ঢাকা ১২:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে সিএনজি চালকের মরদেহ উদ্ধার পঞ্চগড়ে জেলা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল রাণীশংকৈলে যৌথ বাহিনীর অভিযান, অস্ত্র উদ্বার, মাদক কারবারির ১ বছর কারাদণ্ড দেবীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচ দিয়ে আমন চারা রোপন করেছে কৃষক নাটোরে জিয়া পরিষদ ও ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ রাজশাহীতে অস্ত্র মামলার ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদকসহ গ্রেপ্তার দিনাজপুরে কেবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ’র মৃত্যুবার্ষিকীতে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল রাণীনগরে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত বাগাতিপাড়ায় ফারিয়া’র নির্বাচনে নিজের ভোটও না পাওয়া প্রার্থী এবার হলেন সভাপতি দরিদ্র্যতা দমাতে পারেনি জুঁইকে, এসএসসিতে পেলেন জিপিএ-৫, স্বপ্ন দেখেন ডাক্তার হওয়ার

পবায় বাড়ছে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার; কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা

এম এম মামুন, রাজশাহী:
  • আপডেট সময় : ০১:৩০:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫ ৪৬ বার পড়া হয়েছে

collected

চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পবায় বাড়ছে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার; কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা

নিয়মিত বৃষ্টিতে উপযুক্ত পরিবেশ বিরাজ করায় রোপা আমন ধান চাষাবাদে কৃষকের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। বৃষ্টির জমে থাকা পানি দিয়ে বীজতলা তৈরি ও জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকেরা। মাঠজুড়ে লাঙল-জোয়াল, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারের শব্দ আর কৃষকদের হাঁকডাকে মুখরিত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টার (Rice Transplanter বা ধান রোপণ করা মেশিন) যন্ত্র দিয়ে কৃষিজমিতে ধানের চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা। সেই লক্ষ্যে প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ধানের চারা রোপনের লক্ষ্যে প্লাস্টিকের ট্রেতে বীজ বপন করে বীজতলা তৈরি করা সহ নানা ধরনের কর্মযজ্ঞ করছেন কৃষকেরা।

একসময় চাষাবাদে হালের বলদ, লাঙল-জোয়ালই ছিল কৃষকের মূল ভরসা। কায়িক শ্রমের বিনিময়ে মাঠে ফলতো সোনালী ফসল। এখন আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির সাহায্যে জমিচাষ, বীজ বপন, চারা রোপণ, কাটা, মাড়াই সহ কৃষিতে হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কমেছে শ্রম ও খরচ, অপরদিকে বৃদ্ধি পেয়েছে উৎপাদন।

সরেজমিনে হরিপুর ইউনিয়নের আলিমগঞ্জ ব্লকের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন গ্রামে উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ ও দক্ষ করছেন। কৃষকেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি যন্ত্রপাতির সাহায্যে চাষাবাদ করছেন। এছাড়াও রাসায়নিক ও বালাইনাশক ছাড়াই জৈব্য সার ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফসল ধান, গম, আলু, ভুট্টা, শরিষা, পেঁয়াজ, মরিচ, করলা, বেগুন, পটল, পতিত জমিতে পুষ্টিবাগান তৈরী, বস্তায় আদা ও শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ ও উৎপাদন করছেন। এতে যেমন কৃষক দক্ষ হচ্ছেন, তেমনি উন্নত সেচব্যবস্থা এবং যান্ত্রিকীকরণের সাহায্যে চাষাবাদে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে কৃষির অবদানে খুলছে সম্ভাবনা দুয়ার। সৃষ্টি হচ্ছে বেকারত্ব দূরীকরণসহ উদ্যেক্তা তৈরী ও কর্মসংস্থানের সুযোগ, সেইসাথে কৃষকের উন্নয়ন। কৃষকের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। দেশ এগিয়ে যাবে উন্নত হবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

হরিপুর ইউনিয়নের আলিমগঞ্জ ব্লকের আলিমগঞ্জ গ্রামের কৃষক হাসান আলী জানান, “উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম এর পরামর্শে আধুনিক প্রযুক্তি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে সাত বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করবেন। এই যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ধান লাগালে আগে ট্রেতে বীজতলা তৈরী করে চারা করতে হয়। সেজন্য ব্রি-ধান-৯৩ ও ১০৩ বীজ বপন করেছেন। ট্রেতে ধানের চারা হতে সময় কম লাগে। কম সময়ে রোপণ করা যায়। চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়, সঠিক পদ্ধতিতে বীজ ছিটানো যায়, চারা উঠানো সহজ হয়, রোপণে গভীরতা সঠিক ও সারিতে চারা রোপণ হয়। আবার যন্ত্রের সাহায্যে লাইন করে চারা রোপণ করলে আগাছা নিড়ানো ভাল হয়, আলো বাতাস সঠিক পায়, শিষ বড় হয়, চিটা সংখ্যা কম হয়, সার ও কীটনাশক ছিটানো সহজ হয়, ফসল ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হয় ফলে ফলন ভালো হয়, ধান কাটা সহজ হয়, শ্রমিক খরচ ও শ্রম কম লাগে, অর্থ সাশ্রয় হয় এবং কৃষক উপকৃত হয়।”

একই ব্লকের আলিমগঞ্জ গ্রামের কৃষক শামীম হোসেন, কসবা গ্রামের কৃষক আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন ও রাসিকুল ইসলাম, মতিউর রহমান ও সাজেদুল ইসলাম জানান, “তাঁরা সবাই পাঁচ বিঘা জমিতে ব্রি-ধান-৯৩ ও ১০৩ ধান রোপণ করবেন সেজন্য ট্রেতে বীজতলা তৈরী করেছেন। এরজন্য ট্রেতে ঝরঝরে মাটি ভরে ধান বীজ ছিটিয়ে তার উপর হালকা পরিমাণ মাটি দিয়ে ঢেকে পানি স্প্রে করে বীজতলা তৈরি করে চারা করতে হয়। এক বিঘা জমির জন্য ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রেতে বীজ বপন করতে হয়। চারার বয়স ১৫ থেকে ২০ দিন হলেই মেশিনের সাহায্যে জমিতে লাগানো হবে। মেশিনের সাহায্যে এক বিঘা জমিতে ধান রোপণ করতে খরচ হয় ৬০০ টাকা। শ্রমিক দিয়ে চারা রোপণ করলে খরচ হবে এক হাজার ৫০০ টাকা। যন্ত্র দিয়ে ধান, গম, ভুট্টা সারিতে বোনা যায়। আবার একই সাথে ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তায় ভরা যায় এবং ফসল কাটার পর খড়ও আস্ত থাকে। তাতে শ্রম ও খরচ দুটোই কম হয়।”

উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের আলিমগঞ্জ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, “শ্রমিক সংকট ও মজুরী বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাস্টিকের ট্রেতে বীজতলা করায় ধানের চারা উত্তোলন, রোপণ সবই একযোগে করা যায়। এছাড়াও ফসলের চাষাবাদে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহারে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত হয়, পরিবেশ ও প্রকৃতির উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস হয়। জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি হয়। পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকেরা সেক্স ফেরোমেন, আঠালো ফাঁদ, রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার ব্যবহার করে চাষাবাদ করছেন। এতে ফসলের উৎপাদন খরচ কমছে ও ফলন বাড়ছে এবং ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। কৃষিকজে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারে ধান রোপণ, কাটা, মাড়াইয়ের কাজ কৃষকদের সহজ হবে এবং শ্রমিক-সংকট দূর হবে ফলে তাঁরা আর্থিকভাবে লাভবান এবং স্বাবলম্বী হবেন।”

পবা উপজেলার “উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা” কৃষিবিদ এম. এ. মান্নান জানান, “কৃষিতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি তথা কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমে, অল্প সময়ে অধিক ফসল লাগানো এবং কাটা যায়। ফলে একদিকে যেমন অর্থ সাশ্রয় হয়, অপরদিকে সময় ও কম লাগে এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে। দিন দিন ফসলের জমি কমে যাচ্ছে, জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আছি, অফিসে সেবা নিতে এসে যেন কোন কৃষক ঘুরে না যায়। নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন। এছাড়াও কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ অব্যাহত আছে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

পবায় বাড়ছে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার; কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা

আপডেট সময় : ০১:৩০:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

পবায় বাড়ছে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার; কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা

নিয়মিত বৃষ্টিতে উপযুক্ত পরিবেশ বিরাজ করায় রোপা আমন ধান চাষাবাদে কৃষকের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। বৃষ্টির জমে থাকা পানি দিয়ে বীজতলা তৈরি ও জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকেরা। মাঠজুড়ে লাঙল-জোয়াল, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারের শব্দ আর কৃষকদের হাঁকডাকে মুখরিত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টার (Rice Transplanter বা ধান রোপণ করা মেশিন) যন্ত্র দিয়ে কৃষিজমিতে ধানের চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা। সেই লক্ষ্যে প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ধানের চারা রোপনের লক্ষ্যে প্লাস্টিকের ট্রেতে বীজ বপন করে বীজতলা তৈরি করা সহ নানা ধরনের কর্মযজ্ঞ করছেন কৃষকেরা।

একসময় চাষাবাদে হালের বলদ, লাঙল-জোয়ালই ছিল কৃষকের মূল ভরসা। কায়িক শ্রমের বিনিময়ে মাঠে ফলতো সোনালী ফসল। এখন আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির সাহায্যে জমিচাষ, বীজ বপন, চারা রোপণ, কাটা, মাড়াই সহ কৃষিতে হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কমেছে শ্রম ও খরচ, অপরদিকে বৃদ্ধি পেয়েছে উৎপাদন।

সরেজমিনে হরিপুর ইউনিয়নের আলিমগঞ্জ ব্লকের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন গ্রামে উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ ও দক্ষ করছেন। কৃষকেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি যন্ত্রপাতির সাহায্যে চাষাবাদ করছেন। এছাড়াও রাসায়নিক ও বালাইনাশক ছাড়াই জৈব্য সার ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফসল ধান, গম, আলু, ভুট্টা, শরিষা, পেঁয়াজ, মরিচ, করলা, বেগুন, পটল, পতিত জমিতে পুষ্টিবাগান তৈরী, বস্তায় আদা ও শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ ও উৎপাদন করছেন। এতে যেমন কৃষক দক্ষ হচ্ছেন, তেমনি উন্নত সেচব্যবস্থা এবং যান্ত্রিকীকরণের সাহায্যে চাষাবাদে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে কৃষির অবদানে খুলছে সম্ভাবনা দুয়ার। সৃষ্টি হচ্ছে বেকারত্ব দূরীকরণসহ উদ্যেক্তা তৈরী ও কর্মসংস্থানের সুযোগ, সেইসাথে কৃষকের উন্নয়ন। কৃষকের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। দেশ এগিয়ে যাবে উন্নত হবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

হরিপুর ইউনিয়নের আলিমগঞ্জ ব্লকের আলিমগঞ্জ গ্রামের কৃষক হাসান আলী জানান, “উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম এর পরামর্শে আধুনিক প্রযুক্তি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে সাত বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করবেন। এই যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ধান লাগালে আগে ট্রেতে বীজতলা তৈরী করে চারা করতে হয়। সেজন্য ব্রি-ধান-৯৩ ও ১০৩ বীজ বপন করেছেন। ট্রেতে ধানের চারা হতে সময় কম লাগে। কম সময়ে রোপণ করা যায়। চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়, সঠিক পদ্ধতিতে বীজ ছিটানো যায়, চারা উঠানো সহজ হয়, রোপণে গভীরতা সঠিক ও সারিতে চারা রোপণ হয়। আবার যন্ত্রের সাহায্যে লাইন করে চারা রোপণ করলে আগাছা নিড়ানো ভাল হয়, আলো বাতাস সঠিক পায়, শিষ বড় হয়, চিটা সংখ্যা কম হয়, সার ও কীটনাশক ছিটানো সহজ হয়, ফসল ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হয় ফলে ফলন ভালো হয়, ধান কাটা সহজ হয়, শ্রমিক খরচ ও শ্রম কম লাগে, অর্থ সাশ্রয় হয় এবং কৃষক উপকৃত হয়।”

একই ব্লকের আলিমগঞ্জ গ্রামের কৃষক শামীম হোসেন, কসবা গ্রামের কৃষক আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন ও রাসিকুল ইসলাম, মতিউর রহমান ও সাজেদুল ইসলাম জানান, “তাঁরা সবাই পাঁচ বিঘা জমিতে ব্রি-ধান-৯৩ ও ১০৩ ধান রোপণ করবেন সেজন্য ট্রেতে বীজতলা তৈরী করেছেন। এরজন্য ট্রেতে ঝরঝরে মাটি ভরে ধান বীজ ছিটিয়ে তার উপর হালকা পরিমাণ মাটি দিয়ে ঢেকে পানি স্প্রে করে বীজতলা তৈরি করে চারা করতে হয়। এক বিঘা জমির জন্য ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রেতে বীজ বপন করতে হয়। চারার বয়স ১৫ থেকে ২০ দিন হলেই মেশিনের সাহায্যে জমিতে লাগানো হবে। মেশিনের সাহায্যে এক বিঘা জমিতে ধান রোপণ করতে খরচ হয় ৬০০ টাকা। শ্রমিক দিয়ে চারা রোপণ করলে খরচ হবে এক হাজার ৫০০ টাকা। যন্ত্র দিয়ে ধান, গম, ভুট্টা সারিতে বোনা যায়। আবার একই সাথে ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তায় ভরা যায় এবং ফসল কাটার পর খড়ও আস্ত থাকে। তাতে শ্রম ও খরচ দুটোই কম হয়।”

উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের আলিমগঞ্জ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, “শ্রমিক সংকট ও মজুরী বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাস্টিকের ট্রেতে বীজতলা করায় ধানের চারা উত্তোলন, রোপণ সবই একযোগে করা যায়। এছাড়াও ফসলের চাষাবাদে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহারে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত হয়, পরিবেশ ও প্রকৃতির উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস হয়। জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি হয়। পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকেরা সেক্স ফেরোমেন, আঠালো ফাঁদ, রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার ব্যবহার করে চাষাবাদ করছেন। এতে ফসলের উৎপাদন খরচ কমছে ও ফলন বাড়ছে এবং ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। কৃষিকজে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারে ধান রোপণ, কাটা, মাড়াইয়ের কাজ কৃষকদের সহজ হবে এবং শ্রমিক-সংকট দূর হবে ফলে তাঁরা আর্থিকভাবে লাভবান এবং স্বাবলম্বী হবেন।”

পবা উপজেলার “উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা” কৃষিবিদ এম. এ. মান্নান জানান, “কৃষিতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি তথা কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমে, অল্প সময়ে অধিক ফসল লাগানো এবং কাটা যায়। ফলে একদিকে যেমন অর্থ সাশ্রয় হয়, অপরদিকে সময় ও কম লাগে এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে। দিন দিন ফসলের জমি কমে যাচ্ছে, জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আছি, অফিসে সেবা নিতে এসে যেন কোন কৃষক ঘুরে না যায়। নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন। এছাড়াও কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ অব্যাহত আছে।”