ঢাকা ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাটোর জেলায় দুই বছরে ২শ কুষ্ঠ রোগী সনাক্ত

নাটোর প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় : ০৩:০৭:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ ১৩০ বার পড়া হয়েছে

collected

চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নাটোর জেলায় দুই বছরে ২শ কুষ্ঠ রোগী সনাক্ত

নাটোর জেলায় ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২শ রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৮ সালে সর্বচ্চো ৩১ জনকে সনাক্ত করা হয়। ২০১২ সালে সনাক্ত হয় ১৪ জন রোগী। চলতি বছরে সনাক্তকৃত ৯ জন রোগী নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন। কুষ্ঠ রোগ নির্মূল করার লক্ষ্যে নাটোরে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেন, কুষ্ঠ একটি স্নায়বিক রোগ। কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা নিলে এ রোগ সম্পূর্ণ ভাল হয়। তবে চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করলে এ রোগে বিকলঙ্গতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নাটোরের বেশ কয়েকজন আক্রান্ত কুষ্ঠ রোগীর দেয়া তথ্যে জানা যায়, তারা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে যারা নানা কারনে চিকিৎসা নিতে দেরী করেছেন সুস্থ হলেও তাদের অনেকেরই শরীরের আক্রান্ত স্থানে অনুভুতিহীন দাগ রয়ে গেছে।

নাটোর সদর উপজেলার দস্তানাবাদ গ্রামের আশরাফুল ইসলাম জানান, তিনি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রথম দিকে শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘা’ দেখা দেওয়ায় তিনি বিভিন্ন টোটকা চিকিৎসা সহ স্থানীয় চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। তার শরীরে কুষ্ঠ রোগ হয়েছে জানার পর কুষ্ঠ চিকিৎসা গ্রহন করেন তিনি। ঘা’ ভেবে শুরুতে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু কোন উন্নতি হয়না। পরে লেপ্রা বাংলাদেশ এর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পারেন তার শরীরে কুষ্ঠ রোগ দানা বেধেছে। তাদের পরামর্শ ও সহযোগীতায় কুষ্ঠ চিকিৎসা গ্রহণ করার পর সুস্থ হয়ে উঠিছেন। তবে শরীরের আক্রান্ত স্থানে অনুভুতিহীন দাগ রয়ে গেছে। অবশ্য বর্তমানে তিনি কাজ কর্ম করতে পারেন।

একই গ্রামের কুষ্ঠ আক্রান্ত আব্দুর রহমান জানান, তার চোখ ও হাতে ফোসকা পড়ে। বিভিন্ন সথানে চিকিৎসা কর্ওে কোন নিরাময় হয়না। পরে তিনি লেপ্রা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের পরামর্শ ও তাদের সরবরাহকৃত ঔষধ নিয়মানুয়ী সেবন করার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে দাগ পড়া ডান চোখে আর কিছুই দেখতে পাইনা ফোসকা পড়া হাতে অনুভুতিহীন দাগ রয়ে গেছে।

লেপ্রা বাংলাদেশের প্রজেক্ট ম্যানেজার টমাস সিংহ বলেন, কুষ্ঠ আক্রান্ত রোগী নির্নয় করতে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি তারা কাজ করে চলেছেন। কুষ্ঠ রোগী সনাক্তের পর তাদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করা হয়। যারা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন তারা দ্রুত আরোগ্য বা ভালো হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন,নাটোর জেলায় ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২শ রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৮ সালে সর্বচ্চো ৩১ জনকে সনাক্ত করা হয়। ২০১২ সালে সনাক্ত হয় ১৪ জন রোগী। চলতি বছরে সনাক্তকৃত ৯ জন রোগী নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নাটোর সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, মৃদু সংক্রমণশীল কুষ্ঠ রোগের জীবাণু হাঁচি, কাশি বা বতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। ত্বকে দৃশ্যমান হলেও কুষ্ঠ একটি স্নায়বিক রোগ। কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা নিলে এ রোগ সম্পূর্ণ ভাল হয়। তবে চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করলে এ রোগে বিকলঙ্গতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চিকিৎসা গ্রহন করে বিকলঙ্গতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। দেশের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের সকল সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে কুষ্ঠ নির্মূলে প্রচারণা, উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

নাটোর জেলায় দুই বছরে ২শ কুষ্ঠ রোগী সনাক্ত

আপডেট সময় : ০৩:০৭:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

নাটোর জেলায় দুই বছরে ২শ কুষ্ঠ রোগী সনাক্ত

নাটোর জেলায় ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২শ রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৮ সালে সর্বচ্চো ৩১ জনকে সনাক্ত করা হয়। ২০১২ সালে সনাক্ত হয় ১৪ জন রোগী। চলতি বছরে সনাক্তকৃত ৯ জন রোগী নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন। কুষ্ঠ রোগ নির্মূল করার লক্ষ্যে নাটোরে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেন, কুষ্ঠ একটি স্নায়বিক রোগ। কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা নিলে এ রোগ সম্পূর্ণ ভাল হয়। তবে চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করলে এ রোগে বিকলঙ্গতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নাটোরের বেশ কয়েকজন আক্রান্ত কুষ্ঠ রোগীর দেয়া তথ্যে জানা যায়, তারা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে যারা নানা কারনে চিকিৎসা নিতে দেরী করেছেন সুস্থ হলেও তাদের অনেকেরই শরীরের আক্রান্ত স্থানে অনুভুতিহীন দাগ রয়ে গেছে।

নাটোর সদর উপজেলার দস্তানাবাদ গ্রামের আশরাফুল ইসলাম জানান, তিনি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রথম দিকে শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘা’ দেখা দেওয়ায় তিনি বিভিন্ন টোটকা চিকিৎসা সহ স্থানীয় চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। তার শরীরে কুষ্ঠ রোগ হয়েছে জানার পর কুষ্ঠ চিকিৎসা গ্রহন করেন তিনি। ঘা’ ভেবে শুরুতে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু কোন উন্নতি হয়না। পরে লেপ্রা বাংলাদেশ এর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পারেন তার শরীরে কুষ্ঠ রোগ দানা বেধেছে। তাদের পরামর্শ ও সহযোগীতায় কুষ্ঠ চিকিৎসা গ্রহণ করার পর সুস্থ হয়ে উঠিছেন। তবে শরীরের আক্রান্ত স্থানে অনুভুতিহীন দাগ রয়ে গেছে। অবশ্য বর্তমানে তিনি কাজ কর্ম করতে পারেন।

একই গ্রামের কুষ্ঠ আক্রান্ত আব্দুর রহমান জানান, তার চোখ ও হাতে ফোসকা পড়ে। বিভিন্ন সথানে চিকিৎসা কর্ওে কোন নিরাময় হয়না। পরে তিনি লেপ্রা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের পরামর্শ ও তাদের সরবরাহকৃত ঔষধ নিয়মানুয়ী সেবন করার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে দাগ পড়া ডান চোখে আর কিছুই দেখতে পাইনা ফোসকা পড়া হাতে অনুভুতিহীন দাগ রয়ে গেছে।

লেপ্রা বাংলাদেশের প্রজেক্ট ম্যানেজার টমাস সিংহ বলেন, কুষ্ঠ আক্রান্ত রোগী নির্নয় করতে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি তারা কাজ করে চলেছেন। কুষ্ঠ রোগী সনাক্তের পর তাদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করা হয়। যারা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন তারা দ্রুত আরোগ্য বা ভালো হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন,নাটোর জেলায় ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২শ রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৮ সালে সর্বচ্চো ৩১ জনকে সনাক্ত করা হয়। ২০১২ সালে সনাক্ত হয় ১৪ জন রোগী। চলতি বছরে সনাক্তকৃত ৯ জন রোগী নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নাটোর সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, মৃদু সংক্রমণশীল কুষ্ঠ রোগের জীবাণু হাঁচি, কাশি বা বতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। ত্বকে দৃশ্যমান হলেও কুষ্ঠ একটি স্নায়বিক রোগ। কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা নিলে এ রোগ সম্পূর্ণ ভাল হয়। তবে চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করলে এ রোগে বিকলঙ্গতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চিকিৎসা গ্রহন করে বিকলঙ্গতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। দেশের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের সকল সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে কুষ্ঠ নির্মূলে প্রচারণা, উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করছে।