ঢাকা ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মান্দায় ন্যায্য মূল্যে কৃষি পণ্যের দোকান উদ্বোধন বাংলাদেশের আগামি দিনের প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমান- দুলু রাজশাহীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন ঘিরে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে পুলিশ আট দফা দাবিতে রাজশাহীর ডিসিকে ক্যাবের স্মারকলিপি সিংড়ায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা লালপুরে গোসাই আশ্রমে দুইদিন ব্যাপী ৩২৭তম নবান্ন উৎসব শাহজাদপুরে বিশেষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত শাহজাদপুরে ড. এম. এ মতিন স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন। শেরপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সেনা সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা! রাজশাহীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন

পাল্টে গেছে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের চিত্র

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৪৫:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২ ৫২ বার পড়া হয়েছে
চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পাল্টে গেছে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের চিত্র

এম এম মামুন, রাজশাহী ব্যুরোঃ
পাল্টে গেছে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের চিত্র। উত্তরাঞ্চলে চিকিৎসা সেবার শেষ আস্থা ও আশ্রয়স্থল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। এক সময় হাসপাতালটির ভেতর বাহিরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ময়লা, আবর্জনা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ বিরাজ করতো।

বর্তমানে ভিন্ন চিত্র, পাল্টে গেছে রামেক হাসপাতালজুড়ে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ফিরেছে এ হাসপাতাল। এছাড়া আগের তুলনায় চিকিৎসা সেবার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভাষ্য।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে। হাসপাতালে প্রবেশের জন্য একটি পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে, বের হওয়ার জন্য রয়েছে আরেকটি পথ। একইসঙ্গে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে হেঁটে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা। আবার প্রবেশ পথের পাশে যুগ যুগ ধরে জঙ্গল ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ হয়ে গেছে ফুলের বাগান।

রামেকে প্রবেশের শুরুতেই করা হয়েছে একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজ। অন্যদিকে পূর্বপাশে ছাউনি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইক ও মাইক্রোবাস রাখার জায়গা।

দেখা গেছে বাঁশি ও লাঠি নিয়ে রামেকের ভেতরে বিভিন্ন যানবাহন নিরসনের দৃশ্যও। এতে রামেকে জটলা ধরে অটোরিকশা কিংবা সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকছে না। ফলে নির্বিঘ্নে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্সে রোগী আসা যাওয়া করছে মুহূর্তের মধ্যেই।

আবার রামেকের ভেতর ও ঠিক বাইরের দিকেই দাঁড়িয়ে থাকতো লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। একেতো স্বজন হারানোর বেদনা, তারপর আবার স্বজনের লাশ পরিবহনের জন্য চেয়ে বসতো ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি ভাড়া। বর্তমানে সেই চিত্রও পাল্টে গিয়েছে।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগের ছেলে নগরীর নওদাপাড়ার বাসিন্দা সোহেল জানান, আগের চাইতে পরিবেশটা অনেক সুন্দর হয়েছে। আবার ডাক্তাররাও সময় দিয়ে রোগী দেখছেন। চুরির ঠেকাতে আইডি কার্ড ছাড়া ঢুকতে ও বের হতে দেয় না। এটা অনেক ভালো হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বাসিন্দা মো. কুতুবউদ্দিন তার মাকে ভর্তি করেছেন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি বলেন, এটা সত্যিই যে সেবার মান আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। রামেকে টেস্টও হচ্ছে অনেক। কিন্তু ওয়ার্ডের পরিবেশটা আরও নিট ও ক্লিন করতে হবে।

হাসপাতালের কর্মচারি ইয়াদ আলী বলেন, এক বছরের ছয় মাসের মধ্যেই হাসপাতালে আমি অনেক পরিবর্তন দেখেছি। বাইরে নোংরা পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে ফুলের বাগান। হয়েছে স্টাফদের জন্য পার্কিং স্লট। আবার ইমারজেন্সির গেটের পানি জমে থাকত, সেটিও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে আর জমে না। সবমিলিয়ে রামেক হাসপাতালের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে আগের তুলনায়।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা আমরাই করতে পারিনি। তাই অনেক সময় বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা না পেয়ে বাইরে ফেলেন। তবে আগামীতে পরিবেশ আরও সুন্দর পরিচ্ছন্ন করার জন্য ডাস্টবিনসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন রামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।

শামীম ইয়াজদানী জানান, বর্তমানে এ হাসপাতালে রয়েছে মোট ১২০০ শয্যা। শীতের সময় প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার রোগীর আনাগোনা এ হাসপাতালে। আর এ পরিমাণটি গরমের সময় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় তিন থেকে চার হাজারে।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ওয়ার্ড রয়েছে ৫৭টি। চিকিৎসক পদ রয়েছে ২৩৩টি যার মধ্যে ৩০টি পদ শূন্য। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর মোট ৯১১ পদের মধ্যে ১৪৬টি শূন্য আছে। আগের ৫৫০ শয্যার জনবল দিয়েই ১২০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটির কার্যক্রম চলছে। এতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

হাসপাতাল পরিচালনায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর রামেকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যোগদানের আগে ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এ হাসপাতালে আসার পর প্রথমেই নজর দেন নোংরা পরিবেশ দূর করার দিকে।

তিনি বলেন, এসেই দেখি হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় অনেক নোংরা ও দুর্গন্ধ। যেটা আমরা অল্প চেষ্টা করলেই দূর করতে পারি। ড্রেনগুলো খারাপ ছিল, ম্যানপাওয়ারও ছিল কম। প্রথমদিকে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলাম। তারপর পারসোনালি এখানকার ইমপ্লোয়ারদের মটিভেট করে চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে নিয়ে আসি।

শামীম ইয়াজদানী বলেন, এখানে কোনো বাগান বা মালির খাত নেই। তারপরও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তার ইন-এক্সিট, যানজট ও সিন্ডিকেট দূরীকরণসহ ডানে-বামে ম্যানেজ করে বাগান করেছি। যাতে মানুষ রামেকে ঢুকতেই তার মনটা পরিবর্তন হয়ে য়ায়। গেটের ভেতরে বাইরে সেবা ও সচেতনতার জন্য সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। রোগীর তুলনায় জনবল কম। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজি হেলথের মাধ্যমে ১০৬ জন লোক আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নেওয়ার আহ্বান করেছি।

তিনি আরও বলেন, আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শয্যা সমস্যা। হাসপাতালে ১০ তলার ফাউন্ডেশন হলেও ৪ তলা পর্যন্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি রোগীর শয্যা বাড়ানো যেত তাহলে রোগীর সেবার মান আরও বাড়ানো সম্ভব ছিল। কারণ সবাই ফোন করে একটা বেড চাই।

পরিচালক বলেন, বর্তমানে হাসপাতালের প্রত্যেকটি চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পরিচ্ছন্নকর্মী ও আনসারদের মোডিভেট করা হচ্ছে। আনসারদের প্রাতিষ্ঠানিক তেমন ট্রেনিং নেই। তাদের মাঝে মধ্যেই ব্রিফ করা হয় যেনো তারা তাদের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে পারে। এসবের ফলও বেশ মিলেছে। চিকিৎসক-নার্সেরা সেবা দিচ্ছেন, পরিচ্ছন্নকর্মীরা তাদের কাজ করছেন আবার আনসাররা মানুষকে মাঝে মাঝে সহায়তায় দৌড়ে যাচ্ছেন। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরার কারণে স্টাফরাও আসছেন ও যাচ্ছেন সময়মতো। এভাবেই ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে জানান পরিচালক।

চিকিৎসা সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে আগে ৫ শতাংশ টেস্টও হতো না। সেখানে আমরা প্যাথলজি ও ইনডোর প্যাথলজি করেছি। এখন ৮০ শতাংশ টেস্ট রামেক হাসপাতালেই হচ্ছে। আশা করছি একমাসের মধ্যেই এখানে শতভাগ প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল টেস্ট সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে পড়ে থাকা রামেকের সমস্ত যত্রাংশ ঠিকঠাক ও মেরামত করা হয়েছে।

খাবারের মানের বিষয়ে পরিচালক ইয়াজদানী বলেন, আসলে মনিটরিংটা হলো সবচেয়ে বড় বিষয়। আগে ঠিকভাবে খাবার মনিটরিং হতো না। কিন্তু বর্তমানে আমি এটি কড়া মনিটরিং করছি। এজন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি তারা ভালো খাবার বুঝে নিবে। পাশাপাশি রোগীরা নিচে লাইন ধরে খাবার নেন। এসমস্যা দূর করার জন্য উন্নত ট্রলির ব্যবস্থার চেষ্টা করছি। যাতে প্রতিটি ওয়ার্ডে খাবার ট্রলিতে করে পৌঁছে দেওয়া যায়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানীর আশা, রোগীদের হয়রানি দূর করা, দ্রুত সেবাদান। তাদের সম্মান দেওয়া ও সেবার মান উন্নয়ন করা। বর্তমানে চিকিৎসকেরাও অনেকটায় উদ্যোমী হয়েছেন। সেবা অনেক ভালো দিচ্ছেন। কিন্তু করোনার কারণে অনেকটায় ভাটা পড়ছে। মানুষ যখন রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের নাম শুনবে তখন যেনো সম্মানের সঙ্গে নামটা উচ্চারণ করে। আমরা চাই আমরা ‘ওয়ান অব দ্যা বেস্ট’ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হবো বাংলাদেশের মধ্যে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

পাল্টে গেছে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের চিত্র

আপডেট সময় : ০১:৪৫:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২

পাল্টে গেছে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের চিত্র

এম এম মামুন, রাজশাহী ব্যুরোঃ
পাল্টে গেছে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের চিত্র। উত্তরাঞ্চলে চিকিৎসা সেবার শেষ আস্থা ও আশ্রয়স্থল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। এক সময় হাসপাতালটির ভেতর বাহিরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ময়লা, আবর্জনা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ বিরাজ করতো।

বর্তমানে ভিন্ন চিত্র, পাল্টে গেছে রামেক হাসপাতালজুড়ে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ফিরেছে এ হাসপাতাল। এছাড়া আগের তুলনায় চিকিৎসা সেবার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভাষ্য।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে। হাসপাতালে প্রবেশের জন্য একটি পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে, বের হওয়ার জন্য রয়েছে আরেকটি পথ। একইসঙ্গে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে হেঁটে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা। আবার প্রবেশ পথের পাশে যুগ যুগ ধরে জঙ্গল ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ হয়ে গেছে ফুলের বাগান।

রামেকে প্রবেশের শুরুতেই করা হয়েছে একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজ। অন্যদিকে পূর্বপাশে ছাউনি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইক ও মাইক্রোবাস রাখার জায়গা।

দেখা গেছে বাঁশি ও লাঠি নিয়ে রামেকের ভেতরে বিভিন্ন যানবাহন নিরসনের দৃশ্যও। এতে রামেকে জটলা ধরে অটোরিকশা কিংবা সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকছে না। ফলে নির্বিঘ্নে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্সে রোগী আসা যাওয়া করছে মুহূর্তের মধ্যেই।

আবার রামেকের ভেতর ও ঠিক বাইরের দিকেই দাঁড়িয়ে থাকতো লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। একেতো স্বজন হারানোর বেদনা, তারপর আবার স্বজনের লাশ পরিবহনের জন্য চেয়ে বসতো ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি ভাড়া। বর্তমানে সেই চিত্রও পাল্টে গিয়েছে।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগের ছেলে নগরীর নওদাপাড়ার বাসিন্দা সোহেল জানান, আগের চাইতে পরিবেশটা অনেক সুন্দর হয়েছে। আবার ডাক্তাররাও সময় দিয়ে রোগী দেখছেন। চুরির ঠেকাতে আইডি কার্ড ছাড়া ঢুকতে ও বের হতে দেয় না। এটা অনেক ভালো হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বাসিন্দা মো. কুতুবউদ্দিন তার মাকে ভর্তি করেছেন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি বলেন, এটা সত্যিই যে সেবার মান আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। রামেকে টেস্টও হচ্ছে অনেক। কিন্তু ওয়ার্ডের পরিবেশটা আরও নিট ও ক্লিন করতে হবে।

হাসপাতালের কর্মচারি ইয়াদ আলী বলেন, এক বছরের ছয় মাসের মধ্যেই হাসপাতালে আমি অনেক পরিবর্তন দেখেছি। বাইরে নোংরা পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে ফুলের বাগান। হয়েছে স্টাফদের জন্য পার্কিং স্লট। আবার ইমারজেন্সির গেটের পানি জমে থাকত, সেটিও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে আর জমে না। সবমিলিয়ে রামেক হাসপাতালের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে আগের তুলনায়।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা আমরাই করতে পারিনি। তাই অনেক সময় বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা না পেয়ে বাইরে ফেলেন। তবে আগামীতে পরিবেশ আরও সুন্দর পরিচ্ছন্ন করার জন্য ডাস্টবিনসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন রামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।

শামীম ইয়াজদানী জানান, বর্তমানে এ হাসপাতালে রয়েছে মোট ১২০০ শয্যা। শীতের সময় প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার রোগীর আনাগোনা এ হাসপাতালে। আর এ পরিমাণটি গরমের সময় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় তিন থেকে চার হাজারে।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ওয়ার্ড রয়েছে ৫৭টি। চিকিৎসক পদ রয়েছে ২৩৩টি যার মধ্যে ৩০টি পদ শূন্য। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর মোট ৯১১ পদের মধ্যে ১৪৬টি শূন্য আছে। আগের ৫৫০ শয্যার জনবল দিয়েই ১২০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটির কার্যক্রম চলছে। এতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

হাসপাতাল পরিচালনায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর রামেকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যোগদানের আগে ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এ হাসপাতালে আসার পর প্রথমেই নজর দেন নোংরা পরিবেশ দূর করার দিকে।

তিনি বলেন, এসেই দেখি হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় অনেক নোংরা ও দুর্গন্ধ। যেটা আমরা অল্প চেষ্টা করলেই দূর করতে পারি। ড্রেনগুলো খারাপ ছিল, ম্যানপাওয়ারও ছিল কম। প্রথমদিকে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলাম। তারপর পারসোনালি এখানকার ইমপ্লোয়ারদের মটিভেট করে চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে নিয়ে আসি।

শামীম ইয়াজদানী বলেন, এখানে কোনো বাগান বা মালির খাত নেই। তারপরও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তার ইন-এক্সিট, যানজট ও সিন্ডিকেট দূরীকরণসহ ডানে-বামে ম্যানেজ করে বাগান করেছি। যাতে মানুষ রামেকে ঢুকতেই তার মনটা পরিবর্তন হয়ে য়ায়। গেটের ভেতরে বাইরে সেবা ও সচেতনতার জন্য সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। রোগীর তুলনায় জনবল কম। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজি হেলথের মাধ্যমে ১০৬ জন লোক আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নেওয়ার আহ্বান করেছি।

তিনি আরও বলেন, আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শয্যা সমস্যা। হাসপাতালে ১০ তলার ফাউন্ডেশন হলেও ৪ তলা পর্যন্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি রোগীর শয্যা বাড়ানো যেত তাহলে রোগীর সেবার মান আরও বাড়ানো সম্ভব ছিল। কারণ সবাই ফোন করে একটা বেড চাই।

পরিচালক বলেন, বর্তমানে হাসপাতালের প্রত্যেকটি চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পরিচ্ছন্নকর্মী ও আনসারদের মোডিভেট করা হচ্ছে। আনসারদের প্রাতিষ্ঠানিক তেমন ট্রেনিং নেই। তাদের মাঝে মধ্যেই ব্রিফ করা হয় যেনো তারা তাদের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে পারে। এসবের ফলও বেশ মিলেছে। চিকিৎসক-নার্সেরা সেবা দিচ্ছেন, পরিচ্ছন্নকর্মীরা তাদের কাজ করছেন আবার আনসাররা মানুষকে মাঝে মাঝে সহায়তায় দৌড়ে যাচ্ছেন। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরার কারণে স্টাফরাও আসছেন ও যাচ্ছেন সময়মতো। এভাবেই ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে জানান পরিচালক।

চিকিৎসা সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে আগে ৫ শতাংশ টেস্টও হতো না। সেখানে আমরা প্যাথলজি ও ইনডোর প্যাথলজি করেছি। এখন ৮০ শতাংশ টেস্ট রামেক হাসপাতালেই হচ্ছে। আশা করছি একমাসের মধ্যেই এখানে শতভাগ প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল টেস্ট সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে পড়ে থাকা রামেকের সমস্ত যত্রাংশ ঠিকঠাক ও মেরামত করা হয়েছে।

খাবারের মানের বিষয়ে পরিচালক ইয়াজদানী বলেন, আসলে মনিটরিংটা হলো সবচেয়ে বড় বিষয়। আগে ঠিকভাবে খাবার মনিটরিং হতো না। কিন্তু বর্তমানে আমি এটি কড়া মনিটরিং করছি। এজন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি তারা ভালো খাবার বুঝে নিবে। পাশাপাশি রোগীরা নিচে লাইন ধরে খাবার নেন। এসমস্যা দূর করার জন্য উন্নত ট্রলির ব্যবস্থার চেষ্টা করছি। যাতে প্রতিটি ওয়ার্ডে খাবার ট্রলিতে করে পৌঁছে দেওয়া যায়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানীর আশা, রোগীদের হয়রানি দূর করা, দ্রুত সেবাদান। তাদের সম্মান দেওয়া ও সেবার মান উন্নয়ন করা। বর্তমানে চিকিৎসকেরাও অনেকটায় উদ্যোমী হয়েছেন। সেবা অনেক ভালো দিচ্ছেন। কিন্তু করোনার কারণে অনেকটায় ভাটা পড়ছে। মানুষ যখন রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের নাম শুনবে তখন যেনো সম্মানের সঙ্গে নামটা উচ্চারণ করে। আমরা চাই আমরা ‘ওয়ান অব দ্যা বেস্ট’ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হবো বাংলাদেশের মধ্যে।