ফেসবুকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান পোস্ট করায় স্ত্রীকে তালাক দিতে চাপ, স্বামীকে মারধর
- আপডেট সময় : ০২:২১:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০২ বার পড়া হয়েছে
ফেসবুকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান পোস্ট করায় স্ত্রীকে তালাক দিতে চাপ, স্বামীকে মারধর
রাজশাহী নগরীর আওয়ামী লীগের এক নারী কর্মী ফেসবুকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান পোস্ট করায় তাকে তালাক দেওয়ার জন্য স্বামীকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে যুবদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, স্ত্রীকে তালাক দিতে রাজি না হওয়ায় স্বামীকে মারধরেরও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীতে এমন ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী দম্পতি হলেন- রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার হাজরাপুকুর মহল্লার বাসিন্দা মিজানুর রহমান ও আওয়ামী লীগ কর্মী স্ত্রী বীনা মজুমদার। মিজানুর রহমান পেশায় একজন ব্যবসায়ী। বীনা গৃহিনী। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিকের সাথে জড়িত। তিনি নগরীর শাহমখদুম থানা আওয়ামী লীগের কর্মী । বীনা মজুমদার ২০১৩ ও ২০২৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় পাড়ার মাঠে শাহমখদুম থানা যুবদলের সাবেক সদস্য মো. সনিসহ কয়েকজন নেতাকর্মী মিজানুর রহমানকে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দিন ছিল মিজানুর রহমানের ছেলের জন্মদিন। বাড়িতে ছিল ছোট অনুষ্ঠান। তাই দাড়ি কামাতে সেলুনে যাচ্ছিলেন মিজানুর। তখনই তাকে মারধর করা হয়। পরে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ।
মিজানুর রহমান বলেন, আমি ঘটনার দিন হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমাকে দেখে ওরা বলছে যে, স্ত্রীর কামাই খায়। আমি এর প্রতিবাদ করে বলি, আমি সারাদিন কাজ করি। স্ত্রীর কামাই কেন খাব? তখন আমাকে বলে, তুই যদি তোর বউকে না ছেড়ে দিস, এখান থেকে না পাঠাস, তাহলে খবর আছে। কেন ছাড়ব প্রশ্ন তুললে তারা আমাকে গালি দেয় এবং মারধর শুরু করে। মারধরে হাত, মাথা, কান ও কপালে আঘাত পেয়েছে মিজানুর রহমান।
বীনা মজুমদার বলেন, কিছু দিন আগে ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ফেসবুকে একটি পোস্ট করি। সেখানে জয় বাংলা লিখি। এ জন্য সনি আমাকে ফোন করে বলে, এসব লেখা যাবে না। তা না হলে খুব খারাপ হবে। আমি বলি, দল যখন ক্ষমতায় ছিল আমি তো খারাপ কারও সঙ্গে কিছু করিনি। এরপরেও যদি আমার খারাপ হয় তাহলে হবে। তারপর ফোন রেখে দেয়। ঘটনার দিন আমার স্বামী সেলুনে যাচ্ছিল। ওরা ধরে বলে, তোর বউ আওয়ামী লীগ করে, তুই তোর বউয়ের কামায় খাস। তুই তোর বউকে ছেড়ে দিবি। আমার স্বামী কোন দল করে না। তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। চিৎকার শুনে আমি গেলাম। সনি ছেলেটা কয়দিন আগেও আমাকে আম্মা বলে ডাকত। তাকে বলি, কী ব্যাপার সনি? এসব কি? সে বলে, কোন আওয়ামী লীগের গান চলবে না। আমি বলি, আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগ করব, মরে গেলেও করব। দল ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক। এরপরই আমার স্বামীর গায়ে হাত তোলে। বীনা বলেন, এখনও কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসেনি। সমন্বয়কেরা বলেছিল, সমান অধিকার বোঝেন। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে পার্থক্য কেন আসলো? দল ক্ষমতায় থাকলেও আমি কোন অন্যায় করিনি। আমার সাথে এমন হবে কেন? আমার দোষ একটাই আমি আওয়ামী লীগ করি। এ জন্য আমার স্বামীকে চাপ দিচ্ছে যেন আমাকে ছেড়ে দেয়। এটা কেমন কথা? দলের সঙ্গে সংসারের কি সম্পর্ক? যারা অন্যায় করেছে তারা শাস্তি পাবে। যাদের জন্য আওয়ামী লীগের এই অধপতন, তাদের বিচার হোক। যারা অন্যায় করেনি তাদের কেন হেনস্থা? এটা কেমন ন্যায় বিচার? আমরা এখন আতঙ্কিত। আমরা নিরাপত্তা চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক যুবদল নেতা মো. সনি বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বীনা মজুমদার বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন। এ জন্য তার স্বামীকে বলছিলাম। তখনই কয়েকটা ছেলে দু’একটা কিল-ঘুষি মেরে দিয়েছে। এটা আমরা মীমাংসা করে ফেলেছি। তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।
নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, সন্ধ্যায় ঝামেলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজনই এটা মীমাংসা করে নিয়েছেন। তাই পুলিশ ফিরে এসেছে। এ ব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।