বগি রেখেই ইঞ্জিন নিয়ে ছুটল ট্রেন চালক, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
- আপডেট সময় : ০১:১৪:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ৪৩ বার পড়া হয়েছে
বগি রেখেই ইঞ্জিন নিয়ে ছুটল ট্রেন চালক, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
বগি রেখেই ইঞ্জিন নিয়ে ছুটল ট্রেন চালক, ভোগান্তিতে যাত্রীরা। একবার নয়, চারবার কপোতাক্ষ ট্রেনের বগি রেখে শুধু ইঞ্জিন নিয়ে রাজশাহী লাপাত্তা হয়েছেন ট্রেন চালক। এতে ৩ ঘন্টার ভোগান্তিতে পড়তে হয় ওই ট্রেনের যাত্রী ও রাজশাহী স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রীদের। ফলে তাদের উভয়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রেল সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীবাহী কপোতাক্ষ ট্রেনটি শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সোয়া ৬টায় খুলনা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি রাজশাহীতে প্রবেশ করার সময় সূচী দুপুর ১২ টায়। তবে প্রথমে যোশরে ট্রেনের কাপলিং (জ) এর সমস্যার কারণে বগিটি রেখেই ট্রেনের ইঞ্জিনটি সামনের দিকে অগ্রসারিত হয়। পরে আবার ইঞ্জিনটি ফিরিয়ে আনার জন্য বগির গার্ড (ট্রেন পরিচালক) ইঞ্জিনের এলএম (লোকো মাস্টার) কে মুঠোফোনে কল করে পুনরায় ফেরত আসতে বলেন। এরপর ইঞ্জিনটি বগির সাথে যুক্ত হয়ে আবার যশোর ত্যাগ করে। এরপর আবারো নোয়াপাড়া স্টেশনে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়।
এরপর কোট চাঁদপুর স্টেশনে পরপর দুইবার একই ঘটনায় বগি রেখে ইঞ্জিনটি সফদারপুর স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় চলে আসে। যার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। ট্রেনচালক ঘটনাটি বুঝতে পেরে আবারো পেছনে ফেরে। এভাবে প্রায় তিন ঘন্টা ট্রেনটি বিলম্বে রাজশাহী প্রবেশ করে। পরে রাজশাহী এসে পৌছায় বিকেল তিনটায়।
এরপপর ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ছেড়ে যায় ৪টা ৫ মিনিটে। ট্রেনটিতে অবস্থানরত বেলাল হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, পরপর চার বার ট্রেনটি বগি রেখেই ইঞ্জিনটি ছেড়ে যায়। এতে অতিরিক্ত তিন ঘন্টা সময় নষ্ট হয়। এছাড়া আমি সহ অনেকেই সময় মতো রাজশাহী পৌছাতে না পেরে বড় বিড়ম্বনায় পড়ি।
অপর এক যাত্রী শিল্পী বসাক জানান, আমি আমার কন্যা সন্তানকে নিয়ে রাজশাহীতে ডাক্তার দেখাতে রাজশাহী আসি। কিন্তু ট্রেনটি তিন ঘন্টা লেট হওয়ার কারণে ডাক্তারের চেম্বারে সময় মতো পৌছাতে পারি নাই। এতে করে বাধ্য হয়েই আজ রাতে আমাদের রাজশাহীতে অবস্থান করতে হয়।
এসময় রাজশাহী প্লাটফর্মে অবস্থানরত যাত্রীদের মাঝেও দেখা দেয় চরম ক্ষোভ। যাত্রীদের মধ্যে প্রতিবেদকের কথা হয় আব্দুর রাজ্জাক নামের এক যাত্রীর। তিনি বলেন, খুব জরুরী কাজের জন্য আমাকে রূপপুরে যেতে হতো। সেখানে ছিল জরুরী একটি ব্যবসায়ীক মিটিং। কিন্তু ট্রেনের এমন বিলম্ব হওয়ায় আমার সমস্ত কার্যক্রম জলে ভেস্তে যায়। কর্তৃপক্ষ যদি এবিষয়টি মাইকিং করে জানাতেন তবে আমাকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো না।
ট্রেন পরিচালক তাপস কুমার দে বলেন, ট্রেনের বগির সাথে ইঞ্জিনের জোড়া লাগানোর জন্য যে কাপলিং বা জ ব্যবহৃত হয় সেটি বার বার ছুটে যাওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়া দুটি ট্রেনকে পাস দেয়ার কারণে অতিরিক্ত বিলম্ব হয় ট্রেনটি।
এবিষয়ে লোকো মাস্টার (এলএম) কুতুব উদ্দিন বলেন, আমি ঈশ্বরদী থেকে উঠেছি। ঈশ্বরদী থেকে ট্রেনের লোকো মাস্টার পরিবর্তন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পূর্বের স্টেশনে কি ঘটেছে তা আমার জানা নেই।
জানতে চাইলে ডিভিশনাল ট্রাফিক অফিসার (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন বলেন, কাপলিং এর সমস্যার কারণে ট্রেনটি খুব ধীর গতিতে ছেড়ে আসে। যার কারণে ট্রেনটি তিন ঘন্টা বিলম্বে এসে পৌছেছে।
তবে এক রেল কর্মকর্তার ভাষ্য, স্টেশনের প্লাটফম থেকে একটি নির্দিষ্ট সিগনাল পর্যন্ত গার্ড ও সহকারী গার্ড এবং লোকো মাস্টার ও সহকারী লোকো মাস্টার একে অপরের সাথে যোগাযোগ রেখে ট্রেনের দরজায় দাড়িয়ে সিগনাল অতিক্রম করবেন। এর পূর্বে তারা স্টেশন ত্যাগ করতে পারবেন না। এতে ইঞ্জিন ও বগির সমন্বয় সাধন হয় এবং দুর্ঘটনা বা আনুষাঙ্গিক বিষয়দি থেকে সতর্ক থাকা যায়। হয়তোবা তারা এমনটা না করেই স্টেশন ত্যাগ করেছেন। যার কারণে এমন ঘটনাটি ঘটেছে।
এব্যাপারে বিভাগীয় ট্রাফিক অফিসার পাকশী (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়টি আমার দেখার মধ্যে পড়ে না। যেহেতু কাপলিং এর সমস্যার কারণে ঘটেছে সেহেতু এবিষয়টি চীফ ইঞ্জিনিয়ার বিভাগ ভালো বলতে পারবেন।
এদিকে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল অফিসার কুদরত-ই-খোদা বলছেন, নতুন কাপলিং লাগানোর কারণে এমন ঘটনাটি ঘটতে পারে। তবে বিষয়টি তদন্তের জন্যও বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল মেনেজার অসিম কুমার তালুকদার বলেন, নতুন কোচ ইঞ্জিনের সাথে যুক্ত করার আগে মিনিমাম ১৫ দিন ট্রাইলে রাখার কথা। রেলওয়েতে জনবল সংকট এর কারণে এ ট্রাইলটি দেয়া হয়নি। বলতে পারবেন।