ঢাকা ১২:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাজশাহীতে পরিত্যক্ত বাসায় কলেজ ছাত্রকে আটকে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা রাজশাহীতে চোর চক্রের নারীসহ চার সদস্য গ্রেপ্তার রাজশাহীর সাংবাদিক জামি রহমানের মৃত্যু শেরপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে ৭ জনের কারাদন্ড, সরঞ্জামাদি ধ্বংস রাজশাহী বিভাগে আমন সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্য মতবিনিময় সভা রাজশাহীতে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন বাগমারায় বাইগাঁছা উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের মানববন্ধন বাগাতিপাড়ায় দীর্ঘ কর্মময় জীবন শেষে অবসরে গেলেন খোরশেদ পুলিশকে রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ সংস্থায় উন্নীত করতে কাজ করা হচ্ছে- আইজিপি নাটোরে ১৮ বাড়িতে অগ্নি সংযোগ মামলায় দুলুসহ ৯৪ আসামী খালাস

কৃষকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বিএমডিএ’র অপারেটররা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৫:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ ২০২২ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কৃষকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বিএমডিএ’র অপারেটররা

এম এম মামুন, রাজশাহী ব্যুরো:
কৃষকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বিএমডিএ’র অপারেটররা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দুই কৃষক কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত অপারেটর জমিতে চাহিদামতো পানি না দেওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন দুই কৃষক। অভিনাথ মারান্ডি (৩৬) ও তার চাচাত ভাই রবি মারান্ডির (২৭) এমন আত্মত্যাগের ঘটনা দেশের ইতিহাসেও প্রথম বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।

রাজশাহীর কৃষকদের দাবি, বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ অপারেটররা প্রতটি উপজেলায় কৃষকদের জিম্মি করে বোরো ধান চাষ করার জন্য বিঘা প্রতি দেড়-তিন হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে চলেছেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুই হাজার টাকার ওপরে আদায় করা হচ্ছে। আর কৃষকদেরকে সেই টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। না হলেই জমিতে পানি দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন অপারেটরা। ফলে জমির ধান বাঁচাতে ধার-দেনা করে হলেও টাকা তুলে দিচ্ছেন অপারেটরদের হাতে। আবার গভীর নলকূপ চালানোর জন্য প্রিপেইড মিটারে কার্ড কিনে জমিতে পানি সেচ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে কৃষকদের। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কার্ডের মাধ্যমেও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে কৃষকদের। ফলে ধানচাষ করতে গিয়ে বড় ধরনের বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর কৃষকরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এক বিঘা জমিতে ধানচাষ করতে গিয়ে বিঘা প্রতি ২৫শথ থেকে তিন হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে কৃষকদের। যা দুই-তিন বছর আগেও ছিল বড়ো জোর দেড় হাজার টাকা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষকরা চুক্তি অনুযায়ী বিঘাপ্রতি টাকা দিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো গভীর নলকথপের অপারেটররা কৃষকদেরকে দিয়েই প্রিপেইড মিটারের কার্ড কিনে আনতে বাধ্য করছেন। সেই কার্ড দিয়ে ঘন্টাপ্রতি ২৮০-৩০০ টাকা পর্যন্ত কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে করে এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে গিয়ে বিঘা প্রতি কৃষকদের অন্তত ৩ হাজার টাকার খরচ হচ্ছে। তবে যাদের নিচু জমি, পানির প্রয়োজন কম হয়, তাদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২৫শ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে।

গোদাগাড়ীর ঈশ্বরীপুর এলাকার কৃষক আমির হাঁসদা বলেন, এক বিঘা জমিতে ধানের জমিতে পানি সেঁচ করতে এবার তিন হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে দাদা। এই টাকা আমরা অনেক কৃষক দিতে পাচ্ছি না এখুন। ধানের জমিতে সার-বিষও দিতে হচ্ছে। এখুন এতো টাকা পাব কুণ্ঠে। যারা টাকা দিতে পাচ্ছে না, তার জমিতেই পানি দেয় না।

তিনি আরও বলেন, টাকা দিলেও আমাদের মুতোন গরিব মানুষের জমিতে সহজে পানি দেয় না। ওপারেটর (গভীর নলকুপের অপারেটর) তার নিজের লোকদের আগে পানি দেয়। অপারেটর সাখাওয়াত তার ইচ্ছেমতো পানি দেন জমিতে। আর জমিতে পানি না পায়ে আত্মহত্যার করেন অভিনাথ ও রবি। এটা দ্যাশের প্রথম ঘটনা দাদা। এই ঘটনার আমরা বিচার চাই। তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অপারেটর সাখাওয়াত পলাতক থাকায় এবং তাঁর ফোন বন্ধ থাকায় তাঁকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে তানোরের কৃষ্ণপুর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকার সব ডিউবওয়েলেই (গভীর নলকথপের) অপারেটরই দুই থেকে তিন হাজার টাকা নিচ্ছে। টাকা কয়েক কিস্তিতে আদায় করা হচ্ছে। ধান ওঠার আগেই টাকা দিতে গিয়ে আমরা কৃষকরা বিপাকে পড়ছি।

একই এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ধানের জমিতে পানি সেচ দিতে অনেকেই ধার-দেনায় জড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ সুদের ওপরে টাকা নিয়েও অপারেটরের হাতে তুলে দিচ্ছে জমির ধান বাঁচাতে। কৃষ্ণপুর এলাকার অপরেটর আব্দুল গনি দাবি করেন, বিঘাপ্রতি ১৮শ থেকে দুই হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এই টাকার অল্পকিছু লাভ থাকে। এর বাইরে বাকিটা চলে যায় বিদ্যুৎ খরচে। তাই কারও নিকট অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে না।

রাজশাহীর দুর্গাপুরের নওপাড়া এলাকার কৃষক মাজেদুর রহমান বলেন, সবগুলো ডিপেই (গভীর নলকূপ) বিঘায় দুই হাজার থেকে ২২শ টাকা করে নিচ্ছে। যা গত বারও আছিল সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকা। এতে ধান চাষ করতে গিয়ে এবার বাড়তি খরচও হচ্ছে।

এদিকে বিএমডিএ’র গভীল নলকূপের অপারেটররা ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করছেন এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিব। প্রয়োজনে অপারেটরের নিয়োগ বাতিল করে নতুন অপারেটর দেওয়া হবে। তবে কৃষকদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করতে দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, এখন খরা মৌসুমের কারণে হয়তো হয়তো চাহিদামতো কোনো কোনো জায়গায় পানি দেওয়া যাচ্ছে না। তবে তাতে ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়েছে বলেও আমাদের কাছে খবর আসেনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

কৃষকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বিএমডিএ’র অপারেটররা

আপডেট সময় : ০৩:৫৫:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ ২০২২

কৃষকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বিএমডিএ’র অপারেটররা

এম এম মামুন, রাজশাহী ব্যুরো:
কৃষকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বিএমডিএ’র অপারেটররা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দুই কৃষক কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত অপারেটর জমিতে চাহিদামতো পানি না দেওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন দুই কৃষক। অভিনাথ মারান্ডি (৩৬) ও তার চাচাত ভাই রবি মারান্ডির (২৭) এমন আত্মত্যাগের ঘটনা দেশের ইতিহাসেও প্রথম বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।

রাজশাহীর কৃষকদের দাবি, বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ অপারেটররা প্রতটি উপজেলায় কৃষকদের জিম্মি করে বোরো ধান চাষ করার জন্য বিঘা প্রতি দেড়-তিন হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে চলেছেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুই হাজার টাকার ওপরে আদায় করা হচ্ছে। আর কৃষকদেরকে সেই টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। না হলেই জমিতে পানি দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন অপারেটরা। ফলে জমির ধান বাঁচাতে ধার-দেনা করে হলেও টাকা তুলে দিচ্ছেন অপারেটরদের হাতে। আবার গভীর নলকূপ চালানোর জন্য প্রিপেইড মিটারে কার্ড কিনে জমিতে পানি সেচ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে কৃষকদের। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কার্ডের মাধ্যমেও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে কৃষকদের। ফলে ধানচাষ করতে গিয়ে বড় ধরনের বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর কৃষকরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এক বিঘা জমিতে ধানচাষ করতে গিয়ে বিঘা প্রতি ২৫শথ থেকে তিন হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে কৃষকদের। যা দুই-তিন বছর আগেও ছিল বড়ো জোর দেড় হাজার টাকা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষকরা চুক্তি অনুযায়ী বিঘাপ্রতি টাকা দিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো গভীর নলকথপের অপারেটররা কৃষকদেরকে দিয়েই প্রিপেইড মিটারের কার্ড কিনে আনতে বাধ্য করছেন। সেই কার্ড দিয়ে ঘন্টাপ্রতি ২৮০-৩০০ টাকা পর্যন্ত কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে করে এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে গিয়ে বিঘা প্রতি কৃষকদের অন্তত ৩ হাজার টাকার খরচ হচ্ছে। তবে যাদের নিচু জমি, পানির প্রয়োজন কম হয়, তাদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২৫শ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে।

গোদাগাড়ীর ঈশ্বরীপুর এলাকার কৃষক আমির হাঁসদা বলেন, এক বিঘা জমিতে ধানের জমিতে পানি সেঁচ করতে এবার তিন হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে দাদা। এই টাকা আমরা অনেক কৃষক দিতে পাচ্ছি না এখুন। ধানের জমিতে সার-বিষও দিতে হচ্ছে। এখুন এতো টাকা পাব কুণ্ঠে। যারা টাকা দিতে পাচ্ছে না, তার জমিতেই পানি দেয় না।

তিনি আরও বলেন, টাকা দিলেও আমাদের মুতোন গরিব মানুষের জমিতে সহজে পানি দেয় না। ওপারেটর (গভীর নলকুপের অপারেটর) তার নিজের লোকদের আগে পানি দেয়। অপারেটর সাখাওয়াত তার ইচ্ছেমতো পানি দেন জমিতে। আর জমিতে পানি না পায়ে আত্মহত্যার করেন অভিনাথ ও রবি। এটা দ্যাশের প্রথম ঘটনা দাদা। এই ঘটনার আমরা বিচার চাই। তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অপারেটর সাখাওয়াত পলাতক থাকায় এবং তাঁর ফোন বন্ধ থাকায় তাঁকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে তানোরের কৃষ্ণপুর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকার সব ডিউবওয়েলেই (গভীর নলকথপের) অপারেটরই দুই থেকে তিন হাজার টাকা নিচ্ছে। টাকা কয়েক কিস্তিতে আদায় করা হচ্ছে। ধান ওঠার আগেই টাকা দিতে গিয়ে আমরা কৃষকরা বিপাকে পড়ছি।

একই এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ধানের জমিতে পানি সেচ দিতে অনেকেই ধার-দেনায় জড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ সুদের ওপরে টাকা নিয়েও অপারেটরের হাতে তুলে দিচ্ছে জমির ধান বাঁচাতে। কৃষ্ণপুর এলাকার অপরেটর আব্দুল গনি দাবি করেন, বিঘাপ্রতি ১৮শ থেকে দুই হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এই টাকার অল্পকিছু লাভ থাকে। এর বাইরে বাকিটা চলে যায় বিদ্যুৎ খরচে। তাই কারও নিকট অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে না।

রাজশাহীর দুর্গাপুরের নওপাড়া এলাকার কৃষক মাজেদুর রহমান বলেন, সবগুলো ডিপেই (গভীর নলকূপ) বিঘায় দুই হাজার থেকে ২২শ টাকা করে নিচ্ছে। যা গত বারও আছিল সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকা। এতে ধান চাষ করতে গিয়ে এবার বাড়তি খরচও হচ্ছে।

এদিকে বিএমডিএ’র গভীল নলকূপের অপারেটররা ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করছেন এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিব। প্রয়োজনে অপারেটরের নিয়োগ বাতিল করে নতুন অপারেটর দেওয়া হবে। তবে কৃষকদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করতে দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, এখন খরা মৌসুমের কারণে হয়তো হয়তো চাহিদামতো কোনো কোনো জায়গায় পানি দেওয়া যাচ্ছে না। তবে তাতে ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়েছে বলেও আমাদের কাছে খবর আসেনি।