ঢাকা ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একজন মানবিক জেলা প্রশাসক সাবেত আলী

উমর ফারুক, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : ০২:৩০:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৭০ বার পড়া হয়েছে

Collected

চ্যানেল এ নিউজ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

একজন মানবিক জেলা প্রশাসক সাবেত আলী

জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই জেলা প্রশাসনকে স্বচ্ছ, দুর্ণীতি মুক্ত এবং জনবান্ধব জনপ্রশাসন হিসেবে গড়তে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তার আগমনের পর পরই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মতবিনিময়কালে দেখা গেছে নির্ভীক, নিরহংকার এবং সদালাপী এই মানুষটির মনে রয়েছে নানান স্বপ্ন ও উদ্ভাবনী ভাবনা যা তিনি বাস্তবায়ন করার জন্য বদ্ধপরিকর। সরকারের সকল এজেন্ডা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সমাজের আপামর মানুষের সার্বিক কল্যাণে নিরন্তর ব্যস্ত থাকেন এই জেলা প্রশাসক। ইতোমধ্যে তিনি ও তার টিম সারা জেলায় ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। জেলার সেবা গ্রহীতাগণ জেলা প্রশাসনের কোন সেবা পেতে বিলম্বিত হলে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারেন জেলা প্রশাসকের মোবাইল নম্বরে।

এতক্ষণ ধরে বলছিলাম পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক জনাব মো: সাবেত আলীর কথা। কিছু মানুষ নিজেদের কর্মগুনে জনমনে স্থান করে নিয়েছেন। তেমনি একজন পঞ্চগড় জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো: সাবেত আলী। প্রশাসনের কাজে তিনি যেমন দক্ষ তেমনি একজন মানবিক ব্যক্তিও। তিনি খুব কম সময় ধরে পঞ্চগড়ে আসলেও জেলার মানুষের জন্য অনেক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক সাবেত আলী পঞ্চগড় জেলায় আসার পর তাঁর মানবিক মূল্যবোধ এবং কর্মদক্ষতায় পঞ্চগড়বাসী মুগ্ধ। বিশেষ করে তার দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা পঞ্চগড় জেলার পর্যটন খাতকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । তাঁর নতুন নতুন চিন্তা ও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনকে দাড় করিয়েছে এক নতুন মাত্রায়।

জানা যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মকালীন সময়েও তিনি তার জনবান্ধব এবং উদ্ভাবনী কাজের কারণে দুইবার জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইউএনও, বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ইউএনও এবং জাতীয় পর্যায়েও দেশের শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কাইযেন (KAIZEN) রোল মডেল এওয়ার্ডে ভুসিত হয়েছিলেন। তিনি আইন এবং নিয়মনীতি মেনে চলতেই অভ্যস্ত। কোনো অন্যায়ের সাথে তাঁর আপোস নেই। কারণ তিনি আসার পর এ জেলার অবৈধ বালুমহল, অবৈধ ভূমি দখল, মাদকসহ অনেক অবৈধ ব্যবসা-ই এখন বন্ধের পথে।

একবুক প্রত্যাশা নিয়ে শতসহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং অসংখ্য মানুষের অঙ্গহানীর মধ্যদিয়ে সংগঠিত হয় জুলাই বিপ্লব ‘২০২৪’। একটি জনসেবাধর্মী, কল্যাণকামী এবং জনবান্ধব জনপ্রশাসন তৈরির লক্ষ্যে সেপ্টেম্বর মাসে দেশব্যাপী নতুনভাবে জেলা প্রশাসক পদায়নের কাজ শুরু করে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ হতে জেলা প্রশাসক, পঞ্চগড় তার প্রতিটি কর্মকান্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সাজাতে শুরু করে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাস্তবায়ন করতে থাকে একের পর এক উন্নয়ন কার্যক্রম। গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে, চিন্তার সংস্কার করে সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে জেলা প্রশাসন, পঞ্চগড়ের কার্যক্রম।

জনবান্ধব প্রশাসন গড়ার অভিপ্রায়ে জেলা প্রশাসন পঞ্চগড়ের কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নীচে তুলে ধরা হলঃ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন: জেলা প্রশাসক জনাব সাবেত আলী ১২ই সেপ্টেম্বর’২০২৪ পঞ্চগড় জেলায় যোগদানের ২ সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের (ছাত্র, ছাত্রী, সাংবাদিক, আইনজীবী, সামাজিক সংগঠক, জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ) উপস্থিতিতে পঞ্চগড় জেলার উন্নয়নে সমস্যা ও সম্ভবনা চিহ্নিতকরণের লক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করেন। উক্ত কর্মশালার মাধ্যমে পঞ্চগড় জেলার প্রধান প্রধান সমস্যা এবং সম্ভাবনাগুলো প্রথমেই চিহ্নিত করা হয়। অত:পর এসব সমস্যার পিছনের কারণ এবং সম্ভাব্য সমাধানের ধারণা বের করা হয়। এরপর উন্নয়নের জন্য চিহ্নিত কার্যক্রমসমূহকে নিয়ে ০৩ বছর মেয়াদী অগ্রাধিকার পরিকল্পনা (অক্টোবর’ ২০২৪- সেপ্টেম্বর’ ২৫) প্রণয়ন করা হয়। জেলার সচেতন মহলের মতে এভাবে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে জেলার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রনয়ন এ জেলায় এটিই প্রথম, এতে করে সরকারি কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ, সচেতনতা যেমন বাড়বে তেমনি দায়িত্ববোধও বেড়ে যাবে এতে কোনই সন্দেহ নাই।

কর্পোরেট ভূমি সেবা চালুকরণ:
সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে বিভিন্ন রুমে বিভিন্ন কর্মচারী বসে সেবা প্রদান করে থাকেন। কোন সেবা কোন রুমে বা কার কাছে পাওয়া যাবে তা অনেক সেবা গ্রহীতা বুঝতে পারেন না। সহকারী কমিশনার (ভূমি) তার রুমে বসে বুঝতে পারেন না অন্যান্য রুমে অবস্থানকারী তার সহকর্মীগণ মানুষকে যথাযথভাবে সেবা প্রদান করছেন কিনা। এসব সমস্যা দূর করতে জেলাব্যাপী ভূমি অফিস গুলোকে কর্পোরেট সেবা পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ রুমগুলোর মধ্যবর্তী Barrier বা দেয়াল ভেঙ্গে দিয়ে সকল কর্মচারীকে এক কক্ষে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কর্মপরিবেশ উন্নত করা হয়েছে এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সাথে কর্পোরেট সেবা প্রদানকারী কক্ষের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও সেবা গ্রহীতাদের বসার জন্য এবং সুপেয় পানি পানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অফিসের বাইরে একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে সেবা গ্রহীতাদেরকে তাদের আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে নায্যমূল্যের বাজার চালু:
ব্যবসায়ীদের বাজার সিন্ডিকেশনের কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের উদ্ধগতি রোধ করার জন্য জেলা প্রশাসন শুরু করে নায্যমূল্যের বাজার। এই বাজারে কৃষকের ক্ষেত থেকে সরাসরি সবজি কিনে কমমূল্যে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতে বাধ্য হয় । এই কাজে জেলার সম্মিলিতি স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের স্বেচ্ছাসেবকদের সম্পৃক্ত করা হয়। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন আয়োজিত নায্যমূল্যের বাজার সহজেই পরিচালনা করা সম্ভব হয় এবং জনগনের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশে জেলা প্রশাসকের বিশেষ উদ্যোগ:
প্রতি বছর পঞ্চগড়ে অসংখ্য পর্যটক আসেন পঞ্চগড়ের সমতলের চা বাগান এবং তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজংঘার অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য। পঞ্চগড় জেলাকে টুরিস্টদের নিকট আরো বেশি জনপ্রিয় করে তোলার জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড় ওয়াচ টওয়ার নির্মাণ, পঞ্চগড় গেইট নির্মাণ, অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে শহর পরিচ্ছন্নকরণ, টুরিস্টদের জন্য মোবাইল এ্যাপস তৈরি, পঞ্চগড় জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে ডুকুমেন্টারি তৈরী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিহাস ঐতিহ্য কর্ণার স্থাপন, রেলস্টেশনের সামনে ফুলের বাগান এবং ফোয়ারা নির্মাণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুলের বাগান সৃজন ইত্যাদি।

গ্রামীণ খেলাধুলার প্রতি নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে জেলা প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ:
আমাদের নতুন প্রজন্ম দিন দিন মোবাইল গেমস, মাদক, জুয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে যখন ঝুকে পড়ছে ঠিক তখনই জেলা প্রশাসন, পঞ্চগড় নতুন প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলা গুলো জনপ্রিয় করার জন্য জেলাব্যাপী গ্রামীণ খেলাধুলা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এসব খেলার মধ্যে আছে ঘোরদৌড়, গোল্লাছুট, বউচি, কানামাঝি, হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্দা, ডাংগুলি, হাড়ি ভাঙ্গা, পিচ্ছিল কলা গাছে উঠা ইত্যাদি। ইতোমধ্যে দুইটি ঘোরদৌড় এবং তিনটি উপজেলায় হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে এই গ্রামীণ খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল উপজেলায় এ ধরনের গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন চলছে।

মাদকের ভয়াভব বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ:
পঞ্চগড় জেলাটি সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে মাদকদ্রব্য এ জেলায় এসে থাকে এবং তরুণ প্রজন্ম মারাত্মকভাবে মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। জুলাই-আগস্ট পরবর্তী জেলা প্রশাসন মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রোধে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। দুটি পন্থায় তা রোধ করার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। প্রথমত: মাদকের বিরুদ্ধে জনমত ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং দ্বিতীয়ত: মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদক সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থান গ্রহণ করা। সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন পাড়ায়; মহল্লায়, ইউনিয়নে এবং গ্রামবাসীসহ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভা সমাবেশ, মতবিনিময়, কর্মশালা, মানববন্ধন, ম্যারাথন দৌড়, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, পদযাত্রা, সাইকেল রেস ইত্যাদির মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা এবং জনমত তৈরি করা হয়। এছাড়াও পাড়ায় পাড়ায়, বিভিন্ন ইউনিয়নে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক বিরোধী কমিটি গঠন করা হয়। অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে জেল জরিমানার মাধ্যমে কঠোরতর অবস্থান গ্রহণ করা হয়। ফলে জনগণের ভাষ্যমতে বর্তমানে মাদকের বিস্তার পূর্বের তুলনায় ৮০-৯০% কমে গেছে।

যানজট নিরসনে এবং শহরের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ:
পঞ্চগড় শহরটি অত্যন্ত ছোট একটি শহর। এখানে প্রচুর পরিমানে রিক্সা, ভ্যান, ইজিবাইক, অটোরিক্সার কারণে যানজট লেগে থাকে। ট্রাফিক পুলিশের অপর্যাপ্ততার কারণে এবং পৌরসভার পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে যানজট নিরসন এবং শহর পরিচ্ছন্ন রাখা যখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল তখন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের সাথে নিয়ে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ট্রাফিকিং এবং পরিচ্ছন্নতার উপর প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয় । অত:পর ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উত্তরণ’ তৈরি করা হয়। এই ‘উত্তরণ’ নামীয় সামাজিক সংগঠনের ভলেনটিয়ারসগণ বর্তমানে শহরের যানজট নিরসনে এবং শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ:
জেলা প্রশাসকের স্বেচ্ছাধীন তহবিল হতে জেলার দুস্থ, অসহায়, মানুষকে সাহায্য করার সুযোগ থাকে। এই তহবিল থেকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ হতে পরিকল্পিতভাবে হত দরিদ্র মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, পঞ্চগড় হতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু মানুষকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী (ভ্যানগাড়ি, পিঠার দোকান, মুদির দোকান ইত্যাদি) কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে।

ডিবেটিং এন্ড ল্যাংগুয়েজ ক্লাব:
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ জ্ঞান চর্চায় আগ্রহী করে তোলার জন্য এবং গ্লোবালাইজেশনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ভিন দেশী ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এই প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব অনুধাবন করে জেলা প্রশাসন, পঞ্চগড়ের পক্ষ হতে জেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তায় ১০.০০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পঞ্চগড়ে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক মানের একটি ডিবেটিং এন্ড ল্যাংগুয়েজ ক্লাব । এই ক্লাবটি শহরের ঐতিহ্যবাহী নজরুল পাঠাগারের একটি ফ্লোরে স্থাপন করা হচ্ছে। আশা করা যায় আগামী দিনে এই ক্লাব তরুন সমাজের মেধা বিকাশে ও জ্ঞান চর্চায় এবং বিদেশী ভাষা শিখার জন্য একটি অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

পঞ্চগড় রেল স্টেশনে বগি দাড়ানোর স্থান চিহ্নিতকরণ:
বাংলাদেশ রেলওয়ের স্টেশনগুলোতে যেখানে দূর পাল্লার আন্ত:জেলাগামী ট্রেনগুলো থামে সেখানে বগি দাড়ানোর জায়গা গুলো চিহ্নিত না থাকায় যাত্রীগণ স্টেশনে পৌছে প্রায়শ:ই বিড়ম্বনার শিকার হন। যাত্রীগণ প্ল্যাটফরমে পৌঁছেই তার কাক্ষিত বগীর অবস্থান জানার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন এবং অনেক সময় ট্রেন মিস করে ফেলেন। যাত্রীদের এই ভোগান্তি দূর করার জন্য জেলা প্রশাসন, পঞ্চগড়ের পক্ষ হতে ট্রেনের বগি দাড়ানোর নির্দিষ্ট স্থানগুলো বগির নম্বর ক, খ…… ইত্যাদি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে । এর ফলে এখন কোন যাত্রী স্টেশনে পৌঁছে কাউকে জিজ্ঞেস না করেই তার কাক্ষিত বগির জায়গায় পৌঁছে যেতে পারেন।

রেলস্টেশনের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দৃষ্টি নন্দন ফোয়ারা এবং ফুলের বাগান সৃজনঃ
পঞ্চগড় জেলায় পর্যটন শিল্পের বিকাশে জেলা প্রশাসকের গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পঞ্চগড় রেলস্টেশনের সামনে একটি দৃষ্টি নন্দন ফোয়ারা এবং ফুলের বাগান সৃজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ জেলায় আগত পর্যটকরা ষ্টেশন থেকে বের হয়েই যেন একটি সুন্দর ভিউ পান এবং এ এ জেলা সম্পর্কে একটি ভালো ধারনা তৈরী হয় সেই উদ্দেশ্যই এই বাগান এবং ফোয়ারা তৈরী করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ ফোয়ারাটির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন এখানে অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটছে।

এছাড়াও জেলা প্রশাসকের সাথে কোন বিশেষ প্রয়োজনে দেখা করতে চেয়ে সুযোগ পাওয়া যায়নি এমন ঘটনা বিরল। তার অফিস কক্ষে গেলে দেখা যায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তার সাথে দেখা করতে আসছেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। কেউ এসেছেন জমি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে, কেউ এসেছেন চিকিৎসার জন্য সাহায্যের প্রত্যাশায়, কেউ এসেছেন ফোরম ফিলাপের টাকার অভাবে, কেউ এসেছেন মসজিদ-মন্দিরের সংস্কারের জন্য আর্থিক সহায়তার আশায়, কেউবা এসেছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবার আশায়। অসীম ধৈর্য নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় সাক্ষাৎ প্রত্যাশী এসব মানুষের কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে তাদের সমস্যা বা দুর্ভোগের কার্যকর সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন প্রতিনিয়ত। শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শিল্প-সাহিত্য এবং শিক্ষা ও সুকুমারবৃত্তির চর্চায় পঞ্চগড়কে দেশের একটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জেলায় পরিণত করতে চান তিনি।

জনাব মো; সাবেত আলী ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। এ পদে যোগদানের পূর্বে তিনি উপসচিব হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুতত্ত্ব বিভাগ হতে স্নাতকোত্তর, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় হতে গভার্ণেন্স এন্ড ডেভেলাপমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং জাপানের মেইজি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাবলিক পলিসির উপরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ সালে ফরিদপুর জেলায় সহকারি কমিশনার এবং ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

একজন মানবিক জেলা প্রশাসক সাবেত আলী

আপডেট সময় : ০২:৩০:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

একজন মানবিক জেলা প্রশাসক সাবেত আলী

জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই জেলা প্রশাসনকে স্বচ্ছ, দুর্ণীতি মুক্ত এবং জনবান্ধব জনপ্রশাসন হিসেবে গড়তে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তার আগমনের পর পরই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মতবিনিময়কালে দেখা গেছে নির্ভীক, নিরহংকার এবং সদালাপী এই মানুষটির মনে রয়েছে নানান স্বপ্ন ও উদ্ভাবনী ভাবনা যা তিনি বাস্তবায়ন করার জন্য বদ্ধপরিকর। সরকারের সকল এজেন্ডা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সমাজের আপামর মানুষের সার্বিক কল্যাণে নিরন্তর ব্যস্ত থাকেন এই জেলা প্রশাসক। ইতোমধ্যে তিনি ও তার টিম সারা জেলায় ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। জেলার সেবা গ্রহীতাগণ জেলা প্রশাসনের কোন সেবা পেতে বিলম্বিত হলে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারেন জেলা প্রশাসকের মোবাইল নম্বরে।

এতক্ষণ ধরে বলছিলাম পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক জনাব মো: সাবেত আলীর কথা। কিছু মানুষ নিজেদের কর্মগুনে জনমনে স্থান করে নিয়েছেন। তেমনি একজন পঞ্চগড় জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো: সাবেত আলী। প্রশাসনের কাজে তিনি যেমন দক্ষ তেমনি একজন মানবিক ব্যক্তিও। তিনি খুব কম সময় ধরে পঞ্চগড়ে আসলেও জেলার মানুষের জন্য অনেক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক সাবেত আলী পঞ্চগড় জেলায় আসার পর তাঁর মানবিক মূল্যবোধ এবং কর্মদক্ষতায় পঞ্চগড়বাসী মুগ্ধ। বিশেষ করে তার দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা পঞ্চগড় জেলার পর্যটন খাতকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । তাঁর নতুন নতুন চিন্তা ও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনকে দাড় করিয়েছে এক নতুন মাত্রায়।

জানা যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মকালীন সময়েও তিনি তার জনবান্ধব এবং উদ্ভাবনী কাজের কারণে দুইবার জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইউএনও, বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ইউএনও এবং জাতীয় পর্যায়েও দেশের শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কাইযেন (KAIZEN) রোল মডেল এওয়ার্ডে ভুসিত হয়েছিলেন। তিনি আইন এবং নিয়মনীতি মেনে চলতেই অভ্যস্ত। কোনো অন্যায়ের সাথে তাঁর আপোস নেই। কারণ তিনি আসার পর এ জেলার অবৈধ বালুমহল, অবৈধ ভূমি দখল, মাদকসহ অনেক অবৈধ ব্যবসা-ই এখন বন্ধের পথে।

একবুক প্রত্যাশা নিয়ে শতসহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং অসংখ্য মানুষের অঙ্গহানীর মধ্যদিয়ে সংগঠিত হয় জুলাই বিপ্লব ‘২০২৪’। একটি জনসেবাধর্মী, কল্যাণকামী এবং জনবান্ধব জনপ্রশাসন তৈরির লক্ষ্যে সেপ্টেম্বর মাসে দেশব্যাপী নতুনভাবে জেলা প্রশাসক পদায়নের কাজ শুরু করে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ হতে জেলা প্রশাসক, পঞ্চগড় তার প্রতিটি কর্মকান্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সাজাতে শুরু করে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাস্তবায়ন করতে থাকে একের পর এক উন্নয়ন কার্যক্রম। গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে, চিন্তার সংস্কার করে সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে জেলা প্রশাসন, পঞ্চগড়ের কার্যক্রম।

জনবান্ধব প্রশাসন গড়ার অভিপ্রায়ে জেলা প্রশাসন পঞ্চগড়ের কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নীচে তুলে ধরা হলঃ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন: জেলা প্রশাসক জনাব সাবেত আলী ১২ই সেপ্টেম্বর’২০২৪ পঞ্চগড় জেলায় যোগদানের ২ সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের (ছাত্র, ছাত্রী, সাংবাদিক, আইনজীবী, সামাজিক সংগঠক, জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ) উপস্থিতিতে পঞ্চগড় জেলার উন্নয়নে সমস্যা ও সম্ভবনা চিহ্নিতকরণের লক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করেন। উক্ত কর্মশালার মাধ্যমে পঞ্চগড় জেলার প্রধান প্রধান সমস্যা এবং সম্ভাবনাগুলো প্রথমেই চিহ্নিত করা হয়। অত:পর এসব সমস্যার পিছনের কারণ এবং সম্ভাব্য সমাধানের ধারণা বের করা হয়। এরপর উন্নয়নের জন্য চিহ্নিত কার্যক্রমসমূহকে নিয়ে ০৩ বছর মেয়াদী অগ্রাধিকার পরিকল্পনা (অক্টোবর’ ২০২৪- সেপ্টেম্বর’ ২৫) প্রণয়ন করা হয়। জেলার সচেতন মহলের মতে এভাবে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে জেলার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রনয়ন এ জেলায় এটিই প্রথম, এতে করে সরকারি কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ, সচেতনতা যেমন বাড়বে তেমনি দায়িত্ববোধও বেড়ে যাবে এতে কোনই সন্দেহ নাই।

কর্পোরেট ভূমি সেবা চালুকরণ:
সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে বিভিন্ন রুমে বিভিন্ন কর্মচারী বসে সেবা প্রদান করে থাকেন। কোন সেবা কোন রুমে বা কার কাছে পাওয়া যাবে তা অনেক সেবা গ্রহীতা বুঝতে পারেন না। সহকারী কমিশনার (ভূমি) তার রুমে বসে বুঝতে পারেন না অন্যান্য রুমে অবস্থানকারী তার সহকর্মীগণ মানুষকে যথাযথভাবে সেবা প্রদান করছেন কিনা। এসব সমস্যা দূর করতে জেলাব্যাপী ভূমি অফিস গুলোকে কর্পোরেট সেবা পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ রুমগুলোর মধ্যবর্তী Barrier বা দেয়াল ভেঙ্গে দিয়ে সকল কর্মচারীকে এক কক্ষে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কর্মপরিবেশ উন্নত করা হয়েছে এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সাথে কর্পোরেট সেবা প্রদানকারী কক্ষের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও সেবা গ্রহীতাদের বসার জন্য এবং সুপেয় পানি পানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অফিসের বাইরে একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে সেবা গ্রহীতাদেরকে তাদের আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে নায্যমূল্যের বাজার চালু:
ব্যবসায়ীদের বাজার সিন্ডিকেশনের কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের উদ্ধগতি রোধ করার জন্য জেলা প্রশাসন শুরু করে নায্যমূল্যের বাজার। এই বাজারে কৃষকের ক্ষেত থেকে সরাসরি সবজি কিনে কমমূল্যে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতে বাধ্য হয় । এই কাজে জেলার সম্মিলিতি স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের স্বেচ্ছাসেবকদের সম্পৃক্ত করা হয়। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন আয়োজিত নায্যমূল্যের বাজার সহজেই পরিচালনা করা সম্ভব হয় এবং জনগনের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশে জেলা প্রশাসকের বিশেষ উদ্যোগ:
প্রতি বছর পঞ্চগড়ে অসংখ্য পর্যটক আসেন পঞ্চগড়ের সমতলের চা বাগান এবং তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজংঘার অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য। পঞ্চগড় জেলাকে টুরিস্টদের নিকট আরো বেশি জনপ্রিয় করে তোলার জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড় ওয়াচ টওয়ার নির্মাণ, পঞ্চগড় গেইট নির্মাণ, অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে শহর পরিচ্ছন্নকরণ, টুরিস্টদের জন্য মোবাইল এ্যাপস তৈরি, পঞ্চগড় জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে ডুকুমেন্টারি তৈরী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিহাস ঐতিহ্য কর্ণার স্থাপন, রেলস্টেশনের সামনে ফুলের বাগান এবং ফোয়ারা নির্মাণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুলের বাগান সৃজন ইত্যাদি।

গ্রামীণ খেলাধুলার প্রতি নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে জেলা প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ:
আমাদের নতুন প্রজন্ম দিন দিন মোবাইল গেমস, মাদক, জুয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে যখন ঝুকে পড়ছে ঠিক তখনই জেলা প্রশাসন, পঞ্চগড় নতুন প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলা গুলো জনপ্রিয় করার জন্য জেলাব্যাপী গ্রামীণ খেলাধুলা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এসব খেলার মধ্যে আছে ঘোরদৌড়, গোল্লাছুট, বউচি, কানামাঝি, হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্দা, ডাংগুলি, হাড়ি ভাঙ্গা, পিচ্ছিল কলা গাছে উঠা ইত্যাদি। ইতোমধ্যে দুইটি ঘোরদৌড় এবং তিনটি উপজেলায় হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে এই গ্রামীণ খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল উপজেলায় এ ধরনের গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন চলছে।

মাদকের ভয়াভব বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ:
পঞ্চগড় জেলাটি সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে মাদকদ্রব্য এ জেলায় এসে থাকে এবং তরুণ প্রজন্ম মারাত্মকভাবে মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। জুলাই-আগস্ট পরবর্তী জেলা প্রশাসন মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রোধে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। দুটি পন্থায় তা রোধ করার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। প্রথমত: মাদকের বিরুদ্ধে জনমত ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং দ্বিতীয়ত: মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদক সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থান গ্রহণ করা। সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন পাড়ায়; মহল্লায়, ইউনিয়নে এবং গ্রামবাসীসহ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভা সমাবেশ, মতবিনিময়, কর্মশালা, মানববন্ধন, ম্যারাথন দৌড়, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, পদযাত্রা, সাইকেল রেস ইত্যাদির মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা এবং জনমত তৈরি করা হয়। এছাড়াও পাড়ায় পাড়ায়, বিভিন্ন ইউনিয়নে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক বিরোধী কমিটি গঠন করা হয়। অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে জেল জরিমানার মাধ্যমে কঠোরতর অবস্থান গ্রহণ করা হয়। ফলে জনগণের ভাষ্যমতে বর্তমানে মাদকের বিস্তার পূর্বের তুলনায় ৮০-৯০% কমে গেছে।

যানজট নিরসনে এবং শহরের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ:
পঞ্চগড় শহরটি অত্যন্ত ছোট একটি শহর। এখানে প্রচুর পরিমানে রিক্সা, ভ্যান, ইজিবাইক, অটোরিক্সার কারণে যানজট লেগে থাকে। ট্রাফিক পুলিশের অপর্যাপ্ততার কারণে এবং পৌরসভার পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে যানজট নিরসন এবং শহর পরিচ্ছন্ন রাখা যখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল তখন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের সাথে নিয়ে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ট্রাফিকিং এবং পরিচ্ছন্নতার উপর প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয় । অত:পর ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উত্তরণ’ তৈরি করা হয়। এই ‘উত্তরণ’ নামীয় সামাজিক সংগঠনের ভলেনটিয়ারসগণ বর্তমানে শহরের যানজট নিরসনে এবং শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ:
জেলা প্রশাসকের স্বেচ্ছাধীন তহবিল হতে জেলার দুস্থ, অসহায়, মানুষকে সাহায্য করার সুযোগ থাকে। এই তহবিল থেকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ হতে পরিকল্পিতভাবে হত দরিদ্র মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, পঞ্চগড় হতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু মানুষকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী (ভ্যানগাড়ি, পিঠার দোকান, মুদির দোকান ইত্যাদি) কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে।

ডিবেটিং এন্ড ল্যাংগুয়েজ ক্লাব:
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ জ্ঞান চর্চায় আগ্রহী করে তোলার জন্য এবং গ্লোবালাইজেশনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ভিন দেশী ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এই প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব অনুধাবন করে জেলা প্রশাসন, পঞ্চগড়ের পক্ষ হতে জেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তায় ১০.০০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পঞ্চগড়ে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক মানের একটি ডিবেটিং এন্ড ল্যাংগুয়েজ ক্লাব । এই ক্লাবটি শহরের ঐতিহ্যবাহী নজরুল পাঠাগারের একটি ফ্লোরে স্থাপন করা হচ্ছে। আশা করা যায় আগামী দিনে এই ক্লাব তরুন সমাজের মেধা বিকাশে ও জ্ঞান চর্চায় এবং বিদেশী ভাষা শিখার জন্য একটি অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

পঞ্চগড় রেল স্টেশনে বগি দাড়ানোর স্থান চিহ্নিতকরণ:
বাংলাদেশ রেলওয়ের স্টেশনগুলোতে যেখানে দূর পাল্লার আন্ত:জেলাগামী ট্রেনগুলো থামে সেখানে বগি দাড়ানোর জায়গা গুলো চিহ্নিত না থাকায় যাত্রীগণ স্টেশনে পৌছে প্রায়শ:ই বিড়ম্বনার শিকার হন। যাত্রীগণ প্ল্যাটফরমে পৌঁছেই তার কাক্ষিত বগীর অবস্থান জানার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন এবং অনেক সময় ট্রেন মিস করে ফেলেন। যাত্রীদের এই ভোগান্তি দূর করার জন্য জেলা প্রশাসন, পঞ্চগড়ের পক্ষ হতে ট্রেনের বগি দাড়ানোর নির্দিষ্ট স্থানগুলো বগির নম্বর ক, খ…… ইত্যাদি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে । এর ফলে এখন কোন যাত্রী স্টেশনে পৌঁছে কাউকে জিজ্ঞেস না করেই তার কাক্ষিত বগির জায়গায় পৌঁছে যেতে পারেন।

রেলস্টেশনের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দৃষ্টি নন্দন ফোয়ারা এবং ফুলের বাগান সৃজনঃ
পঞ্চগড় জেলায় পর্যটন শিল্পের বিকাশে জেলা প্রশাসকের গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পঞ্চগড় রেলস্টেশনের সামনে একটি দৃষ্টি নন্দন ফোয়ারা এবং ফুলের বাগান সৃজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ জেলায় আগত পর্যটকরা ষ্টেশন থেকে বের হয়েই যেন একটি সুন্দর ভিউ পান এবং এ এ জেলা সম্পর্কে একটি ভালো ধারনা তৈরী হয় সেই উদ্দেশ্যই এই বাগান এবং ফোয়ারা তৈরী করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ ফোয়ারাটির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন এখানে অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটছে।

এছাড়াও জেলা প্রশাসকের সাথে কোন বিশেষ প্রয়োজনে দেখা করতে চেয়ে সুযোগ পাওয়া যায়নি এমন ঘটনা বিরল। তার অফিস কক্ষে গেলে দেখা যায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তার সাথে দেখা করতে আসছেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। কেউ এসেছেন জমি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে, কেউ এসেছেন চিকিৎসার জন্য সাহায্যের প্রত্যাশায়, কেউ এসেছেন ফোরম ফিলাপের টাকার অভাবে, কেউ এসেছেন মসজিদ-মন্দিরের সংস্কারের জন্য আর্থিক সহায়তার আশায়, কেউবা এসেছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবার আশায়। অসীম ধৈর্য নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় সাক্ষাৎ প্রত্যাশী এসব মানুষের কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে তাদের সমস্যা বা দুর্ভোগের কার্যকর সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন প্রতিনিয়ত। শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শিল্প-সাহিত্য এবং শিক্ষা ও সুকুমারবৃত্তির চর্চায় পঞ্চগড়কে দেশের একটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জেলায় পরিণত করতে চান তিনি।

জনাব মো; সাবেত আলী ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। এ পদে যোগদানের পূর্বে তিনি উপসচিব হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুতত্ত্ব বিভাগ হতে স্নাতকোত্তর, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় হতে গভার্ণেন্স এন্ড ডেভেলাপমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং জাপানের মেইজি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাবলিক পলিসির উপরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ সালে ফরিদপুর জেলায় সহকারি কমিশনার এবং ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন।