ঢাকা ০৭:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নাটোরে ২৭৭ কিলোমিটার খাল পুনঃ খনন, সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোরঃ
  • আপডেট সময় : ০১:৪১:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ১০৮ বার পড়া হয়েছে

collected

চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নাটোরে ২৭৭ কিলোমিটার খাল পুনঃ খনন, সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা

নাটোর জেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) পানাসি প্রকল্পের অধীনে পুনঃ খননকৃত ২৭৭ কিলোমিটার খালের সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। খাল পুনঃ খনন করার ফলে চলনবিল অদ্যুষিত সিংড়া উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় খালের পানি ব্যবহার করে অল্প খরচে সেচ সুবিধার পাশাপাশি অধিক ফলন উৎপাদন করতে পারছেন কৃষকরা। একই সাথে খালে সংরিক্ষত মাছ শিকারের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। এদিকে পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে খাল সংস্কার ও ভূগর্ভস্থ সেচ নালা তৈরীর মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন করে অধিক খাদ্যশস্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বিএডিসি বিভাগ।

বিএডিসি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০-২১অর্থ বছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত নাটোর জেলায় ২৭৭ কিলোমিটার খাল/খাড়ি পুনঃখনন করা হয়েছে। এরমধ্যে শুধু চলনবিল অদ্যুষিত সিংড়া উপজেলাতেই ১৮৬ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। সিংড়ায় ১৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। জেলাজুড়ে ৩৩ হাজার হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। পুনঃ খননকৃত খালের মধ্যে সিংড়া উপজেলায় তিশিখালী খাল, সোয়াইড় টু কদমা খাল, নিয়ামত খাল, শ্রীখন্ড খাল, বরবরিয়া খাল, লালপুর উপজেলায় গোপালপুর খাল, গুরুদাসপুর উপজেলায় বিলসা খাল, চাপিলা মির্জা মাহমুদ খাল উল্লেখযোগ্য। খাল পুনঃখননের ফলে জেলায় অতিরিক্ত ১ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এক ফসলি জমিগুলো বর্তমানে তিন ফসলি জমিতে রুপ নিয়েছে। এছাড়া, পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৪ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ সেচনালা তৈরী করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, জুলাই অভ্যুস্থানের আগে সিংড়ার খালগুলো প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় খালের পানি সেচ কাজে ব্যবহার ও খালে সংরক্ষিত মাছ শিকার করতে পারেনি স্থানীয়রা। জুলাই গণঅভ্যুস্থানের পর খালের সকল সুবিধা পাওয়ায় ও রাস্তা ব্যবহার করতে পারায় স্বস্তি ফিরেছে কৃষকের মাঝে। তবে অভিযোগ রয়েছে, জেলায় কোথাও কোথাও খাল দখলের পায়তারা করছেন স্থানীয়রা প্রভাবশালীরা। যদিও সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনে খাল দখল ঠেকাতে মনিটরিং চালিয়ে যাচ্ছে।

সিংড়া উপজেলার হিজলী গ্রামের কৃষক রাকিব আল হাসান, মোঃ আপেল, রবিউল ইসলাম, ছবিরণ বিবি জানান, খাল পুনঃখননের সকল সুবিধা এখন ভোগ করতে পারছি। সেচ সুবিধা, মাছ শিকার, খালের পাড়ের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত সুবিধা ভোগ করতে পারছি। জুলাই অভ্যুস্থানের আগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা খাল গুলো দখলে রাখায় এতদিন বঞ্চিত ছিল কৃষকরা। এখন আমরা সব সুবিধা পাচ্ছি।

সিংড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দাউদার মাহমুদ জানান, সাবেক সরকারের আমলে অপরিকল্পিত ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে খাল পুনঃখনন করা হয়। সে সময় প্রভাবশালীদের দখল দারিত্বের কারণে কৃষকরা এর সুফল থেখে বঞ্চিত ছিল। এখনও সাবেক সরকারের দোসর খাল দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে যা আমরা প্রতিহত করব।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন কর্পোরেশন নাটোর রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিএডিসির পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে পুনঃখননকৃত খালের মাধ্যমে জেলায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ১ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। চলনবিলসহ বিভিন্ন উপজেলায় খালের পানি সংরক্ষিত রয়েছে এবং কৃষকরা অল্প খরচে জমিতে সেচ দিয়ে অধিক ফলন উৎপাদন করতে পারছেন।

জলাবদ্ধতা নিরসনের কারণে বোরো মৌসুমে সরিষার আবাদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুনঃখননকৃত খালে দেশি মাছের ব্যপক উৎপাদন বেড়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকের মাঝে হাঁস পালনের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

নাটোরে ২৭৭ কিলোমিটার খাল পুনঃ খনন, সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা

আপডেট সময় : ০১:৪১:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

নাটোরে ২৭৭ কিলোমিটার খাল পুনঃ খনন, সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা

নাটোর জেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) পানাসি প্রকল্পের অধীনে পুনঃ খননকৃত ২৭৭ কিলোমিটার খালের সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। খাল পুনঃ খনন করার ফলে চলনবিল অদ্যুষিত সিংড়া উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় খালের পানি ব্যবহার করে অল্প খরচে সেচ সুবিধার পাশাপাশি অধিক ফলন উৎপাদন করতে পারছেন কৃষকরা। একই সাথে খালে সংরিক্ষত মাছ শিকারের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। এদিকে পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে খাল সংস্কার ও ভূগর্ভস্থ সেচ নালা তৈরীর মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন করে অধিক খাদ্যশস্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বিএডিসি বিভাগ।

বিএডিসি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০-২১অর্থ বছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত নাটোর জেলায় ২৭৭ কিলোমিটার খাল/খাড়ি পুনঃখনন করা হয়েছে। এরমধ্যে শুধু চলনবিল অদ্যুষিত সিংড়া উপজেলাতেই ১৮৬ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। সিংড়ায় ১৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। জেলাজুড়ে ৩৩ হাজার হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। পুনঃ খননকৃত খালের মধ্যে সিংড়া উপজেলায় তিশিখালী খাল, সোয়াইড় টু কদমা খাল, নিয়ামত খাল, শ্রীখন্ড খাল, বরবরিয়া খাল, লালপুর উপজেলায় গোপালপুর খাল, গুরুদাসপুর উপজেলায় বিলসা খাল, চাপিলা মির্জা মাহমুদ খাল উল্লেখযোগ্য। খাল পুনঃখননের ফলে জেলায় অতিরিক্ত ১ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এক ফসলি জমিগুলো বর্তমানে তিন ফসলি জমিতে রুপ নিয়েছে। এছাড়া, পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৪ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ সেচনালা তৈরী করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, জুলাই অভ্যুস্থানের আগে সিংড়ার খালগুলো প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় খালের পানি সেচ কাজে ব্যবহার ও খালে সংরক্ষিত মাছ শিকার করতে পারেনি স্থানীয়রা। জুলাই গণঅভ্যুস্থানের পর খালের সকল সুবিধা পাওয়ায় ও রাস্তা ব্যবহার করতে পারায় স্বস্তি ফিরেছে কৃষকের মাঝে। তবে অভিযোগ রয়েছে, জেলায় কোথাও কোথাও খাল দখলের পায়তারা করছেন স্থানীয়রা প্রভাবশালীরা। যদিও সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনে খাল দখল ঠেকাতে মনিটরিং চালিয়ে যাচ্ছে।

সিংড়া উপজেলার হিজলী গ্রামের কৃষক রাকিব আল হাসান, মোঃ আপেল, রবিউল ইসলাম, ছবিরণ বিবি জানান, খাল পুনঃখননের সকল সুবিধা এখন ভোগ করতে পারছি। সেচ সুবিধা, মাছ শিকার, খালের পাড়ের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত সুবিধা ভোগ করতে পারছি। জুলাই অভ্যুস্থানের আগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা খাল গুলো দখলে রাখায় এতদিন বঞ্চিত ছিল কৃষকরা। এখন আমরা সব সুবিধা পাচ্ছি।

সিংড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দাউদার মাহমুদ জানান, সাবেক সরকারের আমলে অপরিকল্পিত ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে খাল পুনঃখনন করা হয়। সে সময় প্রভাবশালীদের দখল দারিত্বের কারণে কৃষকরা এর সুফল থেখে বঞ্চিত ছিল। এখনও সাবেক সরকারের দোসর খাল দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে যা আমরা প্রতিহত করব।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন কর্পোরেশন নাটোর রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিএডিসির পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে পুনঃখননকৃত খালের মাধ্যমে জেলায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ১ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। চলনবিলসহ বিভিন্ন উপজেলায় খালের পানি সংরক্ষিত রয়েছে এবং কৃষকরা অল্প খরচে জমিতে সেচ দিয়ে অধিক ফলন উৎপাদন করতে পারছেন।

জলাবদ্ধতা নিরসনের কারণে বোরো মৌসুমে সরিষার আবাদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুনঃখননকৃত খালে দেশি মাছের ব্যপক উৎপাদন বেড়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকের মাঝে হাঁস পালনের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।