নাটোরে ৮ বছর পর জেলা আ’লীগের কাউন্সিল
- আপডেট সময় : ১১:০১:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ৪২ বার পড়া হয়েছে
নাটোরে ৮ বছর পর জেলা আ’লীগের কাউন্সিল
নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরে ৮ বছর পর জেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামীকাল রোববার (২০ ফেব্রুয়ারী) শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
এই কাউন্সিলকে সামনে রেখে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে নাটোরের শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়াম সহ আশ পাশের এলকা। কাউন্সিল সফল হওয়া সহ নেতৃবৃন্দকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শহর জুড়ে টানানো হয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন। নিমার্ণ করা হয়েছে একাধিক তেলণ। কাউন্সিলকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ ও উদ্দিপনার কমতি নেই। তবে দির্ঘদিন ধরে চলে আসা নেতাদের মধ্যে বিরাজমান অভ্যন্তরিন কোন্দল প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে।
এনিয়ে উত্তেজনার পাশাপাশি কাদা ছোড়াছুড়িও থেমে নেই। এক পক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করতে নৌকার বিরোধীতাকারী আখ্যায়িত করছেন। একে অপরের বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপির সাথে সখ্যতার অভিযোগ তুলছেন। বর্তমান সরকার তিনবার ক্ষমতায় থাকায় সবাই নৌকায় উঠতে চাইছেন।
সম্মেলনকে ঘিরে জেলার নেতা কর্মিদের মধ্যে যেমন রয়েছে অনন্দ উল্লাস। অনেকের আশা এই সম্মেলনে দলের লক্ষাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা উপস্থিত থাকবেন। তেমনি রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও। কাকে দলের নেতৃত্ব দেওয়া হবে এনিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। কেউ চাইছেন নতুন মুখ, কারো কারো মতে যারা ছিলেন তারাই আবারও নেতৃত্বে থাকছেন।
রোববারের কাউন্সিলে ভার্চ্যুয়াল যোগ দিয়ে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতা দিবেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। কাউন্সিলের উদ্বোধক থাকবেন সভাপতি মন্ডলীর সদস্য আব্দুল রহমান। কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল প্রধান বক্তা এবং বিশেষ অতিথি থাকবেন সভাপতি মন্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য। এছাড়া এক ডজন মন্ত্রী এমপি বক্তব্য রাখবেন বলে দলীয় সুত্রে জানা গেছে।
এদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের পক্ষে প্রতিদিন চলছে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ মিছিল মিটিং। শহরে পোষ্টারিং এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থীদের অনুসারীরা। টান টান উত্তেজনার মধ্যেই একের পর এক ছাড়া হচ্ছে নেতাদের বক্তব্যের পালটা পালটি ভিডিও।
বর্তমান জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি ছাড়াও এবার সভাপতি হতে চান, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার ও বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী।
সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপির বিপক্ষে এবার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক শেখ, বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কে এম জাকির হোসেন।
এদিকে বেশ কিছু দিন থেকে নাটোরের পাঁচ এমপির মধ্যে চারজন সদরের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে আয়োজিত দলের সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন আলাদাভাবে। দলের কাউন্সিলের আগে বড় ধরনের কোন ঘটনা না ঘটায় স্বস্তিতে রয়েছেন দলের তৃনমুল নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। তবে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিকারী সহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আগামীতে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিককে দলের নেতৃত্ব প্রদান করা হবে এমন প্রত্যাশা করছেন।
নাটোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও (নাটোর-নওগাঁ) সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রত্না আহমেদ বলেছেন, বিগত কমিটি তেমন কোন কাজ করতে না পারায় তিনি আশাহত। তিনি বলেন, আমাদের ব্যবহারের কারণে প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দূরে চলে গেছে, হাইব্রীড কাউয়া লীগ দলে ঢুকে পড়েছে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেছেন, যারা বিদেশে সেকেন্ড হোম তৈরী করেছে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে দল তাদের এবার প্রত্যাখান করবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মালেক তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারন করে তার প্রয়াত ভাই জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সফল সাধারন সম্পাদক হানিফ আলী শেখের শেখানো পথেই সুস্থ রাজনীতি করছেন। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যেমে স্থবিরতা কাটিয়ে দলে প্রাণের সঞ্চার হবে এমনটাই আশা করেন তিনি।
জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেছেন, এবারের কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ন পদ সমূহে যেন প্রকৃত আওয়ামী লীগের পরিবারের সন্তানেরা পায়। অভিমানে যারা দূরে সরে রয়েছেন তারা আবার ফিরে আসবেন সেই প্রত্যাশা করেন তিনি।
নাটোর-১ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ৮ বছরের যে স্থবিরতা চলছে তা কাটানোর জন্য এবারের কাউন্সিলে একটা ভালো কমিটি হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দলের হাল ধরতে যোগ্যদের নেতৃত্বে আনবেন তেমনটা আশা করেন তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি বলেন, কাউন্সিলে তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে বাধা দেয়ার জন্য বিপুল পরিমান টাকা ঢালছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তার বিরোধী কয়েকজনকে বিপুল পরিমান টাকা দিয়েছেন দুলু। যেন আমি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে না পারি। তবে যাকেই দলের নেতৃতত্বে আনা হবে তিনি তা মেনে আওয়ামীলীগকে আরো শক্তিশালী করে জেএমবি জঙ্গিদের গড ফাদার দুলু ও সন্ত্রাস মুক্ত এবং অর্থনৈতিক শক্তিশালী নাটোর গড়তে নিরলসভাবে কাজ করবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি বলেন, স্বাধীনতার পর ২০১৪ সালে একবারই ভোটের মাধ্যমে নাটোরে কমিটি গঠন হয়েছে। সেই কমিটিতেই তিনি সভাপতি নিবার্চিত হয়েছেন। নাটোরে ৮ বছর পর জেলা আ’লীগের কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। এবারো ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের তিনি প্রত্যাশা করেন। এরপরই প্রধানমন্ত্রী যেটা ভাল মনে করবেন সেটাই হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মেয়র, এমপি, মন্ত্রী সবই অস্থায়ী ঠিকানা। আমাদের স্থায়ী ঠিকানা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। প্রতিটি নেতাকর্মীর জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হলো আন্দোলন, সম্মেলন ও নিবার্চন। প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের জন্য সঠিক নেতৃত্ব দিবেন বলে তিনি বিশ্বাস রাখেন।