করে নিয়ে যায়।
উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকতা মোঃ মনিমুল হক জানান, ২০২০-২১ অর্থ বছর থেকে প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। আর যে সকল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লাইটগুলো স্থাপন করা হয়েছিল তাদের চুক্তি মেয়াদ ৩ বছর শেষ হয়েগেছে। চুক্তির মেয়াদের পর সৌরবাতিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় এখন আপাতত কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। বরাদ্ধ পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মোহাইমেনা শারমীন বলেন, উপজেলার কোন কোন স্থানের স্ট্রীট সোলার লাইটগুলো নষ্ট অবস্থায় আছে তা নির্ধারণ করে পুনরায় মেরামত করা যায় কিনা এ বিষয়টি তিনি দেখবেন।