চারঘাটে মাদকের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তিনমাসে তিনজন খুন
- আপডেট সময় : ১২:৫২:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০২২ ৪৭ বার পড়া হয়েছে
চারঘাটে মাদকের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তিনমাসে তিনজন খুন
এম এম মামুন, রাজশাহী ব্যুরো:
চারঘাটে মাদকের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তিনমাসে তিনজন খুন। রাজশাহীর চারঘাটে মাদক কারবারিদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। খুনগুলো হচ্ছে প্রকাশ্যে দিনের বেলায়। গত তিন মাসে মাদকসংশ্লিষ্ট ঘটনায় তিনজন খুন হয়েছেন। ফলে খুন ও মারামারির ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
খুনের ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন আসামিদের আটক করলেও মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব নৃশংস ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। গত তিন মাসে মাদকসংশ্লিষ্ট ঘটনায় তিনজন খুন হয়েছেন।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার মধ্যে সীমান্তবর্তী চারঘাট উপজেলায় মাদকের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। চুরি-মারামারিসহ সব প্রকার সংঘাতের পেছনের উৎস হচ্ছে মাদক। চারঘাট থানা থেকে অপেক্ষাকৃত দূরের ইউনিয়ন শলুয়া ও ইউসুফপুরে মাদক কারবারিরা এক প্রকার নিরাপদে তাদের কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করেন। নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও মাদকের টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে প্রায়ই প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। কিন্তু এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের থানায় অভিযোগ না করায় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। দ্বন্দ্ব যখন সহিংসতায় রূপ নিয়ে খুনের মতো ঘটনা ঘটে, তখনই প্রশাসন সক্রিয় হয়।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের তাঁতারপুর গ্রামে মাদক কারবারি দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে খুন হন শাহবাজ আলী নামের এক ব্যক্তি। ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহাবুর আলী ও কামাল আলী নামের দুজন মাদক কারবারির সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেল থেকে জামিন পেয়েই কামাল বাহিনী মঙ্গলবার সকাল থেকে সাহাবুর বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁতারপুর আক্কাসের মোড়ে জনসমক্ষে সাহাবুরের ভাই কাজলের ওপর হামলা করে হেলমেট পরিহিত প্রায় ২০ জন। তখন সেই মোড়ে চায়ের দোকানে বসে থাকা শাহাবাজ আলী ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাঁকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে গত ২০ ডিসেম্বর উপজেলার ঝিকরা এলাকায় মাদক ব্যবসার আধিপত্যকে কেন্দ্র করে মাদক কারবারি মাইনুল ইসলাম সিলনকে কুপিয়ে হত্যা করেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী জুয়েল রানা গ্রুপের সদস্যরা। ওই ঘটনায় পুলিশ জুয়েল রানা গ্রুপের পাঁচজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
তাঁতারপুরে গত ৩১ জানুয়ারি মাদকাসক্ত ছেলে মুরাদ আলী পিটিয়ে হত্যা করেন তাঁর বাবা সাদেক আলীকে। মাদক সেবনের প্রতিবাদ করায় এবং সংসারের খরচ চাওয়ায় এ হত্যার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় মুরাদ আলীকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
মাদক নিয়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। উপজেলা মাদক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, মাদক কারবারি এসব বাহিনীর কাছে আমরা অসহায়। তাদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষের শান্তিতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন তারা। এতে সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের মতো বড় ঘটনা না ঘটলে স্থানীয় প্রশাসন এগুলো বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না।থ
মাদকসংশ্লিষ্ট হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চারঘাট মডেল থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি। সবগুলো ঘটনা শুধু মাদকসংশ্লিষ্ট এমনটা না। সব খুনের ঘটনাতেই আসামি আটক করা হয়েছে। শাহবাজ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।