ঢাকা ০৬:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কাদিরাবাদ সেনানিবাসে রিক্রুট ব্যাচ-২০২৪ এর সেনাবাহিনী প্রধান কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত নাটোরে মারধরের ৭দিন পর যুবলীগ কর্মীর মৃত্যু বড়াইগ্রামে শিশু ধর্ষণ মামলায় সাড়ে ৬ বছর পর বৃদ্ধের যাবজ্জীবন, ৭ জন খালাস! মহাদেবপুরে হাতুড় ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত সিংড়ায় বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট, ৩ বছর পর অভিযোগ, এফআইআর হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ আদালতের রাণীশংকৈলে ঠিকাদারদের মানববন্ধন পীরগঞ্জে সাবেক এমপি জাহিদের নামে অপপ্রচারের অভিযোগ রাজশাহীতে সাবেক কমিশনার-ডিআইজিসহ ২২১ জনের নামে মামলা শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ৪১০০ কৃষক পেলো বিনামূল্যে বীজ ও সার রাজশাহীতে হত্যার বিচারসহ ৮ দফা দাবিতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

“গুগল ম্যাপেও” পাওয়া যায় এক টাকার মোড়ের নাম

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ নভেম্বর ২০২১ ২৯৩ বার পড়া হয়েছে
চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধিঃ
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এক কাপ চায়ের সর্বনিম্ন মূল্য ৫ টাকা। আর মসলা যুক্ত একটি পানও বিক্রি হয় নিম্নে অন্তত ৫ টাকায়। কিন্তু এর ব্যতিক্রম শুধু নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের এক টাকার মোড়ে। সেখানে রজব বেপারী লালনের দোকানে আদা ও চিনি যুক্ত এক কাপ চা ও মসলা যুক্ত একটি পান পাওয়া যায় ১ টাকায়।
মাত্র এক টাকায় চা-পান বিক্রি করে নিজ এলাকা নওপাড়াসহ ইতিমধ্যে তিনি পুরোদেশেই আলোচিত হয়েছেন। কৌতুহল থেকেই তাঁর এই চা-পান খেতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষরা আসে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে বিকেলে ভিড়জমায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মানুষরা। প্রতিদিন তিনি প্রায় ১২’শ কাপ চা ও এক হাজারের অধিক পান বিক্রি করেন।
স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯১ সালে লালন এই মোড়ে চা-পান বিক্রি শুরু করেন। তখন তিনি ৫০ পয়সায় ১ টি চা ও সমপরিমান মূল্যে ১টি পান বিক্রি করতেন। সে সময় ওই মোড়ের নাম ছিল নওপাড়া মোড়। পরবর্তিতে তিনি ১৯৯৪ সালে চা ও পানের দাম বৃদ্ধি করে ১টাকা করেন। এখন পর্যন্ত ১টাকায় চা ও সমপরিমান টাকায় পান বিক্রি করছেন তিনি। লালনের এই এক টাকায় চা ও পান বিক্রি করার সুবাদে ওই মোড়ের নাম কখন যে একটাকার মোড় হয়ে গেছে তা এলাকার মানুষরা বুঝেই উঠতে পারেননি। এখন সারাদেশের সচেতন মানুষরা বাগাতিপাড়ার এই এক টাকার মোড় সম্পর্কে অবগত। এমনকি “গুগল ম্যাপেও” পাওয়া যায় এই এক টাকার মোড়ের নাম।
শুধু মাত্র টাকা রোজগার করাই আমার মূল উদ্দেশ্য নয়। আমি মানুষের সেবায় ১টাকা করে চা ও পান বিক্রি করছি। আমার ৩০ বছরের ব্যবসায় প্রথম দুই বছর ৫০ পয়সা করে চা-পান বিক্রি করি। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ১ টাকায় বিক্রি করে আসছি। এথেকে আমি মানুষের যে ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি তাতে বেঁচে থাকা পর্যন্ত মূল্য আর বাড়ানোর ইচ্ছা নাই। লাভ-ক্ষতি কোনদিন হিসাব করে দেখিনি। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৫ বিঘা জমি আর এই ব্যাবসা দিয়ে দুই সন্তানের পরিবার খেয়ে-পরে চলে যায়, এমনটাই বলেন, চা বিক্রেতা রজব ব্যাপারী লালন।
রজব আরও বলেন, এই চা ও পান খেতে বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলা থেকেই মানুষ এসেছে। এমনকি সুইজারল্যান্ডের পর্যটকরাও তাঁর এই চা ও পান খেয়ে গেছেন। প্রায় ৯ কিলোমিটার দুর থেকে আসা ফজলুর রহমান বলেন, তারা আজকে (৬ নভেম্বর) ৪টি মোটরসাইকেলে ৮জন এই চা ও পান খেতে এসেছেন। প্রতি মাসে এভাবেই দল বেঁধে অন্তত ৪ থেকে ৫ দিন আসেন তারা। অন্য দোকানে যে চা ও পান ৫ টাকায় কিনে খেতে হয় ঠিক একই মানের চা এখানে ১ টাকায় খাওয়া যায়। ১০ কিলোমিটার দূর থেকে উপজেলার জামনগর থেকে আসা সজিব হাসান বলেন, তাঁরা শুধু একটাকার মোড়ের নামই শুনেছেন কিন্তু আসা হয়নি কোনোদিন। তাই চার্যার অটো নিয়ে পাঁচজন এসেছেন। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন দয়ারামপুর থেকে আসা রাকিব হাসান বলেন, তিনি আজ প্রথম এসেছেন। কিন্তু তাঁর সাথে আসা দুই বন্ধু এর আগেও অনেকবার এসেছেন। তারা বাইসাইকেল নিয়ে এসেছেন।
শুক্রবার ও শনিবার বিকেলে ১ টাকার মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষ সেই চা ও পান খাচ্ছেন। তাই এই প্রতিবেদক নিজেও একটি চা পান করে দেখেন। তাতে যা মনে হয়েছে অন্য দোকানের ৫ টাকার চায়ের থেকে এই চা কোন অংশেই কম নয়। ঠিক তেমনি পানও কয়েকটি মসলার সমন্ময়ে তৈরি করা হচ্ছে। বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গকুল এবং নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, দীর্ঘদিন থেকে নিয়মিত ভাবে এতো কম দামে চা ও পান বিক্রি করাতে সারা দেশে বাগাতিপাড়া নামটি পরিচিতি লাভ করেছে। সেজন্য উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার প্রতি শুভকামনা রইল। আগামীতে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রয়োজন হলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

“গুগল ম্যাপেও” পাওয়া যায় এক টাকার মোড়ের নাম

আপডেট সময় : ০৮:৫৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ নভেম্বর ২০২১

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধিঃ
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এক কাপ চায়ের সর্বনিম্ন মূল্য ৫ টাকা। আর মসলা যুক্ত একটি পানও বিক্রি হয় নিম্নে অন্তত ৫ টাকায়। কিন্তু এর ব্যতিক্রম শুধু নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের এক টাকার মোড়ে। সেখানে রজব বেপারী লালনের দোকানে আদা ও চিনি যুক্ত এক কাপ চা ও মসলা যুক্ত একটি পান পাওয়া যায় ১ টাকায়।
মাত্র এক টাকায় চা-পান বিক্রি করে নিজ এলাকা নওপাড়াসহ ইতিমধ্যে তিনি পুরোদেশেই আলোচিত হয়েছেন। কৌতুহল থেকেই তাঁর এই চা-পান খেতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষরা আসে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে বিকেলে ভিড়জমায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মানুষরা। প্রতিদিন তিনি প্রায় ১২’শ কাপ চা ও এক হাজারের অধিক পান বিক্রি করেন।
স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯১ সালে লালন এই মোড়ে চা-পান বিক্রি শুরু করেন। তখন তিনি ৫০ পয়সায় ১ টি চা ও সমপরিমান মূল্যে ১টি পান বিক্রি করতেন। সে সময় ওই মোড়ের নাম ছিল নওপাড়া মোড়। পরবর্তিতে তিনি ১৯৯৪ সালে চা ও পানের দাম বৃদ্ধি করে ১টাকা করেন। এখন পর্যন্ত ১টাকায় চা ও সমপরিমান টাকায় পান বিক্রি করছেন তিনি। লালনের এই এক টাকায় চা ও পান বিক্রি করার সুবাদে ওই মোড়ের নাম কখন যে একটাকার মোড় হয়ে গেছে তা এলাকার মানুষরা বুঝেই উঠতে পারেননি। এখন সারাদেশের সচেতন মানুষরা বাগাতিপাড়ার এই এক টাকার মোড় সম্পর্কে অবগত। এমনকি “গুগল ম্যাপেও” পাওয়া যায় এই এক টাকার মোড়ের নাম।
শুধু মাত্র টাকা রোজগার করাই আমার মূল উদ্দেশ্য নয়। আমি মানুষের সেবায় ১টাকা করে চা ও পান বিক্রি করছি। আমার ৩০ বছরের ব্যবসায় প্রথম দুই বছর ৫০ পয়সা করে চা-পান বিক্রি করি। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ১ টাকায় বিক্রি করে আসছি। এথেকে আমি মানুষের যে ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি তাতে বেঁচে থাকা পর্যন্ত মূল্য আর বাড়ানোর ইচ্ছা নাই। লাভ-ক্ষতি কোনদিন হিসাব করে দেখিনি। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৫ বিঘা জমি আর এই ব্যাবসা দিয়ে দুই সন্তানের পরিবার খেয়ে-পরে চলে যায়, এমনটাই বলেন, চা বিক্রেতা রজব ব্যাপারী লালন।
রজব আরও বলেন, এই চা ও পান খেতে বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলা থেকেই মানুষ এসেছে। এমনকি সুইজারল্যান্ডের পর্যটকরাও তাঁর এই চা ও পান খেয়ে গেছেন। প্রায় ৯ কিলোমিটার দুর থেকে আসা ফজলুর রহমান বলেন, তারা আজকে (৬ নভেম্বর) ৪টি মোটরসাইকেলে ৮জন এই চা ও পান খেতে এসেছেন। প্রতি মাসে এভাবেই দল বেঁধে অন্তত ৪ থেকে ৫ দিন আসেন তারা। অন্য দোকানে যে চা ও পান ৫ টাকায় কিনে খেতে হয় ঠিক একই মানের চা এখানে ১ টাকায় খাওয়া যায়। ১০ কিলোমিটার দূর থেকে উপজেলার জামনগর থেকে আসা সজিব হাসান বলেন, তাঁরা শুধু একটাকার মোড়ের নামই শুনেছেন কিন্তু আসা হয়নি কোনোদিন। তাই চার্যার অটো নিয়ে পাঁচজন এসেছেন। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন দয়ারামপুর থেকে আসা রাকিব হাসান বলেন, তিনি আজ প্রথম এসেছেন। কিন্তু তাঁর সাথে আসা দুই বন্ধু এর আগেও অনেকবার এসেছেন। তারা বাইসাইকেল নিয়ে এসেছেন।
শুক্রবার ও শনিবার বিকেলে ১ টাকার মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষ সেই চা ও পান খাচ্ছেন। তাই এই প্রতিবেদক নিজেও একটি চা পান করে দেখেন। তাতে যা মনে হয়েছে অন্য দোকানের ৫ টাকার চায়ের থেকে এই চা কোন অংশেই কম নয়। ঠিক তেমনি পানও কয়েকটি মসলার সমন্ময়ে তৈরি করা হচ্ছে। বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গকুল এবং নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, দীর্ঘদিন থেকে নিয়মিত ভাবে এতো কম দামে চা ও পান বিক্রি করাতে সারা দেশে বাগাতিপাড়া নামটি পরিচিতি লাভ করেছে। সেজন্য উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার প্রতি শুভকামনা রইল। আগামীতে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রয়োজন হলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।