নাটোরে বর ঘোড়ায় চড়ে এসে নববধূকে নিয়ে গেলো পালকিতে!
- আপডেট সময় : ০৭:০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১৯৫ বার পড়া হয়েছে
নাটোরে বর ঘোড়ায় চড়ে এসে নববধূকে নিয়ে গেলো পালকিতে!
বিশেষ নাটোর প্রতিনিধিঃ
ঘোড়ায় চড়ে বর আসে বিয়ে করতে এবং কনেকে নিয়ে যাওয়া হয় পালকিতে করে বিয়ের এমন অনুষ্ঠান রুপ কথার গল্পের মত শোনালেও নাটোরের হালসা গ্রামে হয়েছে এই বিয়ের অনুষ্ঠান। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বরের ঘোড়ায় চড়ে এসে বিয়ে করে কনেকে পালকিতে করে নিয়ে যাওয়ার বিয়ে হারিয়ে গেলেও নাটোর সদর উপজেলার হালসা গ্রামে বিয়ে করতে বর আসেন ঘোড়ায় চড়ে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নববধুকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামীণ বিয়ের ঐতিহ্যবাহী বাহন ‘পালকি’তে করে।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) এমন বিয়ে দেখেতে বর কনের বাড়িতে ভিড় করে এলাকাবাসী। এমন একটি বিয়ের কথা এখন মানুষের মুখে মুখে। বিয়ের অনুষ্ঠানকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য দুই পরিবারের সম্মতিতে এমন বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য পালকিতে বিয়ের রীতি অনুসারে আয়োজন করা হয় এই বিয়ে।
এলাকাবাসীরা জানায়, বর কনে দুজনার বাড়ি একই এলাকায়। বর কনে একে অপরের প্রতিবেশী। বর সালমান সাফি সৌরভ রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। আর কনে মারিয়া খাতুন নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। পূর্ব পরিচয় থাকলেও দুই পরিবারের সম্মতিতে তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বর সালমান সাফি সৌরভ হালসা গ্রামের ফরহাদ আলীর ছেলে এবং কনে মারিয়া খাতুন একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
বর সালমান সাফি সৌরভ জানান, তাদের উভয়ের পরিবারের বাবা-মায়ের শখ ছিল তাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখবেন। তাই আমাদের বিয়েটাকে স্মরণীয় করে রাখতে দুই পরিবারের সম্মতিতে এমন আয়োজন হয়। তিনি ঘোড়া চেপে কনের বাড়িতে যান বর যাত্রি নিয়ে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নববধুকে পালকিতে করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এই আয়োাজনের মধ্য দিয়ে হাড়িয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্যকেও নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দ্যেশ্য ছিল আমাদের দুই পরিবারের।
কনে মারিয়া খাতুন জানান, এমন আয়োজনে তিনি অনেক খুশি। নববধুর সাজে পালকিতে করে যাওয়ার অনুভুতি ছিল অন্য রকম। খুব ভাল লেগেছে। পালকিতে করে যাওয়ার সময় রুপকথার গল্প মনে পড়ে। পালকিতে করে শশুর বাড়িতে যাব তার বাবার এমন ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। এছাড়া পালকিতে বিয়ের এই আনুষ্ঠানিকতা জীবনের সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে।
প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক, কাউছার, শরিফুল জানান, বুধবার বিয়ের দিন দুপুরে ঘোড়ায় চড়ে নিজ বাড়ি থেকে একই এলাকায় কনের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন বর ও শতাধিক বরযাত্রী। গ্রামের পথ মাড়িয়ে কনের বাড়িতে পৌঁছায় বরযাত্রীরা। নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে চলে বরযাত্রীদের মধ্যাহ্ন ভোজ করানো হয়। শেষে নববধূকে পালকিতে বসিয়ে বাড়ি ফেরেন বর সালমান সাফি সৌরভ। উভয়ের পরিবারের ইচ্ছাতেই বিয়ের এমন আয়োজন করা হয়। বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। বিয়ের এমন আয়োজনে দুই পরিবারসহ গোটা গ্রামের মানুষ আনন্দ আনন্দ পেয়েছেন। রুপ কথার গল্প পড়ে এমন কাহিনী সম্পর্কে জেনেছিলেন। আজ স্বচক্ষে এমন বিয়ে দেখে বেশ আনন্দ পেয়েছি।
এদিকে ঘোড়ায় চড়া বর আর সুসজ্জিত পালকিতে বউ দেখতে গ্রামের নানা বয়সী মানুষ ভির জমায় বর-কনের বাড়িতে। ঘোড়ায় চড়া বর ও পালকিতে কনেকে এক নজর দেখতে রাস্তার দুধারেও শিশু সহ নানা বয়সী মানুষ ভিড় করে।
বরযাত্রি সুমন ও হাবিব জানান, তারা তাদের দাদি নানীর মুখে পালকিতে বিয়ের গল্প শুনেছেন। সেই গল্প আজ নিজে চেখে দেখলেন। ঘোড়ায় চড়ে বর এবং পালকিতে কনেকে দেখে ভাল লেগেছে। বিরুল এই সময়ের সঙ্গি হতে পেরে ভাল লাগছে।