অটো চালক জায়দা ইউএনও’র সহযোগিতায় ঋণমুক্ত
- আপডেট সময় : ০২:২৬:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১ ২২৭ বার পড়া হয়েছে
মোঃ সাইদুল ইসলাম, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সেই নারি চালক জায়দা উপজেলা নির্বাহি অফিসারের সহযোগিতায় ঋণমুক্ত হলেন।
গত ৯ অক্টোবর ‘জায়দার জীবন যুদ্ধ’ শিরোনামে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে এলে সহযোগিতার হাত বাড়িযে দেন বাঘা উপজেলা নির্বাহি অফিসার পাপিয়া সুলতানা।
সোমবার জায়দা সহ বাঘা শাখার এনজিওর কর্মকর্তাকে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে এনজিওর কাছ থেকে তার নেওয়া ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা পরিশোধ করে তাকে ঋন মুক্ত করেছেন ইউএনও। জীবন যুদ্ধে বেচে থাকার লড়াইয়ে ৫০ বছর বয়সের একজন নারির সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে নিজস্ব তহবিল থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন বাঘার ইউএনও পাপিয়া সুলতানা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাঘা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ রাশেদ আহমেদ, মৎস্য অফিসার আমিরুল ইসলাম, বিআরডিবি অফিসার এমরান আলীসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগন।
উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর ‘জায়দার জবিন যুদ্ধ’ শিরোনামে দারিদ্র্য, ক্ষুধা আর জীবন যন্ত্রণাই তাকে বাধ্য করেছে সাহসী হতে। বাধ্য করেছে রাস্তায় নামতে। তাই শখের বশে নয়, বরং টিকে থাকার লড়াই করতেই আজ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক। জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত হলেও হাল ছাড়েননি জায়দা। স্বামী পরিত্যক্তা এই নারী এখন চালকের আসনে বসে যাত্রী পরিবহন করছেন। মানুষের কটু কথা, তির্যক চাহনি কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচা আর একমাত্র সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করাই এখন তার জীবনের ধ্যানজ্ঞান। বাড়ি উপজেলার জোতকাদিরপুর গ্রামে। স্বামী শাহাজামাল আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যাওয়ার পর পেশা বদলে এখন তিনি অটোরিকশা (উল্কার) চালক। একদিকে দরিদ্র পরিবারের সন্তান, অন্যদিকে কালো বলে কেউ তাকে বিয়ে করতে চায়নি। এ কারণে ৩০ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। গর্ভের ছেলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই স্বামী তাকে ফেলে যখন চলে যায়। তখন জীবিকার তাগিদে পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতে শুরু করেন। এরপর ছেলে কোলে নিয়েই সীমান্তবর্তী দুর্গম চর এলাকার বাংলাবাজার গ্রাম ছেড়ে চলে যান বাঘার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের জোতকাদিরপুর গ্রামে। এরপর কালে কালে বেলা গড়িয়েছে অনেক। ৫০ বছর বয়সে এসে তার মনে হলো, এভাবে আর নয়। নিজের জমানো টাকা আর এনজিও থেকে কিস্তিতে টাকা তুলে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটো (উলকা) কেনেন। এরপর কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে বসে পড়লেন চালকের আসনে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজ এলাকা জোতকাদিরপুর থেকে নারায়ণপুর হয়ে বাঘা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে প্রতিদিন আয় হয় প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ টাকা। আর্থিক অনটনের মধ্যেও ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিলেন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নিজে লেখাপড়া জানেন না। তার ইচ্ছা ১৫ বছর বয়সের ছেলে জায়দুলকে উচ্চশিক্ষিত করে তোলা।
জায়দা বলেন, কোন কাজই ছোট নয়। লজ্জা, সংকোচ থাকলে কোনো কাজই করা যাবে না। দিন শেষে নিজের পেটের চিন্তা নিজেরই করতে হয়। তাই এ বয়সেও আত্মশক্তির ওপর ভরসা করেই এগিয়ে যেতে চান জায়দা।
ওই এলাকার অনেকেই জানান, জায়দা বেশ ভালোই অটো চালান। একজন নারীকে চালকের আসনে দেখে প্রথমে কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও ধীরে ধীরে বিষয়টি সয়ে গেছে তাদের।
শাহদৌলা সরকারি কলেজের প্রভাষক আবু হানিফ বলেন, গ্রামীণ নারীদের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হলেও সার্বিকভাবে তারা এখনও প্রান্তিক পর্যায়েই রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবার আগে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। যে কোনো সাহসী পেশায় নারীদের এগিয়ে আসতে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নারীরা আপন শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।