ঢাকা ০৮:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
নাটোরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ জেলা শাখার সমাবেশ মান্দায় পরকীয়ার জেরে বিজিবি সদস্যকে আটক করে গণপিটুনি পঞ্চগড় উত্তরবঙ্গের অন্যতম সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা- টি ট্যুরিজম চেয়ারম্যান পঞ্চগড়ে বিএডিসির নিকট আলুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চাষীদের মানববন্ধন রাজশাহীতে ট্রেনের ধাক্কায় ৭৮ বছরের বৃদ্ধার মৃত্যু শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে সমলয় পদ্ধতিতে বোর ধান কর্তনের উদ্বোধন রাজশাহীতে ওসিকে বরখাস্তসহ ৩ দফা দাবিতে আইনজীবীদের মানববন্ধন আটোয়ারী উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন, সভাপতি জাহেদ, সম্পাদক দুলাল পঞ্চগড়ে মরিচের বাম্পার ফলন, লাল রঙে ভরে উঠেছে গ্রামের সুবজ বনানী, দামে না পেয়ে হতাশ কৃষক আস-সুন্নাহ’র উদ্যোগে বন্যা পরবর্তী পুর্নবাসনে ১৬০ ঘর প্রদান

খাল খননে তিন গুন ফসলের সম্ভবনা দেখছেন কৃষকের

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:২৫:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ১৫৫ বার পড়া হয়েছে
চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

খাল খননে তিন গুন ফসলের সম্ভবনা দেখছেন কৃষকের

নাজমুল হোসেন, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
খাল খননে তিন গুন ফসলের সম্ভবনা দেখছেন কৃষকেরা। ঠাকুরগাঁওয়ে একটি খাল খননে বাম্পার ফলনের আশা করছেন হাজারও কৃষক। অতীতে ধান রোপণের পর বানের পানিতে নষ্ট হয়ে যেত।

বছরের বেশির ভাগ সময় জলাবদ্ধতা থাকত। এত দিন এক ফসলের বেশি করতে না পারলেও এখন তিন ফসল চাষ করে তিনগুন লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ঠাকুরগাঁওয়ের গোরকই বিলে প্রায় পনের কিলোমিটার খাল খনন হওয়ায় অর্থনৈতিক দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।

জেলার রানীসংকৈল উপজেলার ধর্মগড়, নেকমরদ ও নন্দুয়ার ইউনিয়নের  কয়েক হাজার কৃষকের ১৫০০  একর জমি চাষ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।  আমন ধানের পর চাষিরা এই জমি সারা বছর ফেলে রাখতে বাধ্য হতেন। বর্ষার পানি যেতে না পারায় জমি জলাবদ্ধ হয়ে থাকত। এতে চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতেন না। কোন কোন বছর বানের পানি বেশি থাকলে আমন ধানও তারা ঠিক মত ঘরে আনতে পারত না। এই অবস্থা নিরসনের জন্য কৃষক সহিদুল যোগাযোগ করেন উপজেলা কৃষি অফিসে।

চাষিরা প্রস্তাব দেন পুরাতন লোলতই খালটি পুনঃ খননের। তাদের এই প্রস্থাবে সারা দিয়ে এগিয়ে আসেন উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জয় দেবনাথ। এর পরে তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ( বিএডিসি) তে যোগাযোগ করেন। এতে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় এনে প্রায় ১৫ কিলোমিটার খালটি খনন করেন।

সরেজমিনে এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এই সময় পানি জমে থাকত সে সব জায়গায় এখন হাল চাষ চলছে। চাইলেই ধান বা সরিষা ও ভুট্টার ফসল করছে। খালটি খনন করায় পানি জমে থাকছে না। অপরদিকে  মাটি শুকিয়ে যাওয়ায় যে কোন বাহন দিয়ে বিল থেকে ধান কেটে সহজেই কৃষকরা বাড়িতে কিংবা গোলায় নিয়ে আসতে পারছে।

এই খালটির স্বপ্ন দ্রষ্টা চাষি রসিদুল বণিক বার্তাকে বলেন, এই খালটি খনন করায় বিলের মাটি সোনায় রুপান্তর হয়েছে। আগে যেখানে আমরা বছরে একবার ধান চাষ করতে পারতাম সেখানে এখন তিনবার চাষাবাদ করতে পারছি। এক ফসল চাষ করে একর প্রতি দাম পাইতাম পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার টাকা। এখন তিনটি ফসল চাষ করে প্রায় দের লাখ টাকা পাচ্ছি। আগে ধান কেটে মাথায় করে প্রায় অর্ধ মাইল হেটে যেতে লাগত। এখন ট্রলি দিয়ে বহন করা যাচ্ছে। এতে চাষিদের মুজুরি কম লাগছে। এ ছাড়া আগে ঠেলা হাল দিয়ে চাষ করতে হত এখন চাইলেই ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করছে।

খালের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা চাষী রহিম বলেন, এ সব জমিতে সরিষা আবাদ করা যাবে কোন দিনও ভাবিনি। এবার চাষ করেছি। আশা করছি ভাল ফলন পাব।

বিএডিসি সূত্রে জান যায়, বৃহত্তর বগুরা দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন  প্রকল্প এর আওতায় খালটি খনন করা হয়। প্রায় ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ কিলোমিটার খালটি খনন করায় হয়।

খালটি খনন করার সময় নানা মুখি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে খালটির বেশির ভাগ জায়গা ব্যক্তি মালিকানার উপর হওয়ায় কিছু চাষি তাদের জমি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এই বিষয়টি সমাধান করার জন্য এগিয়ে আসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেব নাথ। তিনি চাষিদের এই খালের উপকারীতার কথা তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে সব চাষী জমি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সঞ্জয় দেবনাথ বণিক বার্তাকে বলেন, প্রথমে কয়েকজন চাষি আমার কাছে এই খাল খননে প্রস্তাব দেন। সরেজমিনে গিয়ে বুঝতে পারি খালটির গুরুত্ব। এর পরেই আমার উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করি। এক পর্যায়ে এই প্রকল্প দিয়ে খালটি খনন করা হয়।

খালটির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা চাষিরা জানান, আগে এই জায়গায় পানি জমে থকত। এই ভাবে হেটে আসা প্রায় অসম্ভব ছিল। এখানে এক হাটু কাদা থাকত। যার  ফলে চাষ করা ও ফসল ফলানো অসম্ভব ছিল। এখন এই মাঠে যা কোন যানবাহ প্রবেশ করছে। চাইলেই চাষিরা ট্রাক্টর দিয়ে হাল চাষ করত। আগে যেখানে বছরে এক বারের বেশি ধান করা যেত না এখন সেখানে বছরে দুই বার ধান ও সাথে সরিষা চাষ করছে। এতে মূল্যে হিসেবে চাষিরা তিনগুন আয় করতে পারছে।

কয়েকজন জমি দাতার সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা আগে ভেবেছিলাম আমাদের জমি নষ্ট হবে। কিন্তু এখন আমরা সহ সকল কৃষক লাভবান হচ্ছে। এতে একটু ক্ষতি হলেও আমরা সবাই খুশি।

তবে কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন চাষিরা। তারা জানিয়েছেন, খালটি যে ভাবে খনন করা হয়েছে এটি বেশি দিন থাওকবে না। বর্ষায় এটা ডুবে যায়। যার ফলে দুই পারের মাটি খালে পরে যাচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থকলে কয়েক বছরের মধ্যে খলটি বিলিন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, এই সমস্যা সবাধানে কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সমবায় ভিত্তিতে নিজেদেরই রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

খাল খননে তিন গুন ফসলের সম্ভবনা দেখছেন কৃষকের

আপডেট সময় : ০৪:২৫:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

খাল খননে তিন গুন ফসলের সম্ভবনা দেখছেন কৃষকের

নাজমুল হোসেন, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
খাল খননে তিন গুন ফসলের সম্ভবনা দেখছেন কৃষকেরা। ঠাকুরগাঁওয়ে একটি খাল খননে বাম্পার ফলনের আশা করছেন হাজারও কৃষক। অতীতে ধান রোপণের পর বানের পানিতে নষ্ট হয়ে যেত।

বছরের বেশির ভাগ সময় জলাবদ্ধতা থাকত। এত দিন এক ফসলের বেশি করতে না পারলেও এখন তিন ফসল চাষ করে তিনগুন লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ঠাকুরগাঁওয়ের গোরকই বিলে প্রায় পনের কিলোমিটার খাল খনন হওয়ায় অর্থনৈতিক দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।

জেলার রানীসংকৈল উপজেলার ধর্মগড়, নেকমরদ ও নন্দুয়ার ইউনিয়নের  কয়েক হাজার কৃষকের ১৫০০  একর জমি চাষ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।  আমন ধানের পর চাষিরা এই জমি সারা বছর ফেলে রাখতে বাধ্য হতেন। বর্ষার পানি যেতে না পারায় জমি জলাবদ্ধ হয়ে থাকত। এতে চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতেন না। কোন কোন বছর বানের পানি বেশি থাকলে আমন ধানও তারা ঠিক মত ঘরে আনতে পারত না। এই অবস্থা নিরসনের জন্য কৃষক সহিদুল যোগাযোগ করেন উপজেলা কৃষি অফিসে।

চাষিরা প্রস্তাব দেন পুরাতন লোলতই খালটি পুনঃ খননের। তাদের এই প্রস্থাবে সারা দিয়ে এগিয়ে আসেন উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জয় দেবনাথ। এর পরে তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ( বিএডিসি) তে যোগাযোগ করেন। এতে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় এনে প্রায় ১৫ কিলোমিটার খালটি খনন করেন।

সরেজমিনে এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এই সময় পানি জমে থাকত সে সব জায়গায় এখন হাল চাষ চলছে। চাইলেই ধান বা সরিষা ও ভুট্টার ফসল করছে। খালটি খনন করায় পানি জমে থাকছে না। অপরদিকে  মাটি শুকিয়ে যাওয়ায় যে কোন বাহন দিয়ে বিল থেকে ধান কেটে সহজেই কৃষকরা বাড়িতে কিংবা গোলায় নিয়ে আসতে পারছে।

এই খালটির স্বপ্ন দ্রষ্টা চাষি রসিদুল বণিক বার্তাকে বলেন, এই খালটি খনন করায় বিলের মাটি সোনায় রুপান্তর হয়েছে। আগে যেখানে আমরা বছরে একবার ধান চাষ করতে পারতাম সেখানে এখন তিনবার চাষাবাদ করতে পারছি। এক ফসল চাষ করে একর প্রতি দাম পাইতাম পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার টাকা। এখন তিনটি ফসল চাষ করে প্রায় দের লাখ টাকা পাচ্ছি। আগে ধান কেটে মাথায় করে প্রায় অর্ধ মাইল হেটে যেতে লাগত। এখন ট্রলি দিয়ে বহন করা যাচ্ছে। এতে চাষিদের মুজুরি কম লাগছে। এ ছাড়া আগে ঠেলা হাল দিয়ে চাষ করতে হত এখন চাইলেই ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করছে।

খালের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা চাষী রহিম বলেন, এ সব জমিতে সরিষা আবাদ করা যাবে কোন দিনও ভাবিনি। এবার চাষ করেছি। আশা করছি ভাল ফলন পাব।

বিএডিসি সূত্রে জান যায়, বৃহত্তর বগুরা দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন  প্রকল্প এর আওতায় খালটি খনন করা হয়। প্রায় ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ কিলোমিটার খালটি খনন করায় হয়।

খালটি খনন করার সময় নানা মুখি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে খালটির বেশির ভাগ জায়গা ব্যক্তি মালিকানার উপর হওয়ায় কিছু চাষি তাদের জমি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এই বিষয়টি সমাধান করার জন্য এগিয়ে আসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেব নাথ। তিনি চাষিদের এই খালের উপকারীতার কথা তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে সব চাষী জমি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সঞ্জয় দেবনাথ বণিক বার্তাকে বলেন, প্রথমে কয়েকজন চাষি আমার কাছে এই খাল খননে প্রস্তাব দেন। সরেজমিনে গিয়ে বুঝতে পারি খালটির গুরুত্ব। এর পরেই আমার উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করি। এক পর্যায়ে এই প্রকল্প দিয়ে খালটি খনন করা হয়।

খালটির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা চাষিরা জানান, আগে এই জায়গায় পানি জমে থকত। এই ভাবে হেটে আসা প্রায় অসম্ভব ছিল। এখানে এক হাটু কাদা থাকত। যার  ফলে চাষ করা ও ফসল ফলানো অসম্ভব ছিল। এখন এই মাঠে যা কোন যানবাহ প্রবেশ করছে। চাইলেই চাষিরা ট্রাক্টর দিয়ে হাল চাষ করত। আগে যেখানে বছরে এক বারের বেশি ধান করা যেত না এখন সেখানে বছরে দুই বার ধান ও সাথে সরিষা চাষ করছে। এতে মূল্যে হিসেবে চাষিরা তিনগুন আয় করতে পারছে।

কয়েকজন জমি দাতার সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা আগে ভেবেছিলাম আমাদের জমি নষ্ট হবে। কিন্তু এখন আমরা সহ সকল কৃষক লাভবান হচ্ছে। এতে একটু ক্ষতি হলেও আমরা সবাই খুশি।

তবে কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন চাষিরা। তারা জানিয়েছেন, খালটি যে ভাবে খনন করা হয়েছে এটি বেশি দিন থাওকবে না। বর্ষায় এটা ডুবে যায়। যার ফলে দুই পারের মাটি খালে পরে যাচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থকলে কয়েক বছরের মধ্যে খলটি বিলিন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, এই সমস্যা সবাধানে কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সমবায় ভিত্তিতে নিজেদেরই রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে।