পদ্মা পাড়ে বিনোদন নিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় দর্শনার্থীরা
- আপডেট সময় : ০২:৪৩:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ৪০ বার পড়া হয়েছে
পদ্মা পাড়ে বিনোদন নিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় দর্শনার্থীরা
এম এম মামুন, রাজশাহী প্রতিনিধি
পদ্মা পাড়ে বিনোদন নিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় দর্শনার্থীরা। সারা বছর সকাল থেকে সন্ধ্যা পযন্ত রাজশাহী মহানগরীর মানুষের সব সময়ের বিনোদনের সেরা ঠিকানা পদ্মা ধার। নির্মল বাতাস আর নৈসর্গিক পরিবেশে আনন্দ ভাগাভাগি করতে এই পদ্মার ধার বিভিন্ন বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে।
কিন্তু প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় পদ্মার ধার দখল করে গড়ে উঠছে অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসব ব্যবসায়ীদের সৃষ্ট নৈরাজ্যের কারণে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে বিনোদনের জন্য আসা মানুষেরা।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পদ্মার বাম তীর ঘেঁষে রাজশাহী সিটি করপোরেশন দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। সন্ধ্যায় পদ্মার ধারে আলো ঝলমলে পরিবেশ তৈরি হয়। তাই প্রতিদিন সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় পদ্মার ধারে সব বয়সের মানুষের ঢল নামে। সিটি করপোরেশনের সব বিনোদন কেন্দ্রকে ঘিরে ‘ব্যাঙের ছাতার’ মতো গজিয়ে ওঠেছে চটপটি-ফুচকা, ভাজা, ফাস্টফুড, পেয়ারা মাখাসহ নানা কিসিমের দোকানপাট।
এছাড়া বাদামওয়ালা, চা-কফির দোকানসহ বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কারণেও নষ্ট হচ্ছে পদ্মার ধারের নির্মল সৌন্দর্য। এসব ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে অসহায় বিনোদনপিপাসু মানুষ। অবৈধ স্থাপনা গড়ে, ফিতা টানিয়ে এমনকি চেয়ার পেতে পদ্মার ধার দখলে নিয়েছে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যবসায়ীর উৎপাতে পদ্মার ধারে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অবৈধ ব্যবসায়ীদের পেতে রাখা চেয়ারগুলো যেন মানুষের সঙ্গে প্রতারণার ফাঁদ! চেয়ারে বসলেই গুনতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
সিটি করপোরেশন নির্মিত সুন্দর ফুটপাত এমনকি রাস্তায়ও চেয়ার পেতে পথচারীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জানান, পদ্মা গার্ডেন এলাকার একটি চটপটির দোকানের চারটি চেয়ারের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয় অথবা উচ্চমূল্যের চটপটি কিনতে বাধ্য করা হয়। টাকা দিতে বিলম্ব হলে দুর্ব্যবহার এমনকি প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা হয়। শুধু এই চটপটির দোকানই নয়, নগরীর পঞ্চবটি ‘আইবাঁধ’ থেকে শ্রীরামপুর ‘টি-বাঁধ’ হয়ে পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক পর্যন্ত পদ্মার ধার এলাকায় সম্প্রতি ঘুরে চোখে পড়ে এসব খুচরা দোকানদারদের সৃষ্ট অরাজকতা। নির্মল বিনোদন জায়গা হিসেবে ছোট-বড় সব মানুষের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পদ্মার ধার। এই সুযোগে কিছু খুচরা ব্যবসায়ী পদ্মার ধারে আধিপত্য বিস্তার করেছে। সবচেয়ে খারাপ নজির সৃষ্টি করেছে ‘চেয়ার ভাড়ার কৌশল’। গোটা পদ্মার ধার জুড়েই বিনোদনের জন্য আসা মানুষদের আতঙ্কের অন্য নাম এই ‘চেয়ার ভাড়াব। সব মিলিয়ে পদ্মার ধারে শতাধিক চক্র গড়ে উঠেছে।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে বাগমারা উপজেলার আমজাদ হোসেন বলেন, অবৈধ দখল ও ব্যবসার কারণে এখন পদ্মার ধারে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না। নদীর ধারে পা রাখলেই নানা বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে। এসব ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জামাত খান পদ্মাপাড়ে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুছ বলেন, এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ তাদের কাছে নেই। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্যানেল মেয়র-১ শরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নয়, বিনোদনের জন্য আসা মানুষ ও ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চাঁদাবাজি ও হয়রানি করছে এলাকাভিত্তিক চক্র। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করে না। অভিযোগ পেলে পুলিশের মাধ্যমে ওই চক্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়া হবে।