ছোটবেলায় মানুষের হুকুমে কাটতেন মেসওয়াক, সেই থেকে কেটে গেছে ৩৩ বছর!
![](https://channelanews.com/wp-content/themes/newspaper-pro/assets/images/reporter.jpg)
- আপডেট সময় : ০২:৪৪:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪ ৩০১ বার পড়া হয়েছে
ছোটবেলায় মানুষের হুকুমে কাটতেন মেসওয়াক, সেই থেকে কেটে গেছে ৩৩ বছর!
বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধিঃ
ঘাড়ে গামছা, মাথায় সাদা টুপি। কাঁধে ঝোলানো থোলের মতো একটি ব্যাগ। ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন বাজারের দোকানে দোকানে। কপালের উপর হাত তুলে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সালাম। তাকে দেখে প্রথমে মনে হতে পারে কোনো সাহায্যের জন্য হাত বাড়াচ্ছেন। কিন্তু না কালবর্ণ চেহারায় মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। গায়ে পড়ে আছেন তিন পকেট বিশিষ্ট হাফশার্ট, পরনে কালো রঙের ঢিলেঢালা প্যান্ট। আর ছেঁড়া-ফাটা এক জোড়া সেন্ডেল পায়ে দিয়ে পুরাতন একটি বাইসাইকেল করে বাজারে বাজে ঘুরাবেড়ানো মানুষটি সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান না। বরং সালান দিয়ে হাত বাড়িয়ে তিনি রোজাদার মানুষের হাতে বিনামূল্যে তুলে দিচ্ছেন মেসওয়াক বা দাতন।
প্রায় দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে রমজান মাসে রোজাদারদের মাঝে এভাবেই বিনামূল্যে দাতন (মেসওয়াক) বিলি করে আসছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চকমাহাপুর গ্রামের মৃন আহাদ আলীর ৬১ বছরের ছেলে মাহাতাব আলী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাহাতাব আলী জেলার লালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের কৃষ্ণা খামারে দৈনিক মুজুরীতে ওয়াচম্যান বা প্রহরী পদে কাজ করতেন। কিন্তু বয়সের ভারে সেই কাজটিও এখন আর করতে পারেননা। তাই নিজের সংসার চালাতে প্রতিনিয়তই হিমশিম খেতে হয় তাকে। কিন্তু রমজান মাস এলেই সে সবকিছু পেছনে ফেলে মেসওয়াক নিয়ে ছুটে যান রোজাদার মানুষের কাছে।
এ বিষয়ে মাহাতাব আলী বলেন, বাবার অভাব-দারিদ্রতার কষাঘাতে তাঁর ভাগ্যে পড়ালেখা জোটেনি। সেই ছোটবেলা থেকে রমজান মাসে বাড়ির পাশের বাজারে গিয়ে বসে থাকতেন মাহাতাব আলী। আর বিকেল হলেই ওই বাজারের প্রায় সবাই তাঁকে দাঁতন নিয়ে আসতে হুকুম করতেন। এথেকেই অদ্ভুত এক নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। তিনি মনে করেন, কেউ হুকুম করার আগেই যদি তার মেসওয়াকটা হাতের কাছে এনে দেওয়া যেত, তাহলে লোকটি বোধ হয় আরো বেশি খুশি হতেন। মানুষের সেই হুকুম আর তাঁর সেই ভাবনা থেকেই তিনি মেসওয়াক বিতরণ শুরু করেন। এরপর ৩৩ বছর ধরে রমজান মাসে মেসওয়াকের ব্যাগ নিয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলার সকল প্রান্ত সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট-বাজারে ও মসজিদের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর বিনামূল্যে মেসওয়াক বিতরণ করছেন। বিনামূল্যে মেসওয়াক বিতরণ করে তিনি অনেক আনন্দ পান।
তিনি আরো বলেন, সেহেরী খাওয়ার পর থেকে সারা সকাল মেসওয়াক বানিয়ে দুপুরের পরই বেরিয়ে পড়েন বিতরণ করতে। এ কাজে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা তাঁকে সহযোগিতা করেন। মূলত তিনি নিম গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক বানান। একাজের জন্য নিম গাছের মালিকরা তাকে দাওয়াত করে ডেকে নিয়ে যান। তাছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য ঔষধি গাছ আপাংয়ের ডালের বিশেষ মেসওয়াক তৈরি করেন তিনি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজাদারদের মাঝে মেসওয়াক বিতরণ করছেন বলেও জানান তিনি। তিনি যেন সুস্থ থেকে দীর্ঘ দিন যাবৎ এভাবেই সকলের মাঝে মেসওয়াক বিতরণ করতে পারেন সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন।
ব্যাক্তি জীবনে তিনি স্ত্রী সহ তিন সন্তানের জনক। পৌর এলাকার বাসিন্দা রেজাউন্নবী বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে দেখছি পুরো রমজান মাস মাহাতাব রোজাদারদের বিনামূল্যে মেসওয়াক দিয়ে খেদমত করেন। এই বয়সে বিনা টাকায় সেবাদান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।